হার্দিক পাণ্ড্য। — ফাইল চিত্র।
হাতে মালমশলা মজুত নেই। তা সত্ত্বেও ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টি সিরিজ়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে গিয়েছিল ভারত। ফল যা হওয়ার তাই হল। আমেরিকা থেকে ক্যারিবিয়ানদের বিরুদ্ধে সিরিজ় হেরেই ফিরতে হচ্ছে হার্দিক পাণ্ড্যদের। প্রথম দু’টি ম্যাচে হারার পর সিরিজ়ে সমতা ফেরালেও রবিবার নির্ণায়ক ম্যাচে হারল ভারত। প্রথমে ব্যাট করে ভারতের তোলা ১৬৫-৯ রান ৮ উইকেট বাকি থাকতেই তুলে দিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ়। অপরাজিত ৮৫ রান করে নায়ক ব্রেন্ডন কিং। ভাল খেললেন নিকোলাস পুরানও। ভারতের কোনও বোলার দাগ কাটতে পারলেন না। ব্যর্থ সূর্যকুমার যাদবের অর্ধশতরান। ছয় মেরে দলকে জেতালেন শে হোপ।
পরের বছরের বিশ্বকাপের কথা মাথায় রেখে খেলতে নেমেছিল ভারত। কিন্তু সিরিজ়ের ফলাফল বোঝাল, এখনও অনেকটা পথ হাঁটা বাকি। ওয়েস্ট ইন্ডিজ় বাকি ফরম্যাটগুলিতে টেক্কা দিতে না পারলেও টি-টোয়েন্টিতে এখনও যে কোনও দলের বিরুদ্ধে লড়াই দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। দেশের সেরা ব্যাটাররাই ভারতের বিরুদ্ধে খেলেছিলেন। তাঁরাই জেতালেন সিরিজ়। ব্যাটিং, বোলিং দুই বিভাগেই ব্যর্থ ভারত।
টসে জিতে আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন হার্দিক। যুক্তি দিয়েছিলেন, আগে ব্যাট করে নিজেদের চ্যালেঞ্জ করতে চান তাঁরা। কিন্তু ফ্লোরিডার মাঠে দু’দিনের ব্যবধানে ভারতের শুরুটা হল দু’রকম। শনিবার যদি ফ্লোরিডার মাঠে ওপেনারদের দাপট দেখা যায়, তা হলে রবিবার দুই ওপেনার ফিরে গেলেন ১৭ রানের মধ্যেই। প্রথম ওভারেই আউট হন যশস্বী জয়সওয়াল। দ্বিতীয় বলে চার মেরে শুরুটা ভালই করেছিলেন। কিন্তু চতুর্থ বলেই আকিল হোসেনকে মারতে গিয়ে তাঁর হাতেই ক্যাচ তুলে দিলেন।
শুভমন গিলও খেলতে পারলেন না। ব্যাটে-বলে সংযোগ হচ্ছে না বুঝতে পেরেও অকারণে হাঁটু মুড়ে সুইপ করতে গেলেন। হোসেনের সোজা বল এসে লাগল তাঁর প্যাডে। দুই ওপেনারকে হারিয়ে তখন কিছুটা চাপেই পড়ে গিয়েছিল ভারত। সেই চাপ কাটিয়ে দেন সূর্যকুমার যাদব এবং তিলক বর্মা।
টি-টোয়েন্টিতে সূর্যকুমারকে নিয়ে এমনিতেই কোনও প্রশ্ন নেই। কিন্তু সুযোগ পেয়ে আবার নিজেকে মেলে ধরলেন তিলক বর্মা। যে ভাবে তিনি সূর্যকুমারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে একের পর এক শট খেললেন, তা প্রশংসনীয়। দুই ব্যাটারের দাপটে ভারতের রানের গতি তরতর করে এগোতে লাগল। সূর্যের থেকে বেশি মারমুখী ছিলেন তিলকই। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ভাবে আউট হলেন তিনি। রস্টন চেজের গুড লেংথ বল ব্যাটের একটু আগে পড়েছিল। স্লোয়ার বল ঠিক করে বুঝতে পারেননি তিলক। সোজা ড্রাইভ করতে গিয়েছিলেন। ডান দিকে অনেকটা ঝাঁপিয়ে পড়ে ভাল ক্যাচ নেন চেজ।
পাঁচে নামা সঞ্জুর কাছে সুযোগ ছিল মঞ্চটা কাজে লাগানোর। কিন্তু আবারও ব্যর্থ কেরলের এই ব্যাটার। তাঁকে ভারতীয় দলে না নেওয়া হলে সমালোচনা, মিমের বন্যা বয়ে যায়। কিন্তু সুযোগ পেয়ে কেরলের ক্রিকেটার ক’টি কাজে লাগাতে পেরেছেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। এ দিনও শুরুটা ভাল হয়েছিল। সূর্যকুমারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ইনিংস এগিয়ে নিয়ে যেতে পারলে আরও বেশি রান উঠতে পারত ভারতের। সঞ্জু হেলায় সেই সুযোগ নষ্ট করলেন। রোমারিয়ো শেফার্ডের স্লোয়ারে সহজ ক্যাচ দিলেন উইকেটকিপার নিকোলাস পুরানের হাতে।
হার্দিক পাণ্ড্যের শুরুটা ভাল হয়নি। উল্টো দিকে সূর্য চালিয়ে খেলতে থাকায় হার্দিকের ধীরগতির ইনিংস অতটা চোখেও পড়ছিল না। ১৮ বলে ১৪ করে ফেরেন তিনি। এর পর সূর্য আউট হতেই তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে ভারতের ইনিংস। মাঝে দু’বার অল্প সময়ের জন্যে বৃষ্টি এসে খেলা থামিয়েছে। কিন্তু ভারতের ভাগ্য তাতে ফেরেনি। ১৬৫ রানেই আটকে যায় তাদের ইনিংস।
বল হাতে অবশ্য শুরুটা খারাপ হয়নি ভারতের। দ্বিতীয় ওভারেই মারমুখী কাইল মেয়ার্সকে তুলে নেন আরশদীপ সিংহ। কিন্তু দ্বিতীয় উইকেটে চালিয়ে খেলতে থাকেন ব্রেন্ডন কিং এবং পুরান। ওখানেই ম্যাচ বেরিয়ে যায় ভারতের হাত থেকে। একমাত্র কুলদীপ যাদব রানের গতি কিছুটা থামান। তাঁকে খেলতে গিয়ে সমস্যা পড়েন ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের দুই ক্রিকেটার। ভারতের আর কোনও বোলারকে খেলতে সমস্যা হয়নি। ছয় মেরে নিজের অর্ধশতরান পূরণ করেন কিং।
লক্ষ্যমাত্রার যখন আর ৫১ রান বাকি, তখনই বৃষ্টি এসে বন্ধ করে খেলা। বৃষ্টির গতিবেগ ছিল না। কিন্তু মাঠের প্রচণ্ড বিদ্যুৎ চমকাচ্ছিল। ফলে আম্পায়াররা খেলা শুরু করতে চাইছিলেন না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর খেলা শুরু হয়। তার পরেই চমকে দেন হার্দিক। বল করতে আনেন তিলক বর্মাকে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তো বটেই, আইপিএলেও আগে বল করেননি তিলক। কিন্তু এ দিন প্রথম বলে প্রায় আউট করে ফেলেছিলেন পুরানকে। অল্পের জন্যে সে যাত্রায় বেঁচে গেলেও পরের বলে ফিরে যান পুরান। রিভার্স সুইপ করতে গিয়েছিলেন। বল ব্যাটে লাগায় ডিআরএসে এলবিডব্লিউ হয়নি। কিন্তু লেগ স্লিপে দাঁড়ানো হার্দিক ক্যাচ নেওয়ায় আউট হন পুরান।
পরের দিকে আরও একটি উইকেট পেতে পারতেন। নিজের বোলিংয়ে কিংয়ের সহজ ক্যাচ ফেলে দেন তিলক। শেষ দিকে আরও একটি চমক দেন হার্দিক। বল করান যশস্বীকে দিয়েও। তত ক্ষণে ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের পকেটে চলে গিয়েছিল ম্যাচ।