New Zealand tour of India 2024

৩২ বছর বয়সে টানা ২৯ ওভার বোলিং! ‘নিরীহ’ স্যান্টনারের হাতেই শেষ রোহিতেরা

এক দশক ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছেন স্যান্টনার। লাল বলের ক্রিকেটে তেমন নজরকাড়া পারফরম্যান্স কখনও করতে পারেননি। সেই ‘নিরীহ’ স্যান্টনারই পুণের ২২ গজে বিপজ্জনক হয়ে উঠলেন।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০২৪ ১৯:২৯
Picture of Mitchell Santner

মিচেল স্যান্টনার । ছবি: বিসিসিআই।

নিউ জ়িল্যান্ডের কাছে দ্বিতীয় টেস্ট হারের পর রোহিত শর্মা মেনে নিলেন মিচেল স্যান্টনার তাঁদের কাজ কঠিন করে দিয়েছেন। পুণের ২২ গজে ভারতের ১৩ উইকেট তুলে নিয়েছেন ৩২ বছরের কিউয়ি স্পিনার। স্পিন সহায়ক পিচ কাজে লাগিয়ে নিউ জ়িল্যান্ডকে ঐতিহাসিক টেস্ট সিরিজ় জেতানো স্পিনারের আগের পরিসংখ্যান কিন্তু এমন বিপজ্জনক নয়। আপাতসাধারণ স্যান্টনারই এক রকম ভয় ধরিয়ে দিয়েছেন ভারতীয় শিবিরে।

Advertisement

২০১৫ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় স্যান্টনারের। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে অ্যাডিলেডে টেস্ট অভিষেক। আগের ২৮টি টেস্টে স্যান্টনার নিয়েছিলেন ৫৪টি উইকেট। বিশ্ব ক্রিকেটের নিরিখে এই পরিসংখ্যান খুব আকর্ষণীয় নয়। ইনিংসে কখনও ৪ উইকেটও পাননি তিনি। ইনিংসে তাঁর সেরা বোলিং ছিল ৩৪ রানে ৩ উইকেট। আর ম্যাচে ৯৩ রানে ৬ উইকেট। এমন এক ‘নিরীহ’ স্পিনারের সামনেই খেই হারিয়েছেন বিরাট কোহলি, শুভমন গিল, সরফরাজ় খানের মতো ব্যাটারেরা। দ্বিতীয় ইনিংসে তাঁর বলে ঠকেছেন রোহিতও। ভারতীয় দলের অধিনায়ক ম্যাচের পর স্যান্টনারের কৃতিত্ব মেনে নিয়ে বলেছেন, ‘‘স্যান্টনার সঠিক জায়গায় বল রাখছিল। উইকেটের সামনে থাকছিল প্রতিটা বল। ওর কোন বলটা বাইরের দিকে যাবে, আর কোনটা সোজা আসবে বোঝা যাচ্ছিল না।’’ সহজ, সরল স্বীকারোক্তি।

ভারতীয় ব্যাটারেরা যে স্যান্টনারের বল পড়তে পারছেন না, তা বুঝে গিয়েছিলেন টম লাথামও। ভারতের দ্বিতীয় ইনিংসে স্যান্টনারকে দিয়ে টানা ২৯ ওভার বল করিয়েছেন নিউ জ়িল্যান্ড অধিনায়ক। ফলও পেয়েছেন। ম্যাচের পর উচ্ছ্বসিত স্যান্টনার বলেছেন, ‘‘কাজটা সহজ ছিল না। বেশ কঠিনই বলা যায়। যশস্বী জয়সওয়াল ভাল খেলছিল। তবু আমরা আশা ছাড়িনি। সতীর্থেরা আমার চাপ নিয়ে একটু চিন্তায় ছিল। তবে আমার সমস্যা হয়নি। প্রতিটি উইকেট পাওয়ার পর আরও ভাল বল করার চেষ্টা করেছি।’’

চেষ্টার ফল পেয়েছেন স্যান্টনার। সাড়ে তিন বছর পর টেস্ট ম্যাচ খেলতে নামা ওয়াশিংটন সুন্দর ছাড়া ভারতের আর কোনও বোলারের চেষ্টা সফল হয়নি পুণের ২২ গজে। ওয়াশিংটনও ম্যাচে ১১টি উইকেট নিয়েছেন। তবু স্যান্টনারের মতো প্রভাব ফেলতে পারেননি। স্যান্টনার অনেকটা ভারতের রবীন্দ্র জাডেজা বা অক্ষর পটেলের মতো ক্রিকেটার। বল তো করেনই। ব্যাট হাতেও কার্যকর। ভারত-নিউ জ়িল্যান্ড দ্বিতীয় টেস্টের আগে পর্যন্ত ২৮টি টেস্ট ছাড়াও ১০৪টি এক দিনের ম্যাচ এবং ৯৭টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন স্যান্টনার। সব মিলিয়ে তাঁর উইকেট সংখ্যা ২৭৬। ধারাবাহিক ভাবে তিন ধরনের ক্রিকেট খেললেও কোনও ক্ষেত্রেই তেমন নজরকাড়া পারফরম্যান্স নেই কিউয়ি অলরাউন্ডারের। স্বভাবতই প্রতিপক্ষ দলগুলি তাঁকে তেমন গুরুত্বও দেয় না কখনও। ঠিক এই সুযোগটাই কাজে লাগিয়েছেন। গৌতম গম্ভীরও হয়তো তাঁকে নিয়ে খুব বেশি ভাবেননি। তুলনায় ভাল স্পিন খেলতে পারার আত্মবিশ্বাস ভারতীয় ব্যাটারদের মধ্যে থাকেই। নিউ জ়িল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের মতো দলের বিরুদ্ধে দেশের মাটিতে সেই আত্মবিশ্বাস কাজে লাগানোর চেষ্টা করেন ভারতীয় ক্রিকেটারেরা। স্যান্টনার এ বার প্রস্তুতি নিয়ে এসেছিলেন। চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে আইপিএল খেলার সুবাদে ভারতের পিচগুলি সম্পর্কে তিনি যথেষ্ট ওয়াকিবহাল। মহেন্দ্র সিংহ ধোনির দলে কিউয়ি অলরাউন্ডার অধিকাংশ সময়ই ঢাকা পড়ে থাকেন জাডেজার আড়ালে। পুণে টেস্টে সেই জাডেজাই ঢাকা পড়ে গেলেন তাঁর কৃতিত্বে।

২০১৪-১৫ মরসুমে নিউ জ়িল্যান্ড দলে প্রথম সুযোগ পেয়েছিলেন ঘরোয়া ক্রিকেটে ভাল পারফরম্যান্সের সুবাদে। ড্যানিয়েল ভেট্টরির অবসর তাঁর পথ সহজ করেছিল। গত এক দশকে স্যান্টনার ভেট্টরির অভাব পূরণ করতে পারেননি নিশ্চিত ভাবে। আবার নিউ জ়িল্যান্ড এমন কোনও ক্রিকেটারও তৈরি করতে পারেনি, যে ৩২ বছরের অলরাউন্ডারকে জাতীয় দল থেকে সরিয়ে দিতে পারে। স্যান্টনার কিন্তু নিজেকে ধরে রেখেছেন। সব সময় বল বা ব্যাট হাতে লড়াই করার চেষ্টা করেছেন। দলকে ভরসা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। কেন উইলিয়ামসন, টিম সাউদি, লাথামেরাও তাঁর চেষ্টায় ভরসা রেখেছেন। পুণের ২২ গজে সেই ভরসার দাম দিলেন স্যান্টনার। লাল বলের ক্রিকেটে নিজের সেরা পারফরম্যান্স করে নিউ জ়িল্যান্ডের ক্রিকেট ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকলেন।

পুনশ্চ: স্যান্টনার প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটেও কখনও ইনিংসে ৬ বা ৭ উইকেট পাননি। ক্রিকেটজীবনের সেরা সাফল্য পেলেন ৩২ বছর বয়সে!

আরও পড়ুন
Advertisement