পাকিস্তানকে হারিয়ে হরমনপ্রীতের হাসি। ছবি: পিটিআই।
খেলা যা-ই হোক, ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ মানেই উত্তেজনা। দু’দেশের সমর্থকদের কাছেই এটা যেন সম্মানের ম্যাচ। কিন্তু শনিবার এশিয়ান গেমসে ভারত-পাকিস্তানের লড়াই দেখে বোঝাই যাচ্ছিল না এটা প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ হচ্ছে নাকি প্রদর্শনী ম্যাচ। একের পর এক গোল করেই যাচ্ছিল ভারত। শেষ পর্যন্ত গুণে গুণে দশ গোল দিল তারা। ১০-২ গোলে পরাজিত পাকিস্তান। এশিয়ান গেমস তো দূর, এর আগে ভারত-পাকিস্তানের কোনও হকি ম্যাচেই এত গোল হয়নি। শনিবারের ম্যাচ তাই নতুন ইতিহাস তৈরি করল। এই জয়ের পাশাপাশি এশিয়ান গেমস হকিতে সেমিফাইনালে উঠে গেল ভারত।
কিছু দিন আগে ভারতের এশীয় চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলতে এসেছিল পাকিস্তান। সেখানেও এত খারাপ খেলেনি তারা। এ দিন ভারত দাঁড়াতেই দিল না পাকিস্তান। গোটা ম্যাচ জুড়ে আক্রমণের পর আক্রমণ। অধিনায়ক হরমনপ্রীত সিংহ একাই করলেন চার গোল। বাকিরা যে যখন আক্রমণে উঠেছেন, গোল করে এসেছেন। মাঝে কিছুটা সময় পাকিস্তান দু’গোল শোধ করলেও গোটা ম্যাচে একেবারেই দাগ কাটতে পারেনি।
পাকিস্তান যতই প্রতিযোগিতায় ৩৪ গোল দিক, ভারতের বিরুদ্ধে তারা টের পেল আসল লড়াই কাকে বলে। ম্যাচের শুরু থেকেই চেপে ধরেছিলেন হরমনপ্রীত সিংহেরা। একের পর এক আক্রমণ আছড়ে পড়ছিল পাকিস্তানের বক্সে। প্রথম কোয়ার্টারেই ২-০ এগিয়ে যায় ভারত। প্রথম থেকে আক্রমণ করতে থাকে ভারত। বলে নিয়ন্ত্রণ ছিল তাদের স্টিকেই। প্রথম আট মিনিটে বার দুয়েক পাকিস্তান আক্রমণ করলেও বিপদ হয়নি।
নবম মিনিটেই এগিয়ে যায় ভারত। অভিষেক পাস দিয়েছিলেন মনদীপ সিংহকে। ফাঁকা জালে বল জড়ান মনদীপ। পরের মিনিটেই পাকিস্তান পেনাল্টি কর্নার পেলেও কাজে লাগাতে পারেনি। প্রথম কোয়ার্টারের শেষের দিকে নাটক হয়। পাকিস্তানের গোলকিপার ডি বক্সের মধ্যে ফেলে দিয়েছিলেন ভারতেক এক খেলোয়াড়কে। রেফারি পেনাল্টির নির্দেশ দেন। পাকিস্তান আবেদন করলেও লাভ হয়নি। পেনাল্টি স্ট্রোক থেকে গোল করেন হরমনপ্রীত। পরের মিনিটেই হরমনপ্রীতের পাস পেয়েছিলেন নীলকান্ত। তিনি পাস দেন মনদীপকে। ললিত গোলের বাইরে মারেন।
দ্বিতীয় কোয়ার্টারের শুরুতে আবার এগিয়ে যায় ভারত। পেনাল্টি কর্নার থেকে গোল করেন হরমনপ্রীত। এর পর খেলা কিছু ক্ষণের জন্যে নিয়ন্ত্রণে নেয় পাকিস্তান। ডান দিক থেকে আক্রমণ করতে থাকে তারা। কিন্তু ভারতের রক্ষণ ভেদ করতে পারেনি। তার পরে আবার ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ চলে যায় ভারতের কাছে। চতুর্থ গোল করেন গুরজন্ত। বাঁ দিক থেকে পাসে গোল করেন তিনি। তবে তাঁর পায়ে লেগেছে কি না তা জানতে ভিডিয়ো আম্পায়ারের সাহায্য নেওয়া হয়। তিনি গোলের সিদ্ধান্ত নেন।
তৃতীয় কোয়ার্টারের শুরুতে নিজের হ্যাটট্রিক সম্পূর্ণ করেন হরমনপ্রীত। এ বারও পেনাল্টি স্ট্রোক থেকে। পাকিস্তানের ডিফেন্ডার আরবাজ় স্টিক ছাড়াই গোল আটকাতে গিয়েছিলেন। রেফারি পেনাল্টি স্ট্রোকের নির্দেশ। আবার গোল করেন হরমনপ্রীত। কিছু ক্ষণ পরেই পেনাল্টি কর্নায় পায় ভারত। নিজের চতুর্থ গোল করেন হরমনপ্রীত।
পাকিস্তান মাঝে একটি গোল শোধ করে। পেনাল্টি কর্নার থেকে গোল করেন সুফিয়ান। ভারত ব্যবধান বাড়াতে সময় নেয়নি। কাউন্টার অ্যাটাক থেকে দারুণ পাস দেন সুখজিৎ। স্টিকে বল ছুঁইয়ে গোল করেন বরুণ। তৃতীয় কোয়ার্টার শেষ হওয়ার আগে আবার একটি গোল করে পাকিস্তান। কিন্তু আবারও দুটি গোল করে ব্যবধান বাড়ায় ভারত। পাকিস্তানের গোলকিপারের ভুলে লম্বা বল থেকে গোল করেন শামসের সিংহ। ভারতের নবম গোলের ক্ষেত্রেও পাকিস্তানের রক্ষণের ভুল। ভারতের তিন খেলোয়াড় উঠে এসেছিলেন। পাকিস্তানের রক্ষণ কিছু বুঝে ওঠার আগেই গোল ললিত উপাধ্যায়ের। চতুর্থ কোয়ার্টারে পেনাল্টি কর্নার থেকে গোল বরুণ কুমারের।