বৃহস্পতিবার কাতারের মাঠে বিশ্বকাপের ম্যাচ পরিচালনা করলেন মহিলা রেফারিরা। ছবি: ইমাগো
কাতারে মেয়েদের পোশাক নিয়ে নানা বিধিনিষেধ রয়েছে। বিদেশ থেকে খেলা দেখতে আসা মহিলা সমর্থকদের সতর্ক করা হয়েছে পোশাক নিয়ে। খোলামেলা পোশাক পরতে নিষেধ করা হয়েছে। সেই কাতারেই ছেলেদের ফুটবল ম্যাচ পরিচালনা করলেন মহিলা রেফারি স্টেফানি ফ্র্যাপার্ট। তাঁর সঙ্গী আরও দুই মহিলা রেফারি ক্যারেন দিয়াজ় এবং নেওজ়া ব্যাক। পরনে নীল টিশার্ট এবং কালো হাফ প্যান্ট।
জার্মানি বনাম কোস্টা রিকা ম্যাচে স্টেফানি বাঁশি বাজিয়ে খেলা শুরুর নির্দেশ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তৈরি হল ইতিহাস। পুরুষদের ফুটবল বিশ্বকাপে এই প্রথম ম্যাচ পরিচালনা করলেন কোনও মহিলা রেফারি। ফ্রান্সের ৩৮ বছরের মহিলা রেফারি স্টেফানি নজির গড়লেন। বিশ্বকাপ ফুটবলের ৯২ বছরের ইতিহাসে এমন ঘটনা কখনও ঘটেনি। পুরুষ রেফারি মহিলাদের বিশ্বকাপ ফুটবলের ম্যাচ খেলিয়েছেন। কিন্তু কোনও মহিলা রেফারি কখনও পুরুষদের বিশ্বকাপের ম্যাচ খেলাননি। যদিও মহিলা রেফারিরা এর আগে পুরুষদের ম্যাচ পরিচালনা করেছেন।
স্টেফানিই এর আগে ছেলেদের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ এবং বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বের ম্যাচ পরিচালনা করেছিলেন। এফএ কাপের ম্যাচেও দেখা গিয়েছিল মহিলা রেফারি রেবেকা ওয়েলচকে। কিন্তু ছেলেদের বিশ্বকাপে কখনও মহিলা রেফারিকে ম্যাচ পরিচালনা করতে দেখা যায়নি। সেই ঘটনাই ঘটল বৃহস্পতিবার রাতে। তা-ও আবার কাতারের মাঠে। যেখানে মহিলাদের উপর বিভিন্ন ধরনের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
২০১৯ সালের অগস্টে পুরুষদের উয়েফা সুপার কাপ, তার পরের বছর ডিসেম্বরে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ এবং ২০২২ সালের মে মাসে ফ্রেঞ্চ কাপ ফাইনাল— সবর্ত্রই প্রথম মহিলা রেফারি হিসাবে নজির গড়েছেন স্টেফানি। এ বার বিশ্বকাপের মঞ্চেও শিরোনামে তিনি। নিজের দেশের মাঠে ফরাসি ‘লিগ ১’ থেকে ইউরোপের অন্য দেশের মাঠেও পুরুষদের ম্যাচের বাঁশি ছিল স্টেফানির হাতে। সে ক্ষেত্রেও তিনিই ছিলেন প্রথম মহিলা রেফারি, যিনি পুরুষদের ম্যাচ পরিচালনা করেছিলেন। চলতি বছরে স্টেফানি পুরুষদের ফ্রেঞ্চ কাপ ফাইনাল খেলানোর দায়িত্ব সামলেছেন অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে। প্রথম মহিলা রেফারি হিসেবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের (ডিসেম্বর, ২০২০) ম্যাচ খেলানোরও কৃতিত্ব রয়েছে তাঁর। নিজেদের দেশে পুরুষদের সর্বোচ্চ ডিভিশনের বেশ কিছু ম্যাচ খেলানোর অভিজ্ঞতাও রয়েছে স্টেফানির।
কেরিয়ারে একের পর এক নজির গড়ার পর এ বার কাতারের মাঠে ইতিহাস গড়লেন স্টেফানি। ফিফা তাঁর নাম ঘোষণা করার পর স্টেফানি বলেছিলেন, ‘‘কাতারে যে পুরুষদের বিশ্বকাপে ম্যাচ খেলাতে হবে, সেটা আশাই করিনি। বিশ্বকাপের থেকে বড় কিছু তো হয় না। ফলে খুবই অনুপ্রাণিত।’’ কাতারে পুরুষদের ময়দানে নামার আগে স্টেফানিকে ঘিরে লিঙ্গসাম্যের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টিও উঠেছিল। স্টেফানি সেই বিষয়ে বলেছিলেন, ‘‘আপনি কোন লিঙ্গের মানুষ, সেটা আর প্রয়োজনীয় নয়। বরং আপনি কতটা দক্ষ, সেটাই বিবেচ্য। আমি নারীবাদীদের মুখপাত্র নই। তবে আশা করি, ফিফার এই পদক্ষেপে কিছুটা হলেও লিঙ্গসাম্যের বিষয়ে অগ্রগতি আসবে।’’
ফ্রান্সে বেড়ে ওঠা স্টেফানি রেফারি হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেন মোট ১৩ বছর বয়সে। ১৮ বছরে পা রাখার পর জাতীয় দলের অনূর্ধ্ব-১৯ প্রতিযোগিতায় ম্যাচ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছিলেন। শুরুর দিকে দেশের মাঠে পুরুষদের তৃতীয় ডিভিশনের ম্যাচের ভার সামলাতেন স্টেফানি। সেটা ছিল ২০১১ সাল। পরের বছর ফ্রান্সের (দ্বিতীয় ডিভিশন ফুটবল) লিগ ২-তে আত্মপ্রকাশ। স্টেফানিই প্রথম মহিলা রেফারি যিনি লিগ ২-তে পুরুষদের ম্যাচ পরিচালনা করেন। এর পর একে একে নানা সাফল্যের পালক তাঁর মুকুটে জুড়তে থাকে।
বৃহস্পতিবার বিশ্বকাপের ম্যাচ পরিচালনা করে সেই তালিকায় যোগ হল আরও একটি পালক, হয়তো স্টেফানির সব থেকে পছন্দের পালক। যে ম্যাচে ৪-২ গোলে জিতেও বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গেল জার্মানি, সেই অঘটনের ম্যাচেই তৈরি হল ইতিহাস।