হোসে মোলিনা। —ফাইল চিত্র।
গত মরসুমে মোহনবাগানের হয়ে লিগ-শিল্ড জিতেছিলেন আন্তোনিয়ো লোপেস হাবাস। তবে আইএসএল কাপ জিততে পারেনি। মোহনবাগান তাঁকে কোচ রাখেনি। নিয়ে এসেছিল হোসে মোলিনাকে। স্পেনীয় কোচ মোলিনা এ বার আইএসএলের লিগ-শিল্ড এবং কাপ দুটোই জিতেছেন। পরের মরসুমেও কি তাঁকে কোচ হিসাবে দেখা যাবে?
সাংবাদিক বৈঠকে প্রশ্নটা করতেই স্পেনীয় কোচের মুখে হাসি। বললেন, “আমার সঙ্গে ক্লাবের এক বছরের চুক্তি হয়েছিল। যদি লিগ-শিল্ড বা কাপ জিততে পারি তা হলে আরও এক বছর চুক্তি বাড়াবে বলেছিল। দুটোই জিতেছি। এ বার ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে কথা বলে দেখি ওরা আমাকে রাখতে চায় কি না। আশা করি রাখবে।” তবে যে ভাবে মজার ছলে মোলিনা কথাগুলি বললেন তাতে বোঝা গেল পরের মরসুমেও তাঁর কোচ থাকা পাকা। ক্লাবের ইতিহাসে একই মরসুমে জোড়া সাফল্য এনে দেওয়া কোচকে সরাবে না তাঁরা।
মোলিনা জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁর সেরা কোচিং এখনও দেখা যায়নি। বলেছেন, “জানি না এটাই আমার কোচিং জীবনের সেরা সময় কি না। তবে আমি এমন একজন কোচ যে প্রতি দিন নিজেকে উন্নত করে। প্রতি দিন আমি কোনও না কোনও ভুল করি এবং সেখান থেকে শিক্ষা নিই। আপাতত আজকের মুহূর্তটা আমার কাছে সেরা। আশা করি কালকের দিনটা আরও ভাল যাবে। কোচ হিসাবে আমার সেরা সময়টা আসা এখনও বাকি। এর থেকেও ভাল মুহূর্ত উপহার দিতে পারি। এর আগে ২০১৬ সালে এখানে আইএসএল কাপ জিতেছিলাম। এ বার লিগ-শিল্ড এবং কাপ দুটোই জিতেছি। প্রচণ্ড খুশি।”
তারকাসমৃদ্ধ দল সামলানো সোজা কাজ নয়। অতীতে অনেক কোচ এই কাজ পারেননি। চাপের মুখে চাকরি খুইয়েছেন বা ইস্তফা দিয়েছেন। মোলিনা সে জায়গায় আলাদা। গত বারের অন্যতম সেরা ফুটবলার দিমিত্রি পেত্রাতোসকে দিনের পর দিন প্রথম একাদশের বাইরে রেখেও দলের মধ্যে কোনও ক্ষোভ তৈরি হয়নি। খেলোয়াড়দের সামলানোর প্রসঙ্গে মোলিনা বলেছেন, “আমি একটা জিনিসে বিশ্বাস করি, সবাই একসঙ্গে খুশি করা সম্ভব নয়। কারণ সবাই খেলতে চায়। সেটা সম্ভব নয়। তবে মাঠে নামলে ওরা যাতে সেরাটা দেয় সেটা দেখা আমার কাজ। আজও দেখলেন, পরের দিকে নেমে দিমি কতটা ভাল খেলল।”
গত বছর ডুরান্ড কাপের ফাইনালে নর্থইস্টের কাছে যুবভারতীতে হেরে গিয়ে মরসুম শুরু হয়েছিল। সেই যুবভারতীতেই এসেছে লিগ-শিল্ড এবং কাপ। গোটা যাত্রাটা কেমন ছিল? মোলিনার উত্তর, “কখনও আপনি হারবেন, কখনও জিতবেন। নর্থইস্টের কাছে ডুরান্ড ফাইনালে হারার পরেই ছেলেদের বলে দিয়েছিলাম নিজেদের উপর বিশ্বাস। আমি সব সময় একটা পদ্ধতিতে বিশ্বাস করি। এই গোটা লিগ, ট্রফি জয় সবই এই পদ্ধতির অন্তর্গত। আপনি সেটায় বিশ্বাস করলে এবং ম্যানেজমেন্ট ও সমর্থকদের পাশে পেলে ফলাফল নিশ্চিত ভাবে পাবেন।”
তাঁর কোচিং জীবনে দেখা সেরা ক্লাব কি মোহনবাগানই? কোনও বিতর্কে না গিয়ে মোলিনার উত্তর, “আমি কখনও কোনও কিছু তুলনা করতে ভালবাসি না। একটা দলের সঙ্গে আর একটা দলের তুলনা কখনওই করা যায় না।”
ম্যাচের পর বেঙ্গালুরু কোচ জেরার্ড জারাগোজ়া অভিযোগ করলেন রেফারিং নিয়ে। ক্ষিপ্ত হয়ে বললেন, “মোহনবাগানের গুণমান আমাদের থেকে ভাল এটা মেনে নিচ্ছি। এত সমর্থকের সামনে খেলাও চাপের। কিন্তু রেফারি যে ভাবে হলুদ কার্ড দেখালেন এবং আমাদের বিরুদ্ধে পেনাল্টি দিলেন সেটা মেনে নেওয়া যায় না। মোহনবাগানের এ রকম সাহায্য দরকার হয় না। এ ভাবে চললে ভারতীয় ফুটবলের উন্নতি কোনও দিন হবে না।”
যদিও মোলিনা এ কথা পাত্তাই দিতে চাননি। বলেছেন, “আপনি না জিতলেই অজুহাত খুঁজবেন। আমি অজুহাত দিতে ভালবাসি না। মরসুমের শুরুতে খারাপ খেললেও আমরা কোনও দিন অজুহাত দিইনি। তবে কোনও না কোনও ম্যাচে রেফারিং নিয়ে আমারও হয়তো কিছু বলার ছিল। আমি বলিনি। যেখানে ছিলাম ওখান থেকে বোঝা সম্ভব ছিল না পেনাল্টি ছিল কি না। এখানে বসে সবার সামনে অজুহাত দেওয়া খুব সহজ কাজ।”