গোলের পর মনবীর সিংহের উচ্ছ্বাস। ছবি: সমাজমাধ্যম।
নর্থইস্ট ইউনাইটেড ০
মোহনবাগান ২ (মনবীর, লিস্টন)
জয়ের হ্যাটট্রিক মোহনবাগানের। রবিবার আইএসএলে নর্থইস্ট ইউনাইটেডকে ২-০ গোলে হারিয়ে আবার বেঙ্গালুরু এফসি-কে টপকে শীর্ষস্থান দখল করল তারা। ১০ ম্যাচে ২৩ পয়েন্ট হল মোহনবাগানের। বেঙ্গালুরুর পয়েন্ট সমান হলেও একটি ম্যাচ বেশি খেলেছে তারা। এ দিন গুয়াহাটিতে মোহনবাগানকে জেতাল মনবীর সিংহ এবং লিস্টন কোলাসোর ভাল দু’টি গোল। পাশাপাশি গোটা ম্যাচে আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলে সমর্থকদেরও মন জিতেছে তারা। ইস্টবেঙ্গলের পর এ বার মোহনবাগানের কাছেও হারল নর্থইস্ট। ডুরান্ড কাপের ফাইনালে মোহনবাগানকে হারালেও আইএসএলে দু’টি সাক্ষাতেই হারল জন আব্রাহামের দল।
দু’দলের আগ্রাসী ফুটবল
হোসে মোলিনার মোহনবাগান বরাবরই আগ্রাসী ফুটবল খেলতে ভালবাসে। মরসুমের শুরু থেকেই তারা আগ্রাসী ফুটবল খেলেছে। হুয়ান পেদ্রো বেনালির নর্থইস্টও কম যায় না। সেটা বোঝাও গিয়েছে ডুরান্ড কাপের ফাইনালে। ফলে শনিবারের ম্যাচে আগাগোড়া আগ্রাসী ফুটবল দেখা গেল দুই দলের। ম্যাচের একটা সময়ও ঘুমপাড়ানি ফুটবল হয়নি। বল ক্রমাগত অর্ধ বদল করেছে। কখনও নর্থইস্ট, কখনও মোহনবাগান আক্রমণ করেছে। তবে অভিজ্ঞতা এবং ব্যক্তিগত নৈপুণ্যের কারণেই ম্যাচ জিতেছে মোহনবাগান। নর্থইস্ট ভাল ফুটবল খেললেও ম্যাচ জেতার জন্য ‘এক্স ফ্যাক্টর’ দরকার হয় সেটা তাদের খেলায় ছিল না।
মনবীরের প্রশংসনীয় গোল
মোলিনার অধীনে প্রতিটি ম্যাচেই প্রচুর পরিশ্রম করে খেলেন পঞ্জাবের ফুটবলার। রবিবার বার বার প্রান্ত বদল করলেন লিস্টন কোলাসোর সঙ্গে। কখনও ডান দিক, কখনও বাঁ দিকে খেলছিলেন। শুধু উইং দিয়ে আক্রমণ তোলাই নয়, প্রয়োজনে নীচে নেমে এসে ডিফেন্ডারদেরও সাহায্য করেছেন। তবে দ্বিতীয়ার্ধে তাঁর গোল দেখার জন্য দীর্ঘ ক্ষণ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করা যায়। নর্থইস্ট বক্সের বাইরে ডান দিকে বল পেয়েছিলেন তিনি। বল নিয়ে বিপক্ষের ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে বাঁ দিকে এগোতে থাকেন। গোলের মাঝামাঝি গিয়ে বাঁ পায়ের বাঁকানো শট নেন। নর্থইস্ট গোলকিপার গুরমিত সিংহের কিছু করার ছিল না।
আবার পুরনো লিস্টন
মোলিনার অধীনে লিস্টনের খেলা অনেকটাই পাল্টে গিয়েছে। গত মরসুমে সে ভাবে ছন্দে ছিলেন না। অনেকটা সময় কাটাতে হয়েছে রিজ়ার্ভ বেঞ্চে। তবে মোলিনা গোয়ার এই ফুটবলারের উপর ভরসা রেখেছেন। তার দাম দিয়ে চলেছেন লিস্টন। জামশেদপুরের বিরুদ্ধে ডান দিক থেকে ভেতরে ঢুকে এসে দূরপাল্লার শটে গোল করেছিলেন। আবারও একটি অ্যাওয়ে ম্যাচে গোল করলেন। এ বারও সেই একই কায়দায়। বাঁ প্রান্তে বল পাওয়ার পর শট মারার জন্য ভেতরে অনেকটা ঢুকে এলেন। নিজেকে ঠিক জায়গায় নিয়ে এসে ডান পায়ে যে নীচু শট মারলেন, তা কার্যত দাঁড়িয়ে দেখতে হল গুরমিতকে।
বোতলবন্দি আলাদিন
আইএসএলে টানা আটটি ম্যাচে গোল করার পর ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে গত ম্যাচে ছন্দ হারিয়েছিলেন আলাদিন আজারাই। মোহনবাগান তাঁকে গোটা ম্যাচে বোতলবন্দি করে রাখল। ইস্টবেঙ্গল ম্যাচে তবু কিছু সুযোগ পেয়েছিলেন। মোহনবাগান কোনও সুযোগই দিল না মরক্কোর ফুটবলারকে। কার্ড সমস্যায় রক্ষণে ছিলেন না আলবের্তো রদ্রিগেস। সেই জায়গায় মাঝে দীপেন্দু বিশ্বাসকে খেলালেন মোলিনা। নিজের দায়িত্ব ভাল ভাবেই পালন করলেন বঙ্গসন্তান। দু’-একটি খুচরো ভুল ছাড়া নর্থইস্টের আক্রমণকে রুখে দিলেন বার বার। প্রায় নড়তেই দেননি নেস্তর আলবিয়াচকে।
অনবদ্য বিশাল কাইথ
মোহনবাগানের এই জয় যাঁকে ছাড়া অসম্পূর্ণ থেকে যেত, তিনি বিশাল কাইথ। কত ম্যাচে যে মোহনবাগানের পরিত্রাতা হয়ে দাঁড়িয়েছেন তা গুনে বলা যাবে না। এ দিন দু’টি নিশ্চিত গোল বাঁচিয়েছেন তিনি। প্রথমার্ধে নেস্তরের একটি শট ডান দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে বাঁচান। দ্বিতীয়ার্ধে বাঁচালেন খুব কাছ থেকে পার্থিব গগৈয়ের শট। এ ছাড়া সময় মতো গোল থেকে বেরিয়ে এসে বল ক্লিয়ার করা তো রয়েছেই।