এলিনা সোয়াইতোলিনার কাছে উইম্বলডনের কোয়ার্টার ফাইনালে হেরে হতাশ ইগা শিয়নটেক। ছবি: রয়টার্স
শেষ ষোলোয় পেরেছিলেন। কিন্তু কোয়ার্টার ফাইনালে প্রথম সেটে হারের পরে আর ফিরতে পারলেন না ইগা শিয়নটেক। উইম্বলডনের শেষ আট থেকেই বিদায় নিতে হল তাঁকে। বিশ্বের এক নম্বর টেনিস খেলোয়াড় শিয়নটেককে হারালেন অবাছাই এলিনা সোয়াইতোলিনা। প্রথম রাউন্ডে পাঁচ বারের উইম্বলডন চ্যাম্পিয়ন ভিনাস উইলিয়ামসকেও হারিয়েছিলেন তিনি। তিন সেটের টান টান লড়াইয়ে ইউক্রেনের প্রতিপক্ষের কাছে শিয়নটেক হারলেন ৫-৭, ৭-৬ (৭-৫), ২-৬ গেমে।
কোর্টে নামার আগে শিয়নটেক ও শ্বিতোলিনা যখন করিডরে দাঁড়িয়ে তখন দেখা গেল কথা বলছেন তাঁরা। আসলে পোল্যান্ডের খেলোয়াড় শিয়নটেক ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘর্ষ চলাকালীন প্রথম থেকেই ইউক্রেনকে সমর্থন করে আসছেন। সেটা মাঠে নামার সময় তাঁর টুপিতে ইউক্রেনের হলুদ-নীল পতাকা দেখলেই বোঝা যায়। তাই হয়তো ইউক্রেনের প্রতিপক্ষ শ্বিতোলিনার সঙ্গে কুশল বিনিময় হচ্ছিল শিয়নটেকের। কিন্তু এক বার কোর্টে নামার পরে সে সব উধাও। সেখানে প্রতিটা পয়েন্টের জন্য লড়াই করলেন তাঁরা।
অবাছাই সোয়াইতোলিনার বিরুদ্ধে প্রথম সেটের শুরুটা ভাল করেছিলেন শীর্ষ বাছাই শিয়নটেক। প্রথম গেমেই সোয়াইতোলিনার সার্ভিস ভেঙে দেন তিনি। তাতে অবশ্য ঘাবড়ে যাননি সোয়াইতোলিনা। চতুর্থ গেমে তিনিও শিয়নটেকের সার্ভিস ভাঙেন। খেলার ফল হয় ২-২। প্রতিপক্ষের সার্ভিস ভেঙে দিলেও নিজের সার্ভিস ধরে রাখতে সমস্যা হচ্ছিল সোয়াইতোলিনার। পঞ্চম গেমে আবার সোয়াইতোলিনার সার্ভিস ভেঙে ৩-২ এগিয়ে যান শিয়নটেক। পরের চারটি গেমে তাঁরা নিজেদের সার্ভিস ধরে রাখেন। ৫-৪ এগিয়ে থাকা অবস্থায় নবম গেমে সার্ভিস করছিলেন শিয়নটেক। দেখে মনে হচ্ছিল, সেই গেমেই প্রথম সেট জিতে যাবেন তিনি। কিন্তু সোয়াইতোলিনাও ছাড়ার পাত্রী নন। সেই গেমে তিনিও শিয়নটেকের সার্ভিস ভেঙে ৫-৫ করেন। পরের গেমে নিজের সার্ভিস ধরে রাখেন ইউক্রেনের খেলোয়াড়। দ্বাদশ গেমে শিয়নটেক নিজের সার্ভিস ধরে রাখতে পারলে খেলা টাইব্রেকারে গড়াত। কিন্তু পারলেন না তিনি।
প্রথম সেটে অনেক ভুল করলেন শিয়নটেক। কিছু শট এত জোরে মারতে গেলেন যে বল লাইনের বাইরে গিয়ে পড়ল। সেই ভুলের ফায়দা তুললেন শ্বিতোলিনা। প্রথম সেটে তিনটি ব্রেক পয়েন্টই কাজে লাগালেন তিনি। দ্বাদশ গেমে শিয়নটেকের সার্ভিস ভেঙে প্রথম সেট জিতে নিলেন সোয়াইতোলিনা।
শেষ ষোলোর ম্যাচেও প্রথম সেট হেরেছিলেন শিয়নটেক। পরের দুই সেট জিতে ম্যাচ জিতেছিলেন। এই ম্যাচেও সেটাই করতে হত বিশ্বের এক নম্বর তারকাকে। দ্বিতীয় সেটের তৃতীয় গেমেই সোয়াইতোলিনার সার্ভিস ভেঙে দেন শিয়নটেক। যদি সেটা সোয়াইতোলিনার ভুলেই। ৪০-১৫ পয়েন্টে এগিয়ে থাকা অবস্থায় গেম জেতার সহজ সুযোগ ফস্কান তিনি। নেটের কাছে এসে একটি বল সোজা নেটে মারেন। সেই ভুল কাজে লাগিয়ে সোয়াইতোলিনার সার্ভিস দেন শিয়নটেক। পরের দুই গেমে বেশ আত্মবিশ্বাসী দেখাচ্ছিল তাঁকে। কিন্তু ষষ্ঠ গেমে খেলায় ফেরেন সোয়াইতোলিনা। এ বার শিয়নটেকের সার্ভিস ভেঙে দেন তিনি।
খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে। সেখানেও প্রথমে ১-৪ পিছিয়ে পড়েছিলেন শিয়নটেক। দেখে মনে হচ্ছিল, এ বার বোঝহয় আর হল না। কিন্তু চ্যাম্পিয়ন খেলোয়াড়েরদের থেকে এই সময়েই সেরাটা বেরিয়ে আসে। শিয়নটেকও তাই করলেন। ১-৪ থেকে ৪-৪ করলেন। তার পরে ৫-৬ পিছিয়ে থাকা অবস্থায় পর পর দু’টি পয়েন্ট জিতে সেট নিজের নামে করলেন শিয়নটেক।
তৃতীয় সেটে শিয়নটেককে প্রথমে ধাক্কা দেন সোয়াইতোলিনা। তৃতীয় গেমে শীর্ষ বাছাইয়ের সার্ভিস ভেঙে দেন তিনি। প্রতি পয়েন্টের জন্য লড়াই হচ্ছিল। কেউ কাউকে এক ইঞ্চি জমিও ছাড়ছিলেন না। তার মধ্যেই শিয়নটেকের সার্ভিস ভেঙে সুযোগ পেয়ে যান সোয়াইতোলিনা। পরের গেমে নিজের সার্ভিস ধরে রাখেন তিনি। চাপ বাড়ছিল শিয়নটেকের উপর। তাতেই আরও ভুল করতে থাকেন তিনি। পঞ্চম গেমে আবার শিয়নটেকের সার্ভিস ভেঙে ৪-১ এগিয়ে যান সোয়াইতোলিনা। সেখান থেকে আর ফিরতে পারেননি শিয়নটেক। পরের সময়টুকু দাপট দেখালেন সোয়াইতোলিনা। বুঝিয়ে দিলেন অবাছাই হলেও সেরা খেলোয়াড়দের হারানোর ক্ষমতা রাখেন তিনি।
মঙ্গলবার মহিলাদের অপর কোয়ার্টার ফাইনালে হারতে হয়েছে চতুর্থ বাছাই জেসিকা পেগুলাকে। তিন সেটের লড়াইয়ে তাঁকে হারিয়ে দেন মার্কেটা ভন্দ্রুসোভা। প্রথম সেট জিতে যান তিনি। দ্বিতীয় সেটে ফিরে আসেন পেগুলা। তৃতীয় সেটে এক সময় ৩-১ এগিয়ে ছিলেন তিনি। কিন্তু সেখান থেকেও ম্যাচ হারতে হয় পেগুলাকে। শেষ পর্যন্ত তিন সেটের লড়াইয়ে ৪-৬, ৬-২, ৪-৬ গেমে হারেন পেগুলা। সেমিফাইনালে সোয়াইতোলিনার বিরুদ্ধে খেলবেন ভন্দ্রুসোভা।