ISL 2022-23

আইএসএলে সুনীল ছেত্রীর বিতর্কিত গোল কি অবৈধ? ফিফার নিয়ম কী বলছে?

যে গোলের প্রতিবাদে কেরল ব্লাস্টার্স পুরো ম্যাচ না খেলেই দল তুলে নেয়। সুনীলের বেঙ্গালুরু সেমিফাইনালে উঠে যায়। কিন্তু সুনীলের করা গোলটি কি আদৌ বৈধ? ফিফার নিয়ম কী বলছে?

Advertisement
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০২৩ ১২:১৮
Bengaluru FC captain Sunil Chhetri going to take that free kick in ISL on Friday against Kerala Blasters FC dgtl

শুক্রবার সেই বিতর্কিত ফ্রি কিক নিতে যাচ্ছেন সুনীল ছেত্রী। ছবি: পিটিআই

আইএসএলের নকআউট পর্বের প্রথম ম্যাচে সুনীল ছেত্রীর করা গোল নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। যে গোলের প্রতিবাদে কেরল ব্লাস্টার্স পুরো ম্যাচ না খেলেই দল তুলে নেয়। সুনীলের বেঙ্গালুরু সেমিফাইনালে উঠে যায়। কিন্তু সুনীলের করা গোলটি কি আদৌ বৈধ? ফিফার নিয়ম কী বলছে?

কী ঘটেছিল?

Advertisement

বেঙ্গালুরু বনাম কেরল ম্যাচ চলছিল আইএসএলের নকআউট পর্বে। সেমিফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে নামা দুই দল নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কোনও গোল করতে পারেনি। অতিরিক্ত সময়ের খেলা শুরু হলে ৯৫ মিনিটের মাথায় কেরলের বক্সের বাইরে ফ্রি কিক পায় বেঙ্গালুরু। রেফারির সঙ্গে কথা বলে সেই জায়গায় বল বসিয়ে মারতে যান সুনীল। বলের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন কেরলের আদ্রিয়ান লুনা। তিনি বাধা দেন। সুনীল থেমে যান। পিছনে দেওয়াল তৈরি করছিলেন কেরলের অন্য ফুটবলাররা, তাঁদের নির্দেশ দিচ্ছিলেন গোলরক্ষক প্রভসুখন গিল। সুনীল সেই সময় দ্বিতীয় চেষ্টায় ফ্রি কিক থেকে বল জালে জড়িয়ে দেন। এর পরেই কেরলের ফুটবলাররা প্রতিবাদ জানান। রেফারি বাঁশি বাজাননি বলে অভিযোগ করেন তাঁরা। কেরলের কোচ ইভান ভুকোমানভিচ তাঁর দলকে মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে আসতে বলেন। কেরল মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যায়।

ফিফার নিয়ম

আন্তর্জাতিক ফুটবল সংস্থার সংবিধানে ১৩.৩ ধারায় দ্রুত ফ্রি কিক নেওয়ার নিয়ম রয়েছে। সেই নিয়ম বলছে, ফ্রি কিক নেওয়ার সময় বিপক্ষের ফুটবলার যদি বলের ১০ গজের মধ্যে থাকেন এবং সেই অবস্থায় শট নেন, তা হলে বিপক্ষ ফুটবলাররা যে অবস্থাতেই থাকুন না কেন, সেই ফ্রি কিক বৈধ। কিন্তু শট আবার নিতে হবে যদি না রেফারি অ্যাডভান্টেজ দিয়ে থাকেন। কিন্তু বিপক্ষের সেই ফুটবলার যদি শট মারতে বাধা দেন তা হলে রেফারি খেলা চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেবেন। দ্রুত ফ্রি কিক নেওয়ার সময় বিপক্ষ বাধা দিলে সেই ফুটবলারকে সময় নষ্ট করার জন্য সতর্ক করার নিয়ম রয়েছে।

Sunil Chhetri discussing with the referee during ISL match on Friday

বিতর্কের পর রেফারির সঙ্গে আলোচনা করছেন সুনীল ছেত্রী। ছবি: আইএসএল

বিতর্ক কী নিয়ে?

কেরলের সহকারী কোচ ইশফাক আহমেদ জানিয়েছেন যে, রেফারি ভ্যানিশিং স্প্রে দিয়ে নির্দিষ্ট করে দেন কোথা থেকে শট মারতে হবে। ১০ গজ মাপার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। এর ফলে দ্রুত ফ্রি কিক নেওয়া যায় না। এটা যদিও ফিফার নিয়মে উল্লেখ করা নেই। বল থামানো হয়েছিল। সুনীল দ্রুত ফ্রি কিক নিতেই পারেন। কেরলের লুনা সেই ফ্রি কিক আটকানোর মতো জায়গায় ছিলেন। রেফারি সেটা লক্ষ্যও করেছেন। লুনা যদি সুনীলের শট আটকে দিতেন, তা হলে আবার শট নিতে হত সুনীলকে। সে ক্ষেত্রে আর দ্রুত ফ্রি কিক নিতে পারতেন না তিনি। সুনীলকে শট মারার আগে রেফারির বাঁশির জন্য অপেক্ষা করতে হত।

এই ঘটনায় সুনীলের বক্তব্য

ম্যাচ শেষে সুনীল বলেন, “আমরা ফ্রি কিক পাওয়ার পর রেফারিকে বলি যে, বাঁশির দরকার নেই, দেওয়ালের দরকার নেই। রেফারি জিজ্ঞেস করেন, ‘তোমরা নিশ্চিত?’ আমি আবার বলি, ‘হ্যাঁ, বাঁশি বা দেওয়াল দরকার নেই।’ রেফারিও আবার জিজ্ঞেস করেন যে, ‘আমরা তৈরি কি না।’ আমি বলি, ‘হ্যাঁ।’ লুনা বলের কাছে দাঁড়িয়ে ছিল। আমি প্রথম বার মারতে গেলে ও আটকায়। আমি ধরে নিচ্ছি ও জানত যে, আমি কী করতে যাচ্ছি।”

কেরলের দাবি কি সঠিক?

রেফারি বাঁশি না বাজানো সত্ত্বেও সুনীলের ফ্রি কিক নেওয়া অবৈধ বলে কেরল যে দাবি করেছে, তা ফিফার নিয়ম অনুযায়ী ঠিক নয়। ফুটবলে যখন ভ্যানিশিং স্প্রে ব্যবহার হত না, তখনও রেফারি নির্দিষ্ট করে দিতেন কোথা থেকে ফ্রি কিক নিতে হবে। বল বসিয়ে দিতেন সেখানে। তাতে ১০ গজ মাপার প্রক্রিয়া শুরু হত না। দ্রুত ফ্রি কিক নেওয়ার নিয়মও ফুটবলে আছে। বল বসানো হয়ে গিয়েছিল তাই দ্রুত ফ্রি কিক নিতে কোনও বাধা ছিল না সুনীলের। ২০০৪ সালে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে চেলসির বিরুদ্ধে থিয়োরি অঁরি এমন ভাবে গোল করেছিলেন। সেই সময় প্রিমিয়ার লিগের রেফারি বিবিসি-কে বলেন, “বাঁশি বাজানোর কোনও প্রয়োজন নেই। আমি অঁরিকে জিজ্ঞেস করি যে, ওর দেওয়াল প্রয়োজন আছে কি না? অঁরি শান্ত ভাবে বলে, ‘আমি কি শট নিতে পারি।’ আমি বলি, ‘হ্যাঁ।’ আমি নির্দেশ দিই শট নিতে এবং ও শট নেয়।” সুনীলও শুক্রবার সেটাই করেছিলেন বলে জানিয়েছেন।

আরও পড়ুন
Advertisement