FIFA World Cup 2022

বিশ্বকাপে ফ্রিকিকের কেরামতি, কারা কৌশলে বোকা বানাচ্ছেন প্রতিপক্ষকে

প্রতি বার বিশ্বকাপেই সেটপিস মুভমেন্টের নতুনত্ব বা বৈচিত্র্য দেখা যায়। ব্যতিক্রম নয় কাতার বিশ্বকাপও। বিশ্বের সেরা কোচেরা প্রতিপক্ষকে বোকা বানাতে নানা রকম কৌশল নেন।

Advertisement
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২২ ১৮:২০
আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে নেদারল্যান্ডসের ফ্রিকিক থেকে এই গোল এখন আলোচনার কেন্দ্রে।

আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে নেদারল্যান্ডসের ফ্রিকিক থেকে এই গোল এখন আলোচনার কেন্দ্রে। ছবি: টুইটার।

ফুটবলে সেটপিস মুভমেন্টের গুরুত্ব অজানা নয়। যে দলের সেটপিস মুভমেন্ট শক্তিশালী, সেই দলকে বাড়তি গুরুত্ব দেয় প্রতিপক্ষরা। প্রতি বার বিশ্বকাপেই সেটপিস মুভমেন্টের নতুনত্ব বা বৈচিত্র্য দেখা যায়। ব্যতিক্রম নয় কাতার বিশ্বকাপও। আর্জেন্টিনা-নেদারল্যান্ডস কোয়ার্টার ফাইনালে ফ্রিকিকে দেখা গিয়েছে নতুনত্ব।

ম্যাচের সংযুক্ত সময়েরও একদম শেষ বেলায় আর্জেন্টিনা বক্সের ঠিক বাইরে ফ্রিকিক পায় নেদারল্যান্ডস। ম্যাচের এক দম শেষ সময় এই রকম জায়গায় ফ্রিকিক পেলে পিছিয়ে থাকা দল সাধারণত সরাসরি গোল করার চেষ্টা করে। কিন্তু তা করেনি নেদারল্যান্ডস। কুপমেইনার্স গোল লক্ষ্য করে শট না মেরে পাশ দেন আর্জেন্টিনার ফুটবলারদের তৈরি করা মানব প্রাচীরের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা সতীর্থ উইঘর্স্টকে। তিনি আর্জেন্টিনার ডিফেন্ডারদের বাধা অতিক্রম করে দুরন্ত শটে সমতা ফেরান। ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। নেদারল্যান্ডসের ফ্রিকিক নেওয়ার এই অভিনব কৌশল বোকা বানিয়ে দেয় আর্জেন্টিনাকে। লিয়োনেল মেসিরা সে সময় এমন ফ্রিকিক আশা করেননি। শেষ পর্যন্ত টাইব্রেকারে আর্জেন্টিনা জিতলেও নেদারল্যান্ডসের ফ্রিকিক নেওয়ার কৌশল নিয়ে চলছে আলোচনা।

Advertisement

আগেও একাধিক বিশ্বকাপে বিভিন্ন দলকে অভিনব কৌশলে ফ্রিকিক নিতে দেখা গিয়েছে। ১৯৯৪ বিশ্বকাপে অনবদ্য ফুটবল উপহার দিয়েছিল সুইডেন। তৃতীয় স্থানে শেষ করেছিল তারা। রোমানিয়ার বিরুদ্ধে সুইডেনের স্ট্রাইকার টমাস ব্রোলিন দুরন্ত বুদ্ধিদীপ্ত ফ্রিকিক নিয়েছিলেন। ১৯৯৮ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে কোয়ার্টার ফাইনালে আর্জেন্টিনার জেভিয়ার জ়ানেত্তির নেওয়া ফ্রিকিকও বিস্মিত করেছিল। গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতাকে কেন্দ্র করেই সে বার আক্রমণ তৈরি করছিলেন আর্জেন্টাইনরা। একটি ফ্রিকিকের সময় বাতিস্তুতা দ্রুত গতিতে ইংল্যান্ডের বক্সে উঠছিলেন। তাঁকে আটকাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন ইংল্যান্ডের একাধিক ফুটবলার। বাতিস্তুতার দিকে বল বাড়ানোর ভঙ্গি করলেও জ়ানেত্তি বল দেন ফাঁকায় থাকা সেবাস্তিয়ান ভেরনকে। তিনিও বাতিস্তুতাকে বল দেওয়ার ভঙ্গি করে বোকা বানিয়ে দেন ইংল্যান্ডের ফুটবলারদের। ফ্রিকিক নিয়েই দ্রুত বক্সে পৌঁছানো অরক্ষিত জানেত্তিকেই আবার বল ফিরিয়ে দেন ভেরন। সহজেই গোল করেছিলেন জ়ানেত্তি। আর্জেন্টিনার এই কৌশল বুঝতেই পারেননি ইংল্যান্ডের রক্ষণ ভাগের ফুটবলাররা।

১৯৭০ সালের বিশ্বকাপে পেরুর বিরুদ্ধে ম্যাচের ১৩ মিনিটের মাথায় বক্সের ঠিক বাইরে ফ্রিকিক পেয়েছিল বুলগেরিয়া। পেরুর চার জন ফুটবলার মানব প্রাচীর তৈরি করেছিলেন যাতে গোলপোস্টের ডান দিক দিয়ে গোল না হয়। বাঁ দিক আগলানোর দায়িত্ব নেন গোলরক্ষক। বুলগেরিয়ার ডিনকো ডারেন্ডজ়ি মানব প্রাচীরের ডান দিকে ক্রমাগত জায়গা পরিবর্তন করে পেরুর অন্য ফুটবলারদের ব্যস্ত রেখেছিলেন। যিনি ফ্রিকিকটি নেন, তিনি ডারেন্ডজ়িকে বল না দিয়ে হঠাৎ পিছন থেকে উঠে আসা অন্য এক ফুটবলারকে বল দেন। তাতে বিভ্রান্ত হয়ে যান পেরুর ফুটবলাররা। পিছন থেকে উঠে আসা ফুটবলার গোলে শট নেওয়ার ভান করলেও তত ক্ষণে অরক্ষিত হয়ে যাওয়া ডারেন্ডজ়িকেই আলতো টোকায় বল দেন। গোল করতে ভুল করেননি ডারেন্ডজ়ি।

ফ্রিকিক নেওয়ার অভিনব কৌশল দেখিয়েছিলেন ব্রাজিলের রোনাল্ডিনহোও। ২০০২ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিরদ্ধে গোলের ৩৫ গজ দূরে মাঠের ডান প্রান্ত থেকে অনবদ্য ফ্রিকিক নেন। এক সতীর্থকে বল দেওয়ার বদলে শেষ মুহূর্তে গোল লক্ষ্য করে ভাসানো শট নেন। ইংল্যান্ডের গোলরক্ষক ডেভিড সিম্যানকে বোকা বানিয়ে বাঁ পোস্টের কাছ দিয়ে বল ঢুকে যায় গোলে। রোনাল্ডিনহোর নেওয়া শটে বল এতটাই বাঁক খেয়েছিল যে তা আন্দাজ করতে পারেনি সিম্যান।

ডেভিড বেকহ্যাম, রবার্তো কার্লোস, লিয়োনেস মেসি, ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোরা ফ্রিকিক থেকে সরাসরি গোল করার জন্য বিখ্যাত। তাঁদের বাঁক খাওয়ানো শট বহু বার সব বাধা অতিক্রম করে গোলে ঢুকেছে। বক্সের কাছাকাছি জায়গা থেকে তাঁদের মতো দক্ষ ফুটবলাররা ফ্রিকিক নিলে অতিরিক্ত সতর্ক থাকেন প্রতিপক্ষ দলের ফুটবলাররা। কিন্তু সব দলে এমন দক্ষ ফুটবলার থাকে না। সেই দলগুলি ফ্রিকিকের সুফল পেতে বিভিন্ন রকম কৌশল নেয়।

আরও পড়ুন
Advertisement