সফল: ২৪ রানে পাঁচ উইকেট বরুণের। আগ্রাসী অর্ধশতরান ডাকেটের। মঙ্গলবার রাজকোটে। ছবি: পিটিআই।
রাজকোটের নীরঞ্জন শাহ স্টেডিয়ামের পিচ যে কোনও বোলারের কাছে আতঙ্কের মঞ্চ। ভারতীয় ক্রিকেটে একটা কথার প্রচলন আছে, ‘‘ব্যর্থতা কাটাতে, ম্যাচ খেলো রাজকোটে।’’ ভারত-ইংল্যান্ড তৃতীয় টি-টোয়েন্টি শুরু হওয়ার আগে ধারাভাষ্যকার পার্থিব পটেলই এই উক্তি তুলে ধরেন। সেই বাইশ গজে চার ওভারে মাত্র ২৪ রান দিয়ে পাঁচ উইকেট সি ভি বরুণের।
২০২১-এর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাবর আজ়ম ও মহম্মদ রিজ়ওয়ানের বিধ্বংসী ইনিংস রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছিল তাঁর। ভেবেছিলেন, ভারতীয় দলে আর কোনও দিন সুযোগ পাবেন না। তাঁর আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সাহায্য করেন সুনীল নারাইন। কলকাতা নাইট রাইডার্সে ক্যারিবিয়ান বিস্ময় স্পিনারের সঙ্গে বরুণ ছ’বছর কাটিয়েছেন। নারাইন তাঁকে শিখিয়েছেন, কী ভাবে ধৈর্য ধরে নিজের কাজ করে যেতে হয়। গত বছর নাইটদের চ্যাম্পিয়ন করার নেপথ্যে বড় অবদান ছিল বরুণের। ১৫ ম্যাচে পেয়েছিলেন ২১ উইকেট। যা নাইট শিবিরে সর্বোচ্চ।
কেকেআর কোচ চন্দ্রকান্ত পণ্ডিত ফোনে আনন্দবাজারকে বলছিলেন, ‘‘নারাইনের উপস্থিতি অনেক সাহায্য করেছে বরুণকে। ভারতীয় দল থেকে বাদ পড়ার পরে ও খুব ভেঙে পড়েছিল। নারাইন ওকে বুঝিয়েছিল, ধৈর্য ধরলে আবারও ভারতীয় দলে ফিরে আসা সম্ভব।’’ যোগ করেন, ‘‘নিজেকে অনুশীলনে একেবারে ডুবিয়ে দিত বরুণ। কী ভাবে বৈচিত্র আরও বাড়ানো যায়, সেই দিকে মনোনিবেশ করত। ভিডিয়ো অ্যানালিস্টের সঙ্গে বসে খুঁজত, কোন ব্যাটসম্যানের কোথায় সমস্যা। ধীরে ধীরে গুগলির উপরে অনেক বেশি জোর দেয়। পাশাপাশি ব্যাটসম্যানকে চমক দিতে সিম-আপ ডেলিভারিও করে দেয়। বাটলার যে বলে আউট হল, সেটা তো সিম-আপ ডেলিভারি ছিল।’’
চন্দ্রকান্ত মনে করেন, বরুণের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সাহায্য করেছেন নারাইন। বলছিলেন, ‘‘ও দলের অনেক সিনিয়র ক্রিকেটার। বরুণকে নিজের ভাইয়ের মতো ভালবাসে। ওর আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর নেপথ্যে নারাইনের প্রচুর অবদান আছে। গত বার দলকে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার নেপথ্যে অন্যতম কারিগর ছিল বরুণ। ও ভয়ডরহীন হয়ে গিয়েছে। কেউ ছক্কা হাঁকালে ভয় পায় না। কী ভাবে উইকেট আসবে, সেই উপায় খুঁজতে থাকে।’’
তামিলনাড়ুর বর্তমান কোচ লক্ষ্মীপতি বালাজি জানিয়েছেন, লাল বল ছুঁয়েও দেখেন না বরুণ। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে সাদা বলের প্রতিযোগিতা খেলতে চলে যান। বালাজির কথায়, ‘‘ও কখনও লাল বল হাতে নেয় না। ও জানে, সাদা বলের ক্রিকেটই ওর ভবিষ্যৎ। নিজেকে উন্নত করার জন্য তামিলনাড়ুর বিভিন্ন জেলায় প্রতিযোগিতা খেলতে যায়। টিএনপিএল-এ ডিন্ডিগুল ড্র্যাগন্সের হয়ে খেলেছে। ডিওয়াই পাটিল টি-টোয়েন্টি লিগেও খেলেছে। সফল হতে হতেই ওর আত্মবিশ্বাস বেড়েছে।’’ যোগ করেন, ‘‘ব্যাটসম্যানের শরীরের বাইরে কখনও বল করে না। আজ একটা বলেও ব্যাটসম্যানকে হাত খুলতে দেয়নি। যা ওকে আরও ভয়ঙ্কর করে তুলেছে।’’
বরুণের ব্যক্তিগত কোচ এ সি প্রতিভান জানালেন, পিচের উপরে রুমাল রেখে অথবা একটি স্টাম্প পুঁতে ক্রমাগত অনুশীলন করেন বরুণ। তাঁর কথায়, ‘‘ম্যাচের পরিস্থিতি তৈরি করে একটি স্টাম্প রেখে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বল করে। ও ক্লান্ত হয় না। টানা তিন ঘণ্টাও বল করতে পারে। পরিশ্রম করার ক্ষমতা ও বিস্ময় বোলিংই ওকে এই জায়গায় পৌঁছে দিয়েছে।’’