আকাশ দীপকে (মাঝে) নিয়ে উল্লাস সতীর্থদের। ছবি: পিটিআই।
বল হাতে পাঁচ উইকেট নিলেন। ব্যাট হাতে শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করেও পারলেন না। ফলে আরও এক বার হারতে হল মুম্বই ইন্ডিয়ান্সকে। শুক্রবার লখনউ সুপার জায়ান্টসের কাছে ১২ রানে হারল মুম্বই। আগে ব্যাট করে লখনউ তুলেছিল ২০৩/৮। জবাবে মুম্বই থেমে গেল ১৯১/৫ রানে। জিতলেও লখনউয়ের চিন্তা থেকে গেল ঋষভ পন্থকে নিয়ে। ২৭ কোটির ক্রিকেটার মাত্র দু’রান করেছেন এ দিন।
লখনউয়ের একানা স্টেডিয়ামে ২০০-র উপর রান তাড়া করে জেতা সহজ কাজ ছিল না। শুরুটাও ভাল হয়নি মুম্বইয়ের। চোটের কারণে রোহিত শর্মা না খেলায় রায়ান রিকেলটনের সঙ্গে ওপেন করতে পাঠানো হয়েছিল উইল জ্যাকসকে। চলতি আইপিএলে প্রথম বার বল করতে নেমে প্রথম ওভারেই তাঁকে তুলে নেন আকাশ দীপ। পরের ওভারে শার্দূল ঠাকুর ফেরান রিকেলটনকে।
মুম্বইয়ের ধস বাঁচাতে দরকার ছিল একটা জুটি। সেটাই করেন নমন ধীর এবং সূর্যকুমার যাদব। সাধারণত তিনে নামেন তিলক বর্মা। তবে এ দিন নমনকে নামিয়ে মুম্বইয়ের ফাটকা খেলার পরিকল্পনা কাজে লেগে যায়। আগ্রাসী ব্যাটিং করে লখনউ বোলারদের ছন্দ নষ্ট করে দেন নমন। দ্রুতগতিতে রান তুলতে থাকেন। নমনকে (৪৬) তুলে নেন দিগ্বেশ রাঠি। আগের ম্যাচে শাস্তি পাওয়া সত্ত্বেও এ দিন তাঁকে ‘নোটবুক সেলিব্রেশন’ করতে দেখা যায়।
নমন ফেরার পর সূর্যকুমার ধীরে ধীরে হাত খুলতে থাকেন। তুলনায় অনেক ধীরে খেলছিলেন পাঁচে নামা তিলক। দ্বিতীয় ইনিংসে বল সহজে ব্যাটে আসছিল না। ফলে মুম্বই ক্রিকেটারদের বড় শট খেলা কঠিন হয়ে যায়। আস্কিং রেট বাড়তে থাকায় চালিয়ে খেলার চেষ্টা করছিলেন সূর্য। তবে ১৭তম ওভারে আবেশের অফসাইডে করা বলে কেন যে ও ভাবে ফাইন লেগের উপর দিয়ে খেলতে গেলেন তা দুর্বোধ্য। বলটি ছেড়ে দিলে ওয়াইড হত। অত বাইরের বল খেলায় ব্যাটের সঙ্গে সংযোগও ভাল হয়নি। অনায়াসে ক্যাচ ধরেন আব্দুল সামাদ।
কিছুতেই ব্যাটে-বলে ঠিকঠাক সংযোগ হচ্ছিল না তিলকের। তিনি নিজেকে ‘রিটায়ার্ড আউট’ করার সিদ্ধান্ত নিলেন ১৯তম ওভারে। তাঁর বদলে নামা মিচেল স্যান্টনার খেলারই সুযোগ পেলেন না। তিলকের সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে।
তার আগে, টসে হেরে আগে ব্যাট করতে নামা লখনউয়ের কাছে চ্যালেঞ্জ ছিল স্কোরবোর্ডে বড় রান তোলা। প্রথম থেকেই সেই কাজ শুরু করে দেন মিচেল মার্শ। নতুন দলে এসে মার্শের ব্যাটে রানের ফোয়ারা দেখা যাচ্ছে। প্রথম দু’টি ম্যাচে অর্ধশতরান করার পর আগের ম্যাচে রান পাননি। এ দিন ফের অর্ধশতরান করেন অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটার।
শুরু থেকেই মার্শের আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়ে মুম্বইয়ের বোলিং। উল্টো দিকে থাকা এডেন মার্করামের ভূমিকা ছিল দর্শকের মতোই। তিনি একটা দিক ধরে রাখেন। ২৭ বলে অর্ধশতরান করেন মার্শ। আইপিএলের নতুন প্রতিভা অশ্বনী কুমারের একটি ওভার থেকে ২৩ রান নেন। পাওয়ার প্লে-র মধ্যে উইকেট না হারিয়ে ৬৯ রান উঠে যায় লখনউয়ের।
পেসারদের দিয়ে সাফল্য না পাওয়ায় হার্দিক আনেন স্পিনার বিগ্নেশ পুতুরকে। নিজের প্রথম ওভারেই পুতুর তুলে নেন মার্শকে। ৯টি চার এবং ২টি ছয় মেরে ৩১ বলে ৬০ রান করে আউট হন মার্শ।
অসি ক্রিকেটার ফেরার পর আক্রমণের দায়িত্ব নিজের হাতে তুলে নেন মার্করাম। লখনউয়ের হয়ে আগের তিনটি ম্যাচে রান করতে পারেননি। শুক্রবার দেখা গেল পুরনো মার্করামকে, যিনি হায়দরাবাদের হয়ে এ রকমই খেলতে অভ্যস্ত ছিলেন। একটি চার এবং একটি ছয় মেরে শুরুটা ভাল করেন নিকোলাস পুরান (১২)। তবে বড় রান করতে ব্যর্থ ক্যারিবিয়ান ব্যাটার।
পন্থ ক্রিজ়ে টেকেন মাত্র ৬ বল। করেন ২ রান। এক বারও তাঁকে দেখে মনে হয়নি স্বস্তিতে রয়েছেন। বেশ সাবধানী হয়ে খেলছিলেন। হার্দিকের বলে ব্যাটের কানায় লেগে ক্যাচ ওঠে। ঝাঁপ দিয়ে তালুবন্দি করেন পরিবর্ত ফিল্ডার করবিন বশ। অর্ধশতরান করে ফেরেন মার্করামও (৫৩)।
ওপেনারদের তৈরি করা মঞ্চে আরও আগ্রাসী হওয়া উচিত ছিল লখনউয়ের বাকি ব্যাটারদের। কিছুটা চেষ্টা করেছিলেন আয়ুষ বাদোনি (৩০)। বড় রান পাননি ডেভিড মিলারও (২৭)। শেষ ওভারে দু’টি উইকেট নিয়ে ইনিংসে পাঁচ উইকেট পূরণ করেন হার্দিক। চার ওভারে মাত্র ৩৬ রান দেন তিনি।