Lionel Messi

মেসিহীন কাতারে বিসর্জনের বিষণ্ণতা

সোমবার সকাল থেকেই যেন মন খারাপ কাতারের। বিসর্জনের আবহ। সকালেই দু’টি চাটার্ড বিমানে বুয়েনোস আইরেসের উদ্দেশে উড়ে গিয়েছেন মেসিরা।

Advertisement
শুভজিৎ মজুমদার
লুসেল শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০২২ ০৭:৩৬
রবিবার ম্যাচের পরে মাঠেই আর্জেন্টিনা অধিনায়ক  বলে যান, ‘‘দেরি হল, কিন্তু এই বিশ্বকাপ এখন আমাদের।”

রবিবার ম্যাচের পরে মাঠেই আর্জেন্টিনা অধিনায়ক  বলে যান, ‘‘দেরি হল, কিন্তু এই বিশ্বকাপ এখন আমাদের।” রয়টার্স।

কাতার নাকি আর্জেন্টিনার কোনও শহরের দৃশ্য? রবিবার রাত প্রায় একটা। লুসেল স্টেডিয়ামের বুলেভার্ডে এসে দাঁড়াল হুড খোলা নীল-সাদা একটি বাস। অনেকেই ভেবেছিলেন আর্জেন্টিনার সমর্থকরা ৩৬ বছর পরে বিশ্বকাপ জয় উদ্‌যাপন করার জন্য বাসের ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু বাসের দিকে চোখ পড়তেই বিস্মিত সকলে। লিয়োনেল মেসি থেকে কোচ লিয়োনেল স্কালোনি— বিশ্বকাপের ট্রফি নিয়ে আর্জেন্টিনার পুরো দলই রয়েছে হুড খোলা বাসের উপরে! বিশ্বকাপ খেলতে এসে মেসিরা থেকেছেন কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে। লুসেল স্টেডিয়াম থেকে গাড়িতে যার দূরত্ব মিনিট দশেকের বেশি নয়। আর্জেন্টিনা শিবিরে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, ফাইনালে ওঠার পরেই ফুটবলাররা টিম ম্যানেজমেন্টকে অনুরোধ করেছিলেন, চ্যাম্পিয়ন হলে হুড খোলা বাসে ট্রফি নিয়ে কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেরার ব্যবস্থা করতে। ২০১৪ বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেও ব্যর্থ হওয়ার যন্ত্রণা ভুলতে না পারা আর্জেন্টিনা ফুটবল ফেডারেশনের কর্তারা ফুটবলারদের কিছু না জানালেও ছাদ খোলা বাসের ব্যবস্থা করে রেখেছিলেন। সতর্ক ছিলেন, এই খবর যেন কোনও অবস্থাতেই সংবাদমাধ্যমের কাছে ফাঁস না হয়ে যায়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেল, শনিবার গভীর রাতেই লুসেল স্টেডিয়ামে আনা হয় বিশেষ এই বাস। কেউ যাতে ঘুণাক্ষরেও টের না পান, তার জন্য পার্কিংয়ের এক কোণায় কালো কাপড় দিয়ে তা ঢেকে রাখা হয়েছিল। স্বেচ্ছাসেবকদেরও যেতে দেওয়া হয়নি তার কাছে। ফাইনাল শেষ হওয়ার প্রায় আড়াই ঘণ্টা পরে ড্রেসিংরুমের সামনে নিয়ে আসা হয় এই বিশেষ বাস। মেসিরা তখন উল্লাসে মত্ত। ড্রেসিংরুমের টেবল ঘিরে ঘুরতে গান গাইছিলেন, নাচছিলেন। সেখানেই কিলিয়ান এমবাপেকে নিয়ে কটাক্ষ করেন গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্তিনেস। আর্জেন্টিনার সংবাদমাধ্যমের দাবি, সতীর্থদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘এমবাপের জন্য এক মিনিট নীরবতা পালন করি সকলে।’’ ম্যাচ শেষ হওয়ার প্রায় ঘণ্টা তিনেক পরে হুড খোলা বাসে চড়ে বিশ্বকাপের ট্রফি নিয়ে যখন বেরোলেন মেসিরা, মনে হচ্ছিল যেন তাঁরা বুয়েনোস আইরেসেই রয়েছেন। গত কয়েক দিন ধরেই কাতার হয়ে উঠেছে মেসি-ময়। আল খোর থেকে মাতের আল কাদেম। শওক ওয়াকিফ থেকে আল রিফা— সর্বত্রই গিজগিজ করছেন আর্জেন্টিনার সমর্থকরাই। শপিংমল থেকে বাকালা (কাতারে রাস্তার ধারে ছোটছোট দোকানকে এই নামে ডাকা নয়) সব জায়গায় হট কেকের মতো এখনও বিক্রি হচ্ছে মেসির নাম লেখা আর্জেন্টিনার নীল-সাদা জার্সিই। রবিবার রাতে ঘুমোয়নি কাতার। সারা রাত ধরেইউৎসব চলেছে।

Advertisement

রবিবার ম্যাচের পরে মাঠেই আর্জেন্টিনা অধিনায়ক বলে যান, ‘‘দেরি হল, কিন্তু এই বিশ্বকাপ এখন আমাদের। এই ট্রফির জন্য আমরা দীর্ঘ সময় অনেক কষ্ট স্বীকার করেছি, অনেক যন্ত্রণা মুখ বন্ধ রেখে সহ্য করেছি। মনে হয়েছিল, ঈশ্বর এ বার আমাকে কাপ উপহার দেবেন।’’ সোমবার সকাল থেকেই যেন মন খারাপ কাতারের। বিসর্জনের আবহ। সকালেই দু’টি চাটার্ড বিমানে বুয়েনোস আইরেসের উদ্দেশে উড়ে গিয়েছেন মেসিরা। আর্জেন্টিনা থেকে খেলা দেখতে আসা সমর্থকরাও প্রায় কেউ নেই। রবিবার রাতে লুসেল স্টেডিয়ামে দাঁড়িয়েই আলেহান্দ্রো বলছিলেন, ‘‘আসল উৎসব তো দল বুয়েনোস আইরেসে পৌঁছনোর পরেই হবে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আর্জেন্টিনা ফেরাই লক্ষ্য।’’ স্টেডিয়াম থেকেই হামাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দিকে ছুটলেন আলেহান্দ্রো। সোমবার কাতারের স্থানীয় সময় ভোর পাঁচটায় বিমান তাঁর।

যে শওক ওয়াকি বিশ্বকাপ চলাকালীন গমগম করত নানা দেশের ফুটবলপ্রেমীদের ভিড়ে, রেস্তঁরায় খাওয়ার জন্য দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হত, সেখানে এখন অদ্ভূত শূন্যতা।

বুয়েনোস আইরেস সাজছে উৎসবের জন্য, কাতার জুড়ে শূন্যতা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement