বৃহস্পতিবার সৌদি আরবে মুখোমুখি হয়েছিলেন রোনাল্ডো এবং মেসি। ছবি: টুইটার
প্রায় তিন বছর পর বৃহস্পতিবার ফুটবল মাঠে আবার একে অপরের মুখোমুখি হয়েছিলেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো এবং লিয়োনেল মেসি। সেই ম্যাচের একটি মুহূর্ত হঠাৎই ভাইরাল হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, রোনাল্ডোর দিকে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে রয়েছেন মেসি। সেই ভিডিয়োটি কোন সময়ের, তা অবশ্য বোঝা যাচ্ছে না। কিন্তু ভিডিয়োটি প্রকাশ হতেই ছড়িয়ে পড়েছে সমাজমাধ্যমে।
রিয়াধ সিজন অলস্টার্সের হয়ে খেলতে নেমেছিলেন সম্প্রতি আল নাসেরে যোগ দেওয়া রোনাল্ডো। প্যারিস সঁ জরমঁ-র বিরুদ্ধে এই ম্যাচ নিয়ে উত্তেজনা অনেক আগে থেকেই তৈরি হয়েছিল। ম্যাচ হলও সে রকমই হাড্ডাহাড্ডি। মেসি, রোনাল্ডো, কিলিয়ান এমবাপে প্রত্যেকেই গোল পেলেন। তবে সব ছাপিয়ে শিরোনামে এসেছে মেসির চাউনি।
ম্যাচের আগে টানেলে পিএসজি-র ফুটবলারদের সঙ্গে দেখা হয় রোনাল্ডোর। আগে গিয়ে নেমারের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন রোনাল্ডো। তার পর এমবাপে ডেকে নিয়ে জড়িয়ে ধরেন। দু’জনের মধ্যে সামান্য কথাবার্তা হয়। এমবাপের আগে দাঁড়িয়েছিলেন মেসি। দুই ফুটবলারই একে অপরকে জড়িয়ে ধরেন। ক্লাব আলাদা হতে পারে, রেষারেষি থাকতে পারে। কিন্তু দুই ফুটবলারের মধ্যে পারস্পরিক সৌহার্দ্য যে এত টুকু কমেনি, এই ঘটনাই তাঁর প্রমাণ।
Love someone who looks at you like Messi looks at Cristiano Ronaldo 🥂#CR7𓃵 pic.twitter.com/d4Z5Q5hZAq
— Sarah (@_m__sara) January 19, 2023
বৃহস্পতিবারের খেলায় অবশ্য কেউ কাউকে এক ইঞ্চি জমি ছাড়লেন না। ফিফা বিশ্বকাপে যেখানে শেষ করেছিলেন, ঠিক সেখানেই শুরু করেন মেসি। ৩ মিনিটের মাথায় গোল করে ফেলেন তিনি। বক্সের বাইরে থেকে নেমারের ঠিকানা লেখা পাসে সৌদির জাতীয় দলের গোলরক্ষক আল-ওয়াইসকে আরও এক বার পরাস্ত করেন মেসি।
খেলায় দাপট বেশি দেখাচ্ছিল পিএসজি। ১৭ মিনিটের মাথায় সহজ সুযোগ নষ্ট করেন নেমার। দু’মিনিট পরেই দেখা গেল মেসি-এমবাপে যুগলবন্দি। মেসির পাস থেকে গোল করেন এমবাপে। কিন্তু অফসাইডের কারণে সেই গোল বাতিল হয়। ৩৪ মিনিটের মাথায় সমতা ফেরায় সৌদি। বক্সের মধ্যে পিএসজি গোলরক্ষক নাভাস ফাউল করেন রোনাল্ডোকে। পেনাল্টি থেকে গোল করেন রোনাল্ডো। পেনাল্টি নেওয়ার সময় সেই পুরনো সিএর৭-এর ঝলক দেখা যায়।
চার মিনিট পরে ১০ জনে হয়ে যায় পিএসজি। লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন জুয়ান বার্নেট। তাতে অবশ্য চাপে পড়েনি প্যারিসের ক্লাব। ৪৩ মিনিটের মাথায় এমবাপের ক্রস থেকে দ্বিতীয় গোল করেন মারকুইনোস। প্রথমার্ধের অতিরিক্ত সময়ে নেমারকে বক্সে ফাউল করায় পেনাল্টি পায় পিএসজি। কিন্তু নেমারের দুর্বল শট বাঁচিয়ে দেন আল-ওয়াইসি। বিরতির আগে ২-১ এগিয়ে যায় পিএসজি।
প্রথমার্ধের অতিরিক্ত সময়ে নিজের ও দলের দ্বিতীয় গোল করেন রোনাল্ডো। বক্সের বাইরে ফ্রিকিক পান তিনি। তাঁর শট ওয়ালে লেগে প্রতিহত হলেও ফিরতি বলে সের্জিয়ো র্যামোসের ভুল কাজে লাগিয়ে গোল করে যান রোনাল্ডো। কয়েক মিনিট পরেই নিজের ভুল শুধরে নেন র্যামোস। এমবাপের ক্রস থেকে গোল করে দলকে এগিয়ে দেন তিনি।
পেন্ডুলামের মতো খেলা দুলছিল। ৫৭ মিনিটের মাথায় আবার সমতা ফেরায় সৌদি অলস্টার। দক্ষিণ কোরিয়ার জাং এ বার গোল করেন। কিন্তু সৌদির ক্লাবের আনন্দ বেশি ক্ষণ স্থায়ী হয়নি। ২ মিনিট পরে বক্সের মধ্যে মেসির শটে হাত লাগিয়ে পেনাল্টি দেন সৌদির ডিফেন্ডার। এ বার পেনাল্টি নিতে যান এমবাপে। বিশ্বকাপের ফাইনালে তিনটি পেনাল্টিতেই গোল করেছিলেন তিনি। এ বারও করলেন।
৬০ মিনিটের পরে মেসি, এমবাপে, রোনাল্ডো ও নেমারকে তুলে নেওয়া হয়। বোঝাই যাচ্ছিল, দলের প্রধান ফুটবলারদের নিয়ে বেশি ঝুঁকি নিতে চাননি কোচেরা। ৭৭ মিনিটের মাথায় পিএসজির হয়ে আরও একটি গোল করেন হুগো একিটিকে। খেলার অতিরিক্ত সময়ে সৌদির ক্লাবের হয়ে চার নম্বর গোল করেন ট্যালিস্কা। তাতে অবশ্য পিএসজির জিততে সমস্যা হল না। ১০ জনে প্রায় আধ ঘণ্টা খেলেও ম্যাচ জিতল পিএসজি। সেই সঙ্গে জিতল ফুটবল। ইতিহাসের সাক্ষী থাকলেন হাজার হাজার দর্শক।