T20 World Cup 2022

ভারতের হারে কেন আইপিএলকে নিশানা

পাকিস্তান সুপার লিগ বা ইংল্যান্ডের ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি লিগ ওদের দেশকে নিয়মিত চ্যাম্পিয়ন করে না। যদিও, রবিবার, এই দু’দলের মধ্যে একটা দল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হবে।

Advertisement
সুনীল গাওস্কর
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০২২ ০৮:৪০
হতাশ রোহিত ও দ্রাবিড়।

হতাশ রোহিত ও দ্রাবিড়। — ফাইল চিত্র।

খেলায় হার-জিত থাকবেই। কিন্তু ভারতের বিপর্যয়ের পরে যথারীতি ক্রিকেটভক্তরা কাউকে কাউকে ছেঁটে ফেলার দাবি তুলতে শুরু করেছে।

এখন কিন্তু হঠাৎ করে খুব কড়া সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় নয়। যে কোনও জয়ই সব সময় খুঁত ঢেকে দেয়। সে রকমই একটা হারের পরে কিছু খেলোয়াড়কে বাদ দেওয়ার দাবি ওঠে। বিশেষ করে সেই খেলোয়াড় যদি দলের সিনিয়র হয় এবং প্রত্যাশা মতো খেলতে না পারে। জানি, টি-টোয়েন্টি তরুণদের খেলা। কিন্তু মাথায় রাখতে হবে, একটা দলের প্রয়োজন তরুণ এবং অভিজ্ঞতার সঠিক মিশ্রণ।

Advertisement

সেই ২০০৭ সালে, প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। যখন তৎকালীন টেস্ট দলের অধিনায়ক রাহুল দ্রাবিড়, সচিন তেন্ডুলকর, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, অনিল কুম্বলে, ভিভিএস লক্ষ্মণরা নিজেদের ওই বিশ্বকাপ থেকে সরিয়ে নিয়েছিল। যার ফলে নির্বাচকরা একটা তরুণ দল বেছে নিতে পেরেছিল। যারা আর কিছু না হোক, মাঠে যে বাঘের মতো ফিল্ডিং করবে, এটা বোঝা গিয়েছিল। এই ফর্ম্যাটে ফিল্ডিং হল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর এ বারের বিশ্বকাপে ভারতীয় দলে বেশ কয়েক জন অত্যন্ত সাধারণ মানের ফিল্ডার ছিল।

একটা প্রশ্ন ভারতীয় দলকে নিয়ে উঠছে। যে দেশে বিশ্বের সেরা এবং আকর্ষণীয় টি-টোয়েন্টি লিগ হয়, সে দেশ কেন বহুদেশীয়প্রতিযোগিতা জিততে পারে না! অনেকে পরামর্শ দিয়েছে, যাতে ভারতীয় ক্রিকেটারদের বিশ্বের বিভিন্ন লিগে খেলতে দেওয়া হয়। এতে করে ওদের অভিজ্ঞতা বাড়বে। এর জবাব খুব সহজ। ইংল্যান্ডে তো বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত ফুটবল লিগ চলে। ইপিএল। কিন্তু ওরা শেষ কবে বিশ্বকাপ বা ইউরো জিততে পেরেছে? ইংল্যান্ডের ফুটবলাররা তো বিশ্বের বিভিন্ন লিগেও খেলে বেড়ায়। তাই একটা দেশে সেরা লিগ চলে কি না বা তাদের খেলোয়াড়রা বিভিন্ন দেশের প্রতিযোগিতায় খেলে বেড়ায় কি না, এ সব মোটেই বহুদেশীয় প্রতিযোগিতা জয় নিশ্চিত করতে পারে না।

অস্ট্রেলিয়াতেও তো বিগ ব্যাশ ক্রিকেট লিগ চলে। তা সত্ত্বেও ওরা গত বছরে প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতল। আর পাকিস্তান সুপার লিগ বা ইংল্যান্ডের ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি লিগ ওদের দেশকে নিয়মিত চ্যাম্পিয়ন করে না। যদিও, রবিবার, এই দু’দলের মধ্যে একটা দল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হবে। অবশ্য মেলবোর্নের আবহাওয়া যদি ঠিকঠাক থাকে।

আর একটা কথা বলব। ওয়েস্ট ইন্ডিজ, অস্ট্রেলিয়া, শ্রীলঙ্কা, নিউজ়িল্যান্ড এবং আরও কয়েকটা দেশের ক্রিকেটাররা তো আইপিএলে খেলে। ওরা তো ফাইনাল খেলছে না, তাই নয়! তাই ভারতের হারের জন্য আইপিএলকে কাঠগড়ায় তোলার কোনও অর্থ নেই। আইপিএল হল বিশ্বের সেরা ক্রিকেট লিগ। আর একে বিশ্বসেরা রাখতে গেলে একটা জিনিস সুনিশ্চিত করতেই হবে। ভারতীয় ক্রিকেটারদের আর কোনও লিগে খেলতে দিলে চলবে না। বিশেষ করে যখন ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেট মরসুম চলে। আর যদি ভারতীয় ক্রিকেটাররা বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন লিগে খেলে বেড়ায়, তখন ওদের পরিশ্রমেরমাত্রার কী হবে?

ইংল্যান্ডের কাছে ভারতের হারের কারণ শুধু বোলারদের ব্যর্থতাই নয়। শেষ পাঁচ ওভার ছাড়া ভারতের ব্যাটসম্যানদেরও ঘুম ভাঙেনি। হার্দিক পাণ্ড্য ও রকম একটা দুর্দান্ত ইনিংস খেলতে না পারলে ভারত হয়তো ১৫০ রানও করতে পারত না। হারের নেপথ্যে এটাই সেরা ক্রিকেটীয় যুক্তি। এই ব্যাপারটা বিশ্বের সেরা ক্রিকেট দলের সঙ্গেও যে কোনও দিন ঘটতে পারত। এই বিশ্বকাপেই তো আমরা দেখেছি কী ভাবে আয়ারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডসের মতো দলগুলো ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে দিচ্ছে। এটাই তো টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট। যে কোনও দলই জিততে পারে। হ্যাঁ, ভারত হেরেছে। আর তার কারণ হল, ওই দিন ইংল্যান্ড ভারতের থেকে অনেক ভাল খেলেছে। (টিসিএম)

আরও পড়ুন
Advertisement