FIFA World Cup 2022

মেসি-দক্ষতায় ভরসা নেই, লিয়োর সিদ্ধিলাভের জন্য আর্জেন্টিনায় ওঝাদের দিয়ে গণেশ পুজো!

আর্জেন্টিনায় কুসংস্কার, তুকতাক, ডাইনবিদ্যার চর্চা নতুন নয়। বহু বছর ধরেই এ সবে বিশ্বাস করেন তাঁরা। সৌদি আরবের কাছে মেসিরা হারার পর থেকে শুরু হয়েছে তুকতাক।

Advertisement
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০২২ ১৫:১৯
মেসির হাতে বিশ্বকাপ দেখতে আর্জেন্টিনায় চলছে তুকতাক।

মেসির হাতে বিশ্বকাপ দেখতে আর্জেন্টিনায় চলছে তুকতাক। ছবি: টুইটার।

লিয়োনেল মেসির হাতে বিশ্বকাপ তুলে দিতে কোমর বেঁধেছে আর্জেন্টিনার ফুটবলপ্রেমীদের একাংশ। দেশ থেকে নানা রকম কালো জাদু, তুকতাকের মাধ্যমে মেসিদের বিশ্বকাপ ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করছেন তাঁরা। আসরে নেমেছেন ডাইনি, ওঝারা। দলকে সমস্ত নেতিবাচক প্রভাব থেকে মুক্ত রাখাই লক্ষ্য তাঁদের। চলছে গণেশ পুজোও!

ক্রীড়াবিদদের মধ্যে নানা রকম কুসংস্কার থাকে। সমর্থকদের মধ্যেও কম থাকে না। আর্জেন্টিনার সমাজে কুসংস্কার, তুকতাক, ডাইনবিদ্যার চর্চা নতুন নয়। বহু বছর ধরেই তুকতাকে বিশ্বাস করেন তাঁরা। সৌদি আরবের কাছে হারের পর থেকে মেসিদের রক্ষা করতে সে সবের আশ্রয় নিয়েছেন আর্জেন্টিনার ফুটবলপ্রেমীদের একাংশ। কেউ গাছের পাতা পোড়াচ্ছেন। কেউ অন্ধকার ঘরে মোমবাতি জ্বালিয়ে রাখছেন। কেউ কাগজে প্রতিপক্ষের কোনও ফুটবলারের নাম লিখে ফ্রিজারে ঢুকিয়ে রাখছেন। খেলা শুরু হওয়ার আগে হিমায়িত কাগজের টুকরোটি পুড়িয়ে দিচ্ছেন। তাঁদের দাবি, দলের উপর থাকা সমস্ত খারাপ প্রভাব তাঁরা প্রতিপক্ষ দলের দিকে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। এ ভাবেই রক্ষা করছেন জাতীয় দলকে।

Advertisement

মাগালি মার্টিনেজ় নামে এক ওঝা মেসিদের খেলার সময় অন্ধকার ঘরে থাকছেন বাঘের চামড়ার মতো পোশাক পরে। সামনে একটি মোমবাতি জ্বালাচ্ছেন। পোড়াচ্ছেন চন্দন কাঠ। সঙ্গে থাকছে মারাদোনার ছবি এবং গণেশ মূর্তি। তিনি হিন্দু দেবতার প্রার্থনা করছেন মারাদোনার মতো মেসির সিদ্ধিলাভের লক্ষ্যে। কেউ কেউ ম্যাচের আগে ফলাফল বা গোলদাতার নাম ভবিষ্যদ্বাণী করছেন তাঁদের নিজস্ব পদ্ধতি বা বিশ্বাসের আশ্রয় নিয়ে।

মেসির ছোটবেলার কোচ আদ্রিয়ান কোরিয়া বাড়ির বসার ঘরে বসে দেখেছিলেন প্রথম ম্যাচ। সে দিন আর্জেন্টিনা হারায় পরের খেলাগুলি দেখেছেন একটা ছোট কেবিনের মতো ঘরে বসে। একাই খেলা দেখছেন তিনি। পরের সব ম্যাচ মেসিরা জেতায় ফাইনালও তিনি দেখবেন সেই এক চিলতে ঘরে বসেই। বাড়ির এক মাত্র ওই অংশে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নেই। গরমে ঘামতে ঘামতে খেলা দেখছেন কোরিয়া। ব্যবসায়ী সার্জিয়ো দুরির রেস্তোরাঁর দেওয়ালে রয়েছে মেসির ছবি, সই। সেখানে বসে খেলা দেখছেন না। রেস্তোরাঁর রান্না ঘরের এক কোণে বসে মেসিদের খেলা দেখছেন তিনি। এমন নানা কুসংস্কারের আশ্রয় নিয়েছেন আর্জেন্টিনার মানুষ।

আর্জেন্টিনা প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের কাছে হারতেই লিয়োনেল স্কালোনির দলের উপর আস্থা হারান তাঁরা। দলকে শক্তিশালী করতে এবং প্রতিপক্ষকে দুর্বল করতে শুরু করেছেন কালো জাদু। একেক জনের পদ্ধতি একেক রকম। নিজেরা একটা হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপও তৈরি করেছেন। নাম দেওয়া হয়েছে অর্জেন্টিনা অ্যাসোসিয়েশন অফ উইচেস। নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছেন। মত বিনিময় করছেন। তৈরি করা হয়েছে ফেসবুক পেজ। তিন সপ্তাহে সেই পেজে যোগ দিয়েছেন সাত লাখের বেশি সমর্থক! যোগ দিয়েছেন আর্জেন্টিনার অনেক ওঝা, জ্যোতিষীরাও। ভাগ্যবিচার থেকে তুকতাক সব কিছুই চলছে জোরকদমে। যাঁরা এ সব নিয়ে মেতেছেন, তাঁদের কেউ পরিচারিকার কাজ করেন, কেউ স্কুলশিক্ষক, কেউ বহুজাতিক সংস্থার কর্মী, কেউ কলেজপড়ুয়া। সাধারণ ভাবে তাঁদের মধ্যে কোনও মিল নেই। তবু মিল একটা আছে। এঁরা সকলেই জাদুকর। মানুষের মনোরঞ্জন করা তাঁদের পেশা নয়। মানুষের বিপদে পাশে থাকা তাঁদের নেশা। তাঁরা কালো জাদু করেন। আর্জেন্টিনাকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন করতে একজোট হয়েছেন সকলে।

আর্জেন্টিনার মানুষদের বিশ্বাস, দেবীর অভিশাপের জন্যই গত ৩৬ বছর বিশ্বকাপ জিততে পারেনি তারা। ১৯৮৬ বিশ্বকাপের আগে দিয়েগো মারাদোনার দল জুজুই প্রদেশের পাহাড়ি শহর তিলকারায় অনুশীলন করত। কথিত রয়েছে সেই শহরে রয়েছে ভার্জিন অফ কোপাকাবানা। সেই গির্জায় নাকি প্রার্থনা করেছিলেন ফুটবলাররা। বিশ্বকাপ জিতলে সেখানে ফিরে গিয়ে ধন্যবাদ জানানোর মানত নাকি করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু মেক্সিকোয় বিশ্বকাপ জেতার পর সেখানে আর যাননি কেউই। স্থানীয় মানুষের বিশ্বাস, প্রয়াত এক সন্ন্যাসিনীর জাগ্রত আত্মা সেখানে রয়েছে। তাতে রুষ্ট হন ভার্জিন অফ কোপাকাবানা। তাঁর অভিশাপের জন্যই গত ৩৬ বছর বিশ্বকাপ অধরা রয়েছে আর্জেন্টিনার। সেই অভিশাপ কাটাতে এ বার ফাইনালের আগেই আর্জেন্টিনার ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতিকে ভার্জিন অফ কোপাকাবানায় পাঠিয়েছেন কোচ লিয়োনেল স্কালোনিও।

মেসি কি পারবেন আর্জেন্টিনাকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন করতে? ফুটবল বিশ্বে এখন এটাই সব থেকে বড় প্রশ্ন। মেসি আর্জেন্টিনাকে অলিম্পিক্স সোনা, কোপা আমেরিকা, ফাইনালিসিমা জিতিয়েছেন। আর্জেন্টিনার ফুটবলপ্রেমীরা বিশ্বাস করেন দিয়েগো মারাদোনার পর মেসিই বিশ্বের সেরা ফুটবলার। পারলে তিনিই পারবেন দেশকে তৃতীয় বার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন করতে। তবু কোথাও যেন ভরসা হারাচ্ছেন তাঁরা। সব কিছু ঠিক রাখতে দেশে বসেই নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছেন মেসির বিশ্বকাপ-ভাগ্য।

আরও পড়ুন
Advertisement