গোলের পর ভিনিসিয়াস, রাফিনহা, পাকুয়েতা এবং নেমারের সাম্বা নাচ। ছবি: রয়টার্স
ব্রাজিল ৪ (ভিনিসিয়াস, নেমার, রিচার্লিসন, পাকুয়েতা)
দক্ষিণ কোরিয়া ১ (সিয়ুং হো)
গ্রুপ পর্বে শেষ ম্যাচে ক্যামেরুনের কাছে হেরে আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল ব্রাজিল সমর্থকদের মনে। দক্ষিণ কোরিয়ার বিরুদ্ধে সব চিন্তা দূর করে দিলেন নেমাররা। ব্রাজিলকে পাওয়া গেল ব্রাজিলের মতোই। প্রথম থেকে আক্রমণ। প্রথমার্ধে চার গোল। আর কী চাই! ম্যাচ ছিল ৯০ মিনিটের। কিন্তু ৪৫ মিনিটেই শেষ করে দিলেন রিচার্লিসনরা। দক্ষিণ কোরিয়াকে ৪-১ উড়িয়ে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে গেল ব্রাজিল। এ বার তাদের সামনে লুকা মদ্রিচের ক্রোয়েশিয়া, যারা আগের ম্যাচে টাইব্রেকারে হারিয়েছে জাপানকে।
জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়া, দুই দল গ্রুপে অঘটন ঘটিয়ে শেষ ষোলোয় উঠেছিল। দক্ষিণ কোরিয়া শেষ ম্যাচে হারিয়েছে পর্তুগালের মতো দলকে। কিন্তু ব্রাজিলের বিরুদ্ধে প্রথমার্ধে খুঁজেই পাওয়া গেল না সন হিউং মিনের দলকে। তাদের ডিফেন্স তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ল। আর সেই সুযোগে খেলাচ্ছলে একের পর এক গোল করে গেল ব্রাজিল। ভিনিসিয়াসকে দিয়ে শুরু। তার পর গোল নেমার, রিচার্লিসন এবং লুকাস পাকুয়েতার।
রবিবার সাংবাদিক বৈঠকেই ব্রাজিল কোচ তিতে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, কোরিয়ার বিরুদ্ধে দলে রাখতে পারেন নেমারকে। তবে প্রথম একাদশে রাখার ব্যাপারে নিশ্চয়তা দেননি। এ দিন প্রথম এগারোতেই পাওয়া গেল নেমারকে। ক্যামেরুন ম্যাচের দল আমূল বদলে দিলেন তিতে। এদের মিলিটাও বাদে প্রত্যেকে ফিরলেন প্রথম দলে। শক্তিশালী দল নামিয়ে তিতে বুঝিয়ে দিতে চেয়েছিলেন, কোনও রকম অঘটন চান না তাঁরা।
ব্রাজিল খেললও সে ভাবেই। ৭ মিনিটের মাথায় প্রথম গোল। দুর্দান্ত আক্রমণে গোল করলেন ভিনিসিয়ার জুনিয়র। ডান দিক থেকে অসাধারণ পাস দিয়েছিলেন রাফিনহা। দক্ষিণ কোরিয়ার পায়ের জঙ্গল পেরিয়ে বল গিয়ে পৌঁছয় বাঁ দিকে দাঁড়িয়ে থাকা ভিনিসিয়াসের কাছে। ভিনিসিয়াস কিছু ক্ষণ থমকে নিখুঁত শটে বল জালে জড়ান। গোল করেই গোটা দলকে সাইডলাইনের ধারে গিয়ে সঙ্ঘবদ্ধ ভাবে নাচতে দেখা গেল। হাত এবং পায়ে ছন্দ মিলিয়ে কোমর দুলিয়ে নাচছিলেন নেমাররা। ম্যাচে বার বার যে জিনিস দেখা গেল।
তিন মিনিট পরেই পেনাল্টি পায় ব্রাজিল। রিচার্লিসনকে বক্সের মধ্যে ফাউল করেন দক্ষিণ কোরিয়ার ফুটবলার। রেফারি ক্লেমঁ তুরপঁ সঙ্গে সঙ্গে পেনাল্টির নির্দেশ দেন। ডান দিক-বাঁ দিক করে নেমারকে বিভ্রান্ত করতে চেয়েছিলেন কোরিয়ার গোলকিপার। তা কাজে লাগেনি। কিপারকে উল্টো দিকে ঠান্ডা মাথায় গোল করলেন নেমার। এ বারের বিশ্বকাপে তাঁর প্রথম গোল হয়ে গেল।
২৯ মিনিটের মাথায় তৃতীয় গোল করে তিতের দল। দুর্দান্ত স্কিল দেখালেন রিচার্লিসন। মাথায় বল নিয়ে জাগলিং করে সঙ্গে সঙ্গে পাস দেন মার্কুইনোসকে। তিনি পাস দেন থিয়াগো সিলভাকে। থিয়াগোর ঠিকানা লেখা পাস জমা পড়ে রিচার্লিসনের পায়ে। বাঁ পায়ে গোল করেন রিচার্লিসন। বিশ্বকাপে তৃতীয় গোল হল তাঁর।
সাত মিনিট পরে চতুর্থ গোল ব্রাজিলের। সেই সময় ছবির মতো ফুটবল খেলতে থাকে ব্রাজিল। সাম্বা-বাহিনী যে ভাবে খেলে অভ্যস্ত, ঠিক সেই ছবিই দেখা যায় মাঠে। এ বার গোল করলেন লুকাস পাকুয়েতা। রিচার্লিসন পাস দেন নেমারকে। নেমারের থেকে বল পান ভিনিসিয়াস। তাঁর থেকে বল পেয়ে চলতি বলে শটে গোল পাকুয়েতার। বিরতির সামান্য আগে রিচার্লিসন গোলে আরও একটি শট নেন। কিন্তু কোরিয়ার গোলকিপার বাঁচিয়ে দেন। বিরতির আগে আর কোনও গোল হয়নি।
দ্বিতীয়ার্ধ শুরু হতেও আক্রমণাত্মক মনোভাবের বদল হয়নি ব্রাজিলের। রাফিনহা দু’-তিন জন ডিফেন্ডারের মাঝখান থেকে শট নিতে গিয়েছিলেন। ডান দিকে ঝাঁপিয়ে বাঁচিয়ে দেন কোরিয়ার গোলকিপার। মিনিট কয়েক পরে আবার একটি বল পান রাফিনহা। এ বার বিপক্ষ গোলকিপার কোণ ছোট করে আনেন। ফলে দ্বিতীয় পোস্টে বল রাখতে চেয়েও ব্যর্থ হন রাফিনহা। বাঁচিয়ে দেন কোরিয়ার গোলকিপার। ৬৭ মিনিটের মাথায় দুর্দান্ত সেভ করেন অ্যালিসন। বাঁ দিক থেকে ক্রস করেছিলেন কোরিয়ার ফুটবলার। ডান দিক থেকে আর এক ফুটবলারের শট ঝাঁপিয়ে পড়ে বাঁচালেন তিনি।
৭৫ মিনিটের মাথায় এক গোল শোধ দেয় দক্ষিণ কোরিয়া। ফ্রিকিক থেকে বল ক্লিয়ার করেছিলেন ব্রাজিলের ডিফেন্ডার। সেই বল সুন্দর রিসিভ করে বাঁ পায়ের জোরালো শটে গোল পাইক সিউং হো। প্রথমার্ধে কোরিয়াকে খুঁজে পাওয়া না গেলেও দ্বিতীয়ার্ধে বরং তাঁদের খেলা অনেক বেশি ছন্দবদ্ধ। অনেক বার আক্রমণে উঠে এসেছে তারা। কপাল ভাল থাকলে আর একটা গোল পেয়ে যেতে পারত। ব্রাজিলও অনেকটা গা ছাড়া মনোভাব নিয়ে খেলে। নেমার-সহ অনেক ফুটবলারকে বদলে দেন তিতে। এমনকি, তৃতীয় গোলকিপার ওয়েভারটনকেও নামিয়ে দেন তিনি।
শেষে অসুস্থ পেলেকে বার্তি দিল ব্রাজিল দল। পেলের নাম লেখা ব্যানার নিয়ে দাঁড়ালেন ফুটবলাররা।