ধ্রুব জুরেল (বাঁ দিকে) ও শুভমন গিল। এই জুটিই জেতাল ভারতকে। —ফাইল চিত্র।
রাঁচীর উইকেটের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের এখনকার আবহাওয়ার বিশেষ কোনও ফারাক নেই। রাজ্যে গরম, শীত, রোদ, বৃষ্টির যেমন কোনও নিশ্চয়তা নেই ঠিক তেমনই রাঁচীর পিচ কখন কেমন খেলবে তারও কোনও ঠিক নেই। প্রতি দিন নয়, প্রতিটি সেশনে বদলে গেল পিচের চরিত্র। কখনও এত অসমান বাউন্স হল যে ব্যাটারেরা বুঝতেই পারলেন না কী করবেন। আবার কখনও যেন পিচে কোনও সমস্যা নেই। সাবলীল ব্যাটিং হল। পিচের মতো প্রতি দিন খেলার ছবিটাও বদলাল। শেষ পর্যন্ত জয়ের হাসি হাসলেন রোহিত শর্মারা। সাড়ে তিন দিনের লড়াইয়ে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে এক ম্যাচ বাকি থাকতেই টেস্ট সিরিজ় জিতে গেল ভারত।
মহেন্দ্র সিংহ ধোনির ঘরের মাঠে ভারতের জয়ের নায়ক ধ্রুব জুরেল। হতে পারে দুই ইনিংস মিলিয়ে রবিচন্দ্রন অশ্বিন ৬ ও রবীন্দ্র জাডেজা ৫ উইকেট নিয়েছেন, দুই ইনিংস মিলিয়ে যশস্বী জয়সওয়াল ১১০ রান করেছেন, তার পরেও এটা নিশ্চিত যে জুরেল না থাকলে এই ম্যাচ জিততে পারত না ভারত। প্রথম ইনিংসে ১৭৭ রানে ৭ উইকেট পড়ে যাওয়ার পরে ভারত যে ৩০৯ রান করেছিল, তার কারণ জুরেল। এক দিকে টিকে থেকে নীচের সারির ব্যাটারদের সঙ্গে শেষ ৩ উইকেটে আরও ১৩২ রান যোগ করা সহজ নয়। দ্বিতীয় ইনিংসেও যখন পর পর দু’বলে রবীন্দ্র জাডেজা ও সরফরাজ় খানের উইকেট হারিয়ে ভারত চাপে, তখনও সাবলীল ইনিংস খেললেন তিনি। শুভমন গিলের সঙ্গে মিলে দলকে জয়ে নিয়ে গেলেন। দেখে মনেই হল না নিজের দ্বিতীয় টেস্ট খেলছেন তিনি। পোড়খাওয়া উইকেটরক্ষক-ব্যাটার বুঝিয়ে দিলেন, অনেক দিন থাকতে এসেছেন তিনি। ধোনির ঘরের মাঠেই উদয় হল ‘নতুন ধোনি’র।
চতুর্থ দিন ভারতের সামনে লক্ষ্য ছিল ১৫২ রান। ক্রিজ়ে ছিলেন দলের দুই ওপেনার রোহিত ও যশস্বী। তৃতীয় দিন যেখানে শেষ করেছিলেন, চতুর্থ দিন সেখান থেকেই শুরু করেন দুই ব্যাটার। যে পিচে স্পিনারেরা বেশি সাহায্য পাচ্ছেন, সেই পিচে কেন শুরুটা জেমস অ্যান্ডারসনকে দিয়ে করালেন তার ব্যাখ্যা হয়তো দিতে পারবেন না বেন স্টোকস। অ্যান্ডারসন রান দিলেন। শুরু থেকে সাবলীল ব্যাটিং করছিলেন রোহিত ও যশস্বী। দেখে মনে হচ্ছিল, প্রথম দিনের পিচে ব্যাট করছেন। ভারতকে প্রথম ধাক্কা দেন জো রুট। প্রথম ইনিংসে এই রুটকেও মাত্র এক ওভার বল দিয়েছিলেন স্টোকস। রুটের বলে বড় শট খেলতে গিয়ে ৩৭ রানে ফিরলেন যশস্বী। তবে সেই উইকেট রুটের থেকেও অনেক বেশি অ্যান্ডারসনের। ৪১ বছরের অ্যান্ডারসন যে ভাবে সামনের দিকে ঝাঁপিয়ে ক্যাচ ধরলেন, তা লজ্জায়ই ফেলবে অনেক তরুণ ক্রিকেটারকে।
ভারতকে সমস্যায় ফেললেন খোদ রোহিতই। অর্ধশতরান করে খেলছিলেন। দেখে মনে হচ্ছিল না সমস্যা হচ্ছে। আচমকাই টম হার্টলির বল ক্রিজ় থেকে বেরিয়ে খেলতে গেলেন। ব্যাটে-বলে হল না। স্টাম্প আউট হয়ে ফিরলেন ভারত অধিনায়ক। চার নম্বরে নেমে আরও এক বার ব্যর্থ রজত পটীদার। ৬ বল খেলে শূন্য রানে ফিরলেন তিনি। স্পিনের বিরুদ্ধে আরও এক বার পটীদারের দুর্বলতা প্রকাশ পেল। শেষ টেস্টে প্রথম একাদশে তাঁকে আরও এক বার দেখা গেলে অবাক লাগবে।
রান পাননি রবীন্দ্র জাডেজা ও সরফরাজ় খানও। বশিরের একটি ফুলটস সরাসরি জনি বেয়ারস্টোর হাতে মেরে বসলেন জাডেজা। পরের বলেই ব্যাট-প্যাডে লেগে ক্যাচ আউট হলেন সরফরাজ়। পর পর দু’বলে দু’উইকেট নিয়ে জয়ের গন্ধ পাওয়া শুরু করেছিল ইংল্যান্ড। কিন্তু তখনও শুভমন ক্রিজ়ে ছিলেন। তাঁর সঙ্গে জুটি বাঁধলেন জুরেল। দু’জনে মিলে দলকে জয়ে নিয়ে গেলেন।
যে পিচে বাকি ব্যাটারদের খেলতে সমস্যা হল, সেখানে সাবলীল ব্যাট করলেন জুরেল। এক বারও মনে হয়নি কোনও বল বুঝতে পারেননি। খুব দ্রুত পা চলে জুরেলের। ফলে সামনের পা থেকে পিছনের পা, আবার পিছনের পা থেকে সামনের পায়ে যেতে খুব বেশি সময় লাগে না তাঁর। সেটাই কাজে লাগালেন ভারতীয় ব্যাটার। তাঁকে সঙ্গ দিলেন শুভমন। তাঁরা জানতেন, প্রচুর সময় রয়েছে। তাই তাড়াহুড়ো করেননি। সিঙ্গল, ডাবলসে খেলেছেন। ধীরে ধীরে লক্ষ্যের কাছে পৌঁছেছেন। এক বার হাত জমে যাওয়ার পরে কয়েকটি বড় শট এসেছে। তবে সবই মাটিতে। হাওয়ায় খুব একটা খেলার চেষ্টা করেননি তাঁরা।
খেলায় ফেরার সব রকম চেষ্টা করে ইংল্যান্ড। প্রতিটি রান বাঁচানোর জন্য ঝাঁপান ফিল্ডারেরা। বোলারেরা সব রকম চেষ্টা করে দেখেন। কিন্তু দুই ব্যাটারকে ফেরাতে পারেননি তাঁরা। একটা সময়ের পরে ভারতের জয় স্পষ্ট হয়ে যায়। দলকে ৫ উইকেটে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন দুই ব্যাটার। শুভমন ৫২ ও জুরেল ৩৯ রানে অপরাজিত থাকেন।