Lionel Messi

লিয়ো এসো, আমরা সবাই অপেক্ষায়

ফ্রান্সের বিরুদ্ধে ৩৬ মিনিটের মধ্যে ২-০ এগিয়ে যেতেই উৎসব শুরু হয়ে যায় আমাদের এখানে। ভাবতেও পারিনি ম্যাচ গড়াবে টাইব্রেকারে।

Advertisement
জোয়াকিন সাইমন পেদ্রোস
বুয়েনোস আইরেস শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০২২ ০৭:২০
দুই-প্রজন্ম: ১৯৮৬ সালে বিশ্বকাপ জয় করে সতীর্থদের কাঁধে মাঠ প্রদক্ষিণ দিয়েগো মারাদোনার। ৩৬ বছর পরে কাপ জিতে একই ভাবে উৎসব মেসির।

দুই-প্রজন্ম: ১৯৮৬ সালে বিশ্বকাপ জয় করে সতীর্থদের কাঁধে মাঠ প্রদক্ষিণ দিয়েগো মারাদোনার। ৩৬ বছর পরে কাপ জিতে একই ভাবে উৎসব মেসির। ছবি: রয়টার্স।

এখনও মনে হচ্ছে যেন স্বপ্ন দেখছি। সত্যিই ফ্রান্সকে হারিয়ে আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তো? নাকি পুরোটাই স্বপ্ন। গত ৩৬ বছর ধরে যে স্বপ্ন বারবার ভেঙে যাওয়ার যন্ত্রণায় চোখের জল ফেলতে হয়েছে। অবশেষে মুক্তি। হ্যাঁ, আবার আমরা ফুটবলে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। সারারাত লক্ষ লক্ষ মানুষের সঙ্গে উৎসব করেছি ওবেলিক্স স্কোয়্যারে। এখন প্রস্তুতি নিচ্ছি লিয়োনেল মেসিদের স্বাগত জানানোর জন্য।

মনে খারাপ হয়ে গেল শুনে, দোহা থেকে বিমান ছাড়তে অনেক দেরি হয়েছে মেসিদের। ফলে নির্ধারিত সময়ের পরেই হয়তো ওরা দেশে পা রাখবে। তাতে অবশ্য সাধারণ মানুষের উৎসাহ এবং উন্মাদনার কোনও ফাঁক বা ঘাটতি নেই। আর্জেন্টিনায় আগামী কয়েক দিন ধরে উৎসব চলবে ।

Advertisement

বুয়েনোস আইরেস ঠিক ছয় ঘণ্টা পিছিয়ে রয়েছে কাতারের চেয়ে। রবিবার যখন ফাইনাল শুরু হয়, তখন এখানে দুপুর বারোটা। প্রতি রবিবার সকালেই আমরা সপরিবার চার্চে যাই প্রার্থনা করতে। বিশ্বকাপ ফাইনালের দিন সকালে অবশ্য চার্চে নয়, গিয়েছিলাম হার্দিন বেসা ভিস্তায় দিয়েগো মারাদোনার কবরে ফুল দিয়ে প্রার্থনা করতে। আমরা আর্জেন্টিনীয়রা বিশ্বাস করি, ফুটবল ঈশ্বরের আশীর্বাদ সঙ্গে ছিল বলেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছি।

ফ্রান্সের বিরুদ্ধে ৩৬ মিনিটের মধ্যে ২-০ এগিয়ে যেতেই উৎসব শুরু হয়ে যায় আমাদের এখানে। ভাবতেও পারিনি ম্যাচ গড়াবে টাইব্রেকারে। কিলিয়ান এমবাপে ৩-৩ করে দেওয়ার পরে চাপ সামলাতে না পেরে টেলিভিশনের সামনে থেকে উঠে গিয়ে অ্যাপার্টমেন্টের বাইরে সিঁড়িতে বসেছিলাম আর প্রার্থনা করছিলাম। স্ত্রীকে বলে দিয়েছিলাম, আর্জেন্টিনা চ্যাম্পিয়ন হলে খবর দিতে। আশা ছিল, টাইব্রেকারে আমারা জিতব। প্রথম কারণ, এমিলিয়ানো মার্তিনেসের মতো গোলরক্ষক রয়েছে আমাদের দলে। দ্বিতীয়ত, এ বারের বিশ্বকাপে ফ্রান্সের কোনও ম্যাচই টাইব্রেকারে পর্যন্ত গড়ায়নি। ফলে ফাইনালে এই মানসিক চাপ সামলানো কঠিন ছিল।

আমার স্ত্রী খবর দেওয়ার আগেই রাস্তা থেকে ভেসে আসা গগনভেদী চিৎকারে বুঝে গিয়েছিলাম, অবেশেষে স্বপ্নপূরণ। আমরা বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। এক মুহূর্তও দেরি না করে বেরিয়ে পড়লাম। বুয়েনোস আইরেসের ঠিক মাঝখানে ঐতিহাসিক ওবেলিস্কো আমাদের গর্বের প্রতীক। ১৯৩৬ সালে তৈরি হওয়া ২৩৫ ফিটের এই সৌধের সামনেই আমরা যে কোনও সাফল্য উদ্‌যাপনের জন্য জড়ো হই।

আমার বাড়ি সান মিগুয়েল থেকে ওবেলিস্কোর দূরত্ব খুব বেশি নয়। গাড়িতে মাত্র মিনিট কুড়ি। কিন্তু রবিবার দুপুর থেকে আর্জেন্টিনার কোনও রাস্তাতেই গাড়ি চলেনি। সমস্ত পথই যে চলে গিয়েছিল মানুষের দখলে। মেয়ে পাজ়কে কাঁধে নিয়ে আমিও রওনা হয়েছিলাম ওবেলিস্কোর উদ্দেশে। মনে পড়ে যাচ্ছিল, ১৯৮৬-র বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরে আমিও তো এ ভাবেই বাবার কাঁধে চড়ে গিয়েছিলাম উৎসবে সামিল হতে। রবিবার শুধু মেসিরই নয়, আমারও জীবনের একটা অপূর্ণ অধ্যায়ের বৃত্ত সম্পূর্ণ হল।

রবিবারের উন্মাদনা সব কিছুকে ছাপিয়ে গিয়েছে। হবে না-ই বা কেন? এ বার তো বিশ্বকাপ জিতেছি আমরা। এই অনুভূতি ব্যাখ্যা করা অসম্ভব।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement