উল্লাস: বায়ার্নের বিরুদ্ধে গোলের পরে হালান্ড। গেটি ইমেজেস।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ আটের প্রথম পর্বে বায়ার্ন মিউনিখের বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে ৩-০ গোলে জয়ের পরেই ম্যাঞ্চেস্টার সিটির সেমিফাইনালে খেলা কার্যত নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। তবুও ফুটবলপ্রেমীদের কেউ কেউ আশা করেছিলেন, দ্বিতীয় পর্বে ঘুরে দাঁড়াবেন টোমাস মুলাররা। কিন্তু বাস্তবে তা হল না। বুধবার রাতে বায়ার্নের সঙ্গে ১-১ ড্র করে (দুই পর্ব মিলিয়ে ৪-১) শেষ চারে পৌঁছে গেলেন আর্লিং হালান্ডরা-ই। ম্যান সিটির পরীক্ষা এ বার রিয়াল মাদ্রিদের বিরুদ্ধে (৯ ও ১৭ মে)। অন্য সেমিফাইনালে এসি মিলানের প্রতিপক্ষ ইন্টার মিলান(১০ ও ১৬ মে)।
মিউনিখের আলিয়াঞ্জ এরিনায় বুধবার রাতে বায়ার্ন সমর্থকেরা অঘটনের আশায় ভিড় করেছিলেন। ২০১৮-’১৯ মরসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সেমিফাইনালে বার্সেলোনার কাছে প্রথম পর্বে ০-৩ গোলে হেরে গিয়েছিল লিভারপুল। ঘরের মাঠে দ্বিতীয় পর্বের দ্বৈরথে নাটকীয় প্রত্যাবর্তন ঘটিয়ে ৪-০ গোলে জিতে ফাইনালে ওঠেন মহম্মদ সালাহরা। চ্যাম্পিয়নও হন তাঁরা। কিন্তু বায়ার্ন পারল না লিভারপুল হয়ে উঠতে।
ঘরের মাঠে ম্যাচের শুরু থেকেই আধিপত্য ছিল বায়ার্নের। বল দখলে রেখে শুরু থেকেই আক্রমণে এগিয়ে ছিল বায়ার্ন। ১৭ মিনিটে গোল করার সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি লেরয় সানে। সামনে একা ম্যান সিটির গোলরক্ষক এদেরসনকে পেয়েও বাইরে বল মারেন। কয়েক মিনিটের মধ্যেই রেফারির একটি সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে আবহ। হালান্ডকে ফাউল করেন দায়ুত উপামেকানো। সরাসরি তাঁকে লাল কার্ড দেখান রেফারি। হালান্ড অফসাইডে থাকায় অবশ্য ভাগ্যের জোরে বেঁচে যান তিনি।
৩৫ মিনিটে ইকেই গুন্দোয়ানের শট বক্সের মধ্যে উপামেকানোর হাতে লাগলে পেনাল্টি পায় ম্যান সিটি। কিন্তু অবিশ্বাস্য ভাবে ক্রসবারের উপর দিয়ে বল উড়িয়ে দেন হালান্ড। প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার আগে সুযোগ হাতছাড়া করেন জামাল মুসিয়ালা ও সানে।
দ্বিতীয়ার্ধে অবশ্য শুরু থেকেই আক্রমণের ঝড় তোলে ম্যান সিটি। যদিও ৫৫ মিনিটে বায়ার্ন গোলরক্ষক ইয়ান সোমেরকে একা পেয়েও গোল করতে পারেননি হালান্ড। দু’মিনিটের মধ্যে তিনিই স্বস্তি ফেরান ম্যান সিটি শিবিরে। প্রতি আক্রমণ থেকে বল পেয়ে প্রথমে কেভিন দ্য ব্রুইনকে দেন হালান্ড। তার পরে ফিরতি বল নিয়ে ঝড়ের গতিতে বায়ার্নের বক্সে ঢুকে গোল করেন। চলতি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ১২তম গোল করলেন হালান্ড। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে এই মরসুমে ৪৮তম গোল করলেন নরওয়ের স্ট্রাইকার। দুই পর্ব মিলিয়ে ৪-০ গোলে এগিয়ে যায় ম্যান সিটি। খেলা শেষ হওয়ার সাত মিনিট আগে সানের পরিবর্তে নামা সাদিয়ো মানের শট মানুয়েল আকাঞ্জির হাতে লাগায় পেনাল্টি পায় বায়ার্ন। জোশুয়া খিমিচ ব্যবধান কমালেও শেষপর্যন্ত দলের হার বাঁচাতে পারেননি।
গত মরসুমে ম্যান সিটির চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের স্বপ্ন ভেঙে গিয়েছিল সেমিফাইনালে রিয়ালের কাছে হেরেই। এ বারও শেষ চারে মুখোমুখি দুই দল। বুধবার রাত থেকেই এই ম্যাচকে নিয়ে উন্মাদনা বাড়তে শুরু করে দিয়েছে ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যে। ম্যাচের পরে বের্নার্দো সিলভা বলেছেন, ‘‘লড়াই কঠিন হলেও আশা করছি, ফাইনালে উঠতে পারব। আমরা দারুণ আত্মবিশ্বাসী। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।’’
পেপ অবশ্য সতর্ক। ম্যান সিটি ম্যানেজার বেশি চিন্তিত ফুটবলারদের ক্লান্তি নিয়ে। শনিবারই এফএ কাপের সেমিফাইনাল খেলতে হবে শেফিল্ড ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে। পেপ বলেছেন, ‘‘আমার মনে হয় সব ক্লাবই মনে করে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিততে হলে রিয়াল মাদ্রিদকে হারাতে হবে। এক সময় বার্সেলোনাকে নিয়ে এ রকম ভাবা হত। এখন সেই জায়গাটা নিয়েছে রিয়াল।’’ যোগ করেছেন, ‘‘আমরা প্রচণ্ড ক্লান্ত। এই অবস্থাতেই শনিবার এফএ কাপের সেমিফাইনাল খেলতে হবে।’’
এ দিকে, চ্যাম্পিয়ন্স লিগের অন্য ম্যাচে ঘরের মাঠে বেনফিকার সঙ্গে ৩-৩ ড্র করল ইন্টার মিলান। দুই পর্ব মিলিয়ে ৫-৩ জিতে শেষ চারে পৌঁছে গেলেন রোমেলু লুকাকুরা। ১৪ মিনিটে নিকোলো বারেলার ১-০ করেন। ৩৮ মিনিটে সমতা ফেরান ফ্রেদ্রিক আউরনেস। ৬৫ মিনিটে লাউতারো মার্তিনেস ২-১ এগিয়ে দেন ইন্টারকে। ১৩ মিনিট পরে ৩-১ করেন কোরেরা। বেনফিকার হয়ে গোল করেন আন্তোনিয়ো সিলভা (৮৬ মিনিট) ও পেতার মুসা (৯০+৫ মিনিট)।