একাগ্র: প্রস্তুতি বিরাটের। তাঁর দিকে নজর গাওয়ারেরও। টুইটার
তাঁর নাম উঠলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে শিল্পীর তুলিতে আঁকা সব কভার ড্রাইভ। এজবাস্টন টেস্টের আগে ইংল্যান্ড থেকে ভিডিয়ো কলে পাওয়া গেল সেই কিংবদন্তি বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান ডেভিড গাওয়ারকে। সোনি নেটওয়ার্কের অন্যতম ধারাভাষ্যকার, ইংল্যান্ডের প্রাক্তন অধিনায়ক যা যা বললেন...
ভারতীয় বোলিং শক্তি: যখন সত্তর-আশির দশকে ভারতের বিরুদ্ধে খেলেছি, তখন ওদের মূল শক্তি ছিল স্পিন। বিষাণ সিংহ বেদী, বেঙ্কটরাঘবন, ভগবৎ চন্দ্রশেখররা ছিল কিংবদন্তি স্পিনার। তবে ভারত তখন কপিল দেবকেও পেয়েছিল। বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। দারুণ বোলারও ছিল।
ভারতের পেস আক্রমণ: ভারত এখন বেশ কয়েক জন অত্যন্ত দ্রুতগতির দক্ষতাসম্পন্ন পেস বোলারকে পেয়েছে। এই এজবাস্টন টেস্টের কথাই ধরুন না। ভারতের হাতে অন্তত পাঁচ জন বোলার আছে যারা সিম বোলিংটা খুব ভাল করে। ওদের গতিও খুব ভাল। এটাই ভারতীয় ক্রিকেটের একটা বড় পরিবর্তন। যা ওদের শক্তিশালী করে তুলেছে। বিশেষ করে বিদেশের মাঠে। অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডের মতো দেশে গেলে এই সব বোলারের জন্যই ভারত এগিয়ে থাকবে। তাই বলতেই হবে যে, ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাসে এটাই সেরা পেস আক্রমণ।
ছন্দহীন কোহলি: সেরাটা দেওয়ার জন্য বিরাট আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। বিরাট যে মাণদণ্ড তৈরি করেছে, তার নিরিখে একটু হয়তো খারাপ ফর্মের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। অনেক বছর ধরে অবিস্মরণীয় ক্রিকেট খেলে এসেছে বিরাট। কখনও কখনও এই রকম একটা সময় আসতে বাধ্য।
কোহলির ভবিষ্যৎ: অনেক বছর আগের কথা মনে পড়ছে। সালটা মনে নেই। ভারত-ইংল্যান্ড সিরিজ়ের ধারাভাষ্য দিতে ভারতে গিয়েছিলাম। তখন সচিনকে নিয়েও ও রকম কথা হচ্ছিল। অনেক দিন সেঞ্চুরি পায়নি। লোকে বলা শুরু করেছিল, ওর চোখ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, ফুটওয়ার্ক আগের মতো নেই। তার পরে কী হল? আরও ১০ বছর চুটিয়ে ক্রিকেট খেলে গেল সচিন। বিরাটও হয়তো বছর আড়াই হয়ে গেল সেঞ্চুরি পায়নি। কিন্তু কখনওই বলব না যে, বিরাটের দক্ষতায় মরচে ধরেছে। আমি নিশ্চিত, হয় একটা মুহূর্ত, নয় ঘণ্টা দু’য়েকের ব্যাটিং বিরাটকে স্বমহিমায় ফিরিয়ে দেবে। তবে বিরাটের পক্ষে কাজটা একটু শক্ত হবে, কারণ ও কিছু দিন লাল বলের ক্রিকেটের বাইরে আছে।
কোহলিকে পরামর্শ: বিরাটের জায়গায় থাকলে আমি পিছনে ফিরে নিজের কেরিয়ারের সোনার মুহূর্তগুলো দেখতাম। কী ভাবে সাফল্য এসেছে, দেখতাম। এই এজবাস্টন টেস্টে নামার আগে মাথায় রাখতাম, এই প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে এই মাঠে আগের ম্যাচে কী করেছি। আমার স্মৃতি যদি ঠিক থাকে, শেষ এজবাস্টন টেস্টে বিরাট ১৪০ (১৪৯) রানের অসাধারণ একটা ইনিংস খেলেছিল। বিরাট সেই ইনিংসটাকে মাথায় রেখে এই টেস্টটা খেলতে নামুক। এতে ওর আত্মবিশ্বাস বেড়ে যাবে। যে মাঠে এক জন ক্রিকেটার সফল হয়, সেখানে খেলতে নামাটা একটা সুবিধে।
রুট না কোহলি: এজবাস্টন টেস্টের আগে বলতেই হবে, দু’জনের মধ্যে জো রুটই এগিয়ে থাকবে ম্যাচ ঘোরানো ইনিংস খেলার ব্যাপারে। রুট ইংল্যান্ডের জাতীয় সম্পত্তি। ওর প্রচুর ভক্ত। আমাদের দেশের সব মা মনে করেন, রুটের বয়স এখনও ১২! রুট বার বার প্রমাণ করেছে ও কত বড় ক্রিকেটার। কোন ধাতু দিয়ে গড়া। নেতৃত্ব ছেড়ে দেওয়ায় আর একটু খোলা মনে খেলতে পারছে। বিরাটের মতো রুটও ব্যাটিং করে যেতে ভালবাসে। দু’জনেই শ্রেষ্ঠত্বের নিরিখে একেবারে উপরের দিকে আছে। কিন্তু গত ১২ মাসের ফর্মের দিক থেকে রুটই এগিয়ে থাকবে টেস্টের উপরে প্রভাব ফেলার ব্যাপারে।
ইংল্যান্ডকে থামানোর মন্ত্র: ভারতের একটা সুবিধে যে ওরা দেখছে, ইংল্যান্ড কী করতে পারে। তাই সে ভাবে পরিকল্পনা করতে হবে। বিধ্বংসী মেজাজে ব্যাট করছে জনি বেয়ারস্টো। এই মেজাজ আর ছন্দটা ভারতের বিরুদ্ধে ধরে রাখতে চাইবে ও। তাই বেয়ারস্টোর জন্য আলাদা পরিকল্পনা চাই। তবে কয়েকটা ব্যাপার ক্রিকেটের ক্ষেত্রে চিরসত্য। যেমন, নিজের শক্তি অনুযায়ী খেলতে হবে। এক জন ক্রিকেটার মানসিক ভাবে কতটা শক্তিশালী, একটা দলের মধ্যে জেতার কতটা উদগ্র বাসনা আছে, সে সবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। ওদের নিজেদের বলতে হবে, আমাদের সামনে পাঁচটা দিন আছে। চলো, এই পাঁচটা দিনে নিজেদের সেরাটা দিই।
নিজের খেলা সেরা বোলার: আমার ১৫ বছরের ক্রিকেট জীবনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের চার ফাস্ট বোলারের বিরুদ্ধে ব্যাট করা সবচেয়ে বড় পরীক্ষা ছিল। আর এদের মধ্যে থেকে আমি সেরা বেছে নেব ম্যালকম মার্শালকে। ধুরন্ধর বোলার। দারুণ গতি, ভাল সুইং করাতে পারত। বলের গতি পরিবর্তন করতে পারত, লেংথ বদলে নিতে পারত। বিশ্বের যে কোনও জায়গায় মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা ছিল।
এই মুহূর্তে কে সেরা: খুবই কঠিন প্রশ্ন। অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তান, ইংল্যান্ড, ভারত— সবাই আছে। তাই একটা কথাই বলব। এজবাস্টন টেস্টে আমি দুই সেরা বোলার— যশপ্রীত বুমরা বনাম জিমি অ্যান্ডারসনের দ্বৈরথটা দেখার অপেক্ষায় আছি।