ভারতের বিরুদ্ধে উইকেট নেওয়ার পরে উল্লাস হাসান মাহমুদের। ছবি: পিটিআই।
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে রাওয়ালপিন্ডিতে যেখানে শেষ করেছিলেন, ভারতের বিরুদ্ধে চেন্নাইয়ে সেখান থেকেই শুরু করেছেন হাসান মাহমুদ। ভারতের ব্যাটিং অর্ডারকে একাই ধসিয়ে দিয়েছেন তিনি। রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলিরা তাঁর বল খেলতে পারেননি। প্রথম ইনিংসে নজর কাড়া বাংলাদেশের পেসার এই হাসান কে?
বাংলাদেশের বয়সভিত্তিক ক্রিকেট থেকে উঠে এসেছেন হাসান। প্রথমে অনূর্ধ্ব-১৬, তার পরে অনূর্ধ্ব-১৯। সেখান থেকে জাতীয় দলে ঢোকেন। তার পরে ধীরে ধীরে নিজের জায়গা পাকা করেছেন তিনি। ২০১৭-১৮ সালে চট্টগ্রামের হয়ে জাতীয় ক্রিকেট লিগ খেলেন তিনি। সেখান থেকে সুযোগ পান বাংলাদেশের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের দলে। ২০১৮ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে ছ’টি ম্যাচে ৯ উইকেট নিয়েছিলেন হাসান। তার পরে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে ঢাকা প্লেটুনের হয়ে নজর কেড়েছিলেন এই ডানহাতি পেসার।
২০১৯ সালে সাউথ এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশের দলে জায়গা পান হাসান। শ্রীলঙ্কাকে ৭ উইকেটে হারিয়ে সোনা জেতে বাংলাদেশ। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় তাঁর। টি-টোয়েন্টি দলে সুযোগ পান তিনি। এখনও পর্যন্ত ১৮টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে ১৮টি উইকেট নিয়েছেন তিনি। পরের বছর এক দিনের দলেও অভিষেক হয় হাসানের। ২২টি ম্যাচে ৩০টি উইকেট নিয়েছেন তিনি। লাল বলের ক্রিকেটে অবশ্য চলতি বছরই অভিষেক হয়েছে হাসানের।
চলতি বছর মার্চ মাসে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজ় ছিল বাংলাদেশের। সেখানেই অভিষেক হয় তাঁর। প্রথম ইনিংসে ৬৫ রান দিয়ে ৪ উইকেট নেন তিনি। দু’ইনিংস মিলিয়ে নেন ৬টি উইকেট। তার জেরেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজ়ে জায়গা পান তিনি। সেখানে দু’টি টেস্টে নেন ৮টি উইকেট। দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ৫ উইকেট নেন হাসান। তাঁর দাপটেই চুনকাম করে পাকিস্তানকে হারায় বাংলাদেশ।
তিন টেস্টে ১৪ উইকেট ঝুলিতে নিয়ে ভারতে এসেছেন হাসান। চেন্নাইয়ে প্রথম দিনই বুঝিয়ে দিয়েছেন কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারেন ২৪ বছর বয়সি এই বোলার। আবহাওয়া পেসারদের সুবিধা দিচ্ছিল। তা কাজে লাগান তিনি। অভিজ্ঞ তাসকিন আহমেদ রান দিলেও হাসানকে খেলতে পারেনি ভারতের টপ ও মিডল অর্ডার।
হাসানের সবচেয়ে বড় শক্তি একই লাইন ও লেংথে দীর্ঘ স্পেল করা। তাঁর বলে গতি রয়েছে। প্রত্যেক ব্যাটারের বিরুদ্ধে যে তিনি পরিকল্পনা করে নেমেছেন তা আউট হওয়ার ধরনে বোঝা গিয়েছে। রোহিত ও বিরাট অফ স্টাম্পের বাইরের বলে খোঁচা মারতে গিয়ে আউট হয়েছেন। শুভমন আবার লেগ স্টাম্পের বল ফাইন লেগে খেলচে গিয়ে আউট হয়ে ফিরেছেন। তিন উইকেট পড়ার পরে যশস্বী জয়সওয়াল ও ঋষভ পন্থের মধ্যে যখন জুটি হচ্ছে তখনও হাসানের হাতে বল তুলে দেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। অফ স্টাম্পের বাইরের বলে পন্থকে আউট করেন হাসান।
প্রথম দিন চা বিরতি পর্যন্ত ভারতের যে ৬টি উইকেট পড়েছে তার মধ্যে ৪টিই নিয়েছেন হাসান। বল একটু পুরনো হওয়ার পরে হয়তো তাঁর বলে অতটা সমস্যা ব্যাটারদের হচ্ছে না। কিন্তু প্রথম দিনই ২৪ বছরের হাসান বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি লম্বা রেসের ঘোড়া।