গ্রেটার নয়ডার মাঠ। ছবি: পিটিআই।
মাঠের দিকে তাকালেই বুকটা ছ্যাঁৎ করে উঠবে। ভেজা আউটফিল্ড শুকনো করার ব্যবস্থা নেই, পর্যাপ্ত মাঠকর্মী নেই আর সেই সঙ্গে মেঘলা আকাশ। গ্রেটার নয়ডায় আফগানিস্তান বনাম নিউ জ়িল্যান্ড টেস্ট হওয়া নিয়ে আশঙ্কা ছিল। শুক্রবার সকালে ম্যাচটি বাতিল করে দেওয়া হয়। একটি বলও খেলা হল না সেই টেস্টে। ৯১ বছরে প্রথম বার ভারতের মাটিতে কোনও টেস্টে এক বলও খেলা না হয়ে বাতিল হয়ে গেল।
শেষ বার কোনও বল না হয়ে টেস্ট বাতিল হয়েছিল ১৯৯৮ সালে। ২৬ বছর পর ক্রিকেটে আবার এমন ঘটনা ঘটল। তবে ভারত এবং এশিয়ায় এই প্রথম বার কোনও টেস্ট বাতিল হয়ে গেল একটিও বল খেলা না হয়ে।
প্রথম বার নিউ জ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট খেলার কথা ছিল আফগানিস্তানের। অন্য দিকে, শ্রীলঙ্কা এবং ভারতের বিরুদ্ধে উপমহাদেশে খেলার আগে এই ম্যাচ কিউইদের জন্য ছিল প্রস্তুতি পর্ব। কিন্তু সেই ম্যাচ খেলাই হল না। রবিবার বৃষ্টি হয়েছিল। সোম এবং মঙ্গলবার বৃষ্টি না হলেও মাঠ শুকনো করা সম্ভব হয়নি। বুধবার আবার বৃষ্টি হয়। ফলে ম্যাচ শুরু করা যে সম্ভব হবে না, তা এক প্রকার আন্দাজ করা গিয়েছিল। টেস্টের শেষ দিন ছিল শুক্রবার। সেই দিন ঘোষণা করা দেওয়া হল যে ম্যাচ বাতিল।
নিউ জ়িল্যান্ডের হয়ে খেলতে এসেছিলেন কেন উইলিয়ামসন। আইপিএল খেলতে নেমে তাঁর হাঁটুতে চোট লেগেছিল। যে চোট তাঁকে ক্রিকেট থেকে বেশি কিছু মাসের জন্য দূরে রেখেছিল। সেই উইলিয়ামসন সোমবার গ্রেটার নয়ডার মাঠ পরীক্ষা করছিলেন। মাথা নিচু, ছোট ছোট পায়ে এগোচ্ছেন এবং দেখছেন মাঠ কতটা ভেজা। অনুশীলনে আফগানিস্তানের ব্যাটার ইব্রাহিম জাদরান পা পিছলে পড়ে যান। তাঁর সেই চোট এই না হওয়া টেস্ট থেকে তো বটেই জাদরানকে আগামী দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ় থেকেও ছিটকে দিয়েছে। এমন অবস্থায় আরও সাবধানি উইলিয়ামসন।
মাঠের পূর্ব দিকে বেশ কিছু জায়গায় জল জমে ছিল। সেই দিকেই গিয়েছিলেন উইলিয়ামসন। দেখছিলেন কী ভাবে ভেজা ঘাসের চাঙর তুলে অনুশীলন মাঠের ঘাস বসিয়ে দেওয়া হচ্ছিল। সেই সঙ্গে মাঠের অন্য দিকে কাজ করছিল তিনটি পাখা। মাঠ শুকনো করার অভিনব অব্যবস্থা দেখাল নয়ডা। সবচেয়ে চিন্তার কারণ ছিল মাঠকর্মীদের অক্ষমতা। বৃষ্টি না হওয়া সত্ত্বেও দু’দিনে মাঠ খেলার যোগ্য করতে পারলেন না তাঁরা। এতটাই খারাপ অবস্থা ছিল মাঠের, যে টস পর্যন্ত করা সম্ভব হয়নি।
আফগানিস্তান-নিউ জ়িল্যান্ড টেস্ট না হওয়ার জন্য একটি কারণ অবশ্যই বৃষ্টি। কিন্তু সেটা একমাত্র কারণ নয়। বিশেষ করে প্রথম দু’দিন তো বৃষ্টি হয়নি। তা সত্ত্বেও খেলা শুরু করা যায়নি। মাঠের নিকাশি ব্যবস্থা খারাপ, গোটা মাঠ ঢাকার ব্যবস্থা নেই, সেই সঙ্গে আউটফিল্ডে ঘাসের নীচে কাদা। রবিবার যে জায়গায় দাঁড়িয়ে দুই অধিনায়ক টিম সাউদি এবং হসমতুল্লা শাহিদি ট্রফির সঙ্গে ছবি তুলেছিলেন, সোমবার সেখানটাই খুঁড়ে ফেলা হয়েছিল বৃষ্টির জল শোকানোর জন্য।
চতুর্থ দিনে দেখা যায় গোটা মাঠ ঢেকে ফেলা হয়েছিল। দিল্লি ক্রিকেট সংস্থার পক্ষ থেকে সাহায্য করা হয়েছিল। আস্তরন পাঠানো হয়েছিল তাদের তরফে। কিন্তু তত দিনে যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে গিয়েছে। মিরাট থেকে নিয়ে আসা হয়েছিল সুপারসপার। নয়ডার ৮-১০ মাঠকর্মী বেড়ে হয়েছিল ২০ জন। কিন্তু এই বাড়তি কর্মীদের মাঠ সম্পর্কে কোনও ধারণা ছিল না। তাঁরা এই কাজের যোগ্যই ছিলেন না। সেই সব অনভিজ্ঞ কর্মীদের বাইরে থেকে নিয়ে আসা হয়েছিল।
আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড নয়ডার মাঠটিকে বেছে নিয়েছিল নিজেদের ঘরের মাঠ হিসাবে। কিন্তু নয়াদিল্লির বিমানবন্দর থেকে নয়ডার মাঠটি মাত্র দু’ঘণ্টা দূরত্বে অবস্থিত। সেই কারণে এই মাঠটিকে বেছে নেয় আফগানিস্তান। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড তাদের কানপুর এবং বেঙ্গালুরুর মাঠে টেস্ট আয়োজনের কথা বলেছিল। কিন্তু আফগান বোর্ড বেছে নেয় গ্রেটার নয়ডাকে।