Ravi Bishnoi

Ravi Bishnoi: টেনিস বল থেকে ভারতীয় দল, চর্চায় উঠে আসছে বিস্ময়-বিষ্ণোই যাত্রা

তরুণ স্পিনার লেগস্পিন করার চেষ্টা করলেও বেশি ঘোরে না। সেটাই নাকি বিষ্ণোইয়ের অন্যতম সুবিধে। তা ছাড়া, বল করার সময় রবির মাথা বাঁ-দিকে হেলে যায়। স্বাভাবিক ভাবেই হাত মাথার পিছন দিয়ে আসে।

Advertisement
ইন্দ্রজিৎ সেনগুপ্ত 
শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৬:৪০
নায়ক: অভিষেকেই গুগলিতে বাজিমাত করলেন। ইডেনে উত্থান রবি বিষ্ণোইয়ের।

নায়ক: অভিষেকেই গুগলিতে বাজিমাত করলেন। ইডেনে উত্থান রবি বিষ্ণোইয়ের। ছবি পিটিআই।

টেনিস বলে মিডিয়াম পেসার হিসেবে ক্রিকেট শুরু করেছিলেন তিনি। জোধপুরে ছিল না কোনও ক্রিকেট অ্যাকাডেমি। পাড়ার বন্ধুদের সঙ্গেই ক্রিকেট মাঠে ছুটতেন বিকেলে। বোলিং করার সুযোগ পেলে দৌড়ে এসে ছুড়ে বল করতেন। তখনও ভাবেননি লেগস্পিনার হিসেবে ভারতীয় দলে একদিন সুযোগ করে নেবেন। অভিষেক হবে ইডেনে। তিনি রবি বিষ্ণোই। বুধবার কলকাতায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে চার ওভারে ১৭ রান দিয়ে দুই উইকেট নিয়ে ম্যাচের সেরা ২১ বছরের তরুণ।

কী করে একজন লেগস্পিনার ক্রমাগত গুগলি করে যেতে পারেন? তিনি যদি ক্রমাগত গুগলিই করেন, তা হলেও কি তাঁকে লেগস্পিনার বলা যায়? রবি বিষ্ণোইয়ের কোচ প্রদ্যুৎ সিংহ যদিও তাঁর ছাত্রকে লেগস্পিনারের চেয়ে রিস্টস্পিনার বলতেই বেশি পছন্দ করেন।

Advertisement

রবির কোচের কাছে জানতে চাওয়া হয়, গুগলির রহস্য কী? ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংস শেষে ফোনে প্রদ্যুৎ বলছিলেন, ‘‘ওর অ্যাকশনে বরাবরই সমস্যা ছিল। আগে টেনিস বলে ছুড়ে বল করত। তা নিয়ে অনেক পরিশ্রম করেছে। উচ্চতা কম ছিল বলে লেগস্পিন করার পরামর্শ দিয়েছিলাম।’’ যোগ করেন, ‘‘প্রথম কয়েক দিন হাত ঘোরাতেই পারছিল না। আমি এবং শাহরুখ পাঠান ওকে বলেছিলাম সাইড-আর্ম অ্যাকশনে বল করার প্রয়োজন নেই। পারলে মাথার পিছন দিয়ে হাত নিয়ে আয়। তাতে হাত অন্তত ঘুরবে। প্রথম দু’দিন সে ভাবে বল করানোর পরই দেখি, স্বাভাবিক ভাবেই ওর বল পড়ে ডান-হাতি ব্যাটারের ভিতরের দিকে ঢুকে আসছে। আমরা কখনওই ওকে এই ডেলিভারি পরিবর্তন করতে বলিনি। তখন থেকেই গুগলিতেই ব্যাটারদের সমস্যায় ফেলে আসছে রবি।’’

তরুণ স্পিনার লেগস্পিন করার চেষ্টা করলেও বেশি ঘোরে না। সেটাই নাকি বিষ্ণোইয়ের অন্যতম সুবিধে। তা ছাড়া, বল করার সময় রবির মাথা বাঁ-দিকে হেলে যায়। স্বাভাবিক ভাবেই হাত মাথার পিছন দিয়ে আসে।

শুধুমাত্র গুগলিই তাঁর অস্ত্র নয়। জোরের উপরে বল করতে পারেন রবি। সেটাও নাকি টেনিস বলে খেলারই ফল। প্রদ্যুতের কথায়, ‘‘এক সময় মিডিয়াম পেস বল করত বলে ও কিন্তু অনেকটা রান-আপ নিয়ে বল করতে আসে। দ্রুত ছুটে আসার ফলে ফ্লাইট দেওয়ার জন্য থমকে দাঁড়াতে পারে না। আমাদের এখানে মাঠও সব ছোট। সেখানে ফ্লাইট দেওয়ার অর্থই হল ব্যাটার হাঁটু মুড়ে বসে স্লগ সুইপ করে দেবে। ব্যাটারকে সুইপ মারার বেশি সময়ই দেয় না ও। তাই রবির বিরুদ্ধে রান করা সহজ নয়।’’

বুধবার ইডেনে গুগলিতেই দু’টি উইকেট পান রবি। তাঁর গুগলি বুঝতে না পেরে এলবিডব্লিউ রস্টন চেজ়। রভম্যান পাওয়েল বাইরের বল টেনে মারতে গিয়ে লং-অনে ক্যাচ দিয়ে বসেন। এক ওভারে রবির দুই উইকেট তুলে নেওয়া দেখে খুশি বোর্ড প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ও। আনন্দবাজারকে বলে দিলেন, ‘‘ভাল। তবে সবে তো শুরু করল। অনেক খেলতে হবে।’’

রবি নিজেও তাঁর বোলিংয়ে তৃপ্ত। ম্যাচ শুরু হওয়ার আগে স্বাভাবিক ভাবেই স্নায়ুর চাপে ভুগছিলেন তিনি। কিন্তু দুই উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরার পুরস্কার পাওয়ার পরে সম্প্রচারকারী চ্যানেলকে বলে গেলেন, ‘‘হৃদস্পন্দন অনেকটাই স্বাভাবিক হয়েছে এখন। ম্যাচ শুরু হওয়ার আগে যেমন উত্তেজিত ছিলাম, চাপও অনুভব করছিলাম। বল করার সময় চেষ্টা করেছি ব্যাটারকে মারার জায়গা না দিতে। উইকেটের সোজাসুজি বল করেছি। রান আটকানোর চেষ্টা করেছি। তাতেই দু’টি উইকেট এসেছে।’’ যোগ করেন, ‘‘দেশের হয়ে প্রথম বার খেলতে নেমেই ম্যাচ সেরার পুরস্কার পাব ভাবতেই পারিনি। সত্যি স্বপ্নপূরণ হল।’’

রবির সাফল্যের পরে তাঁর বাড়ির সামনে আতসবাজির প্রদর্শনী শুরু হয়। কোচও তাঁর বাড়ি থেকেই কথা বলছিলেন। শোনা যাচ্ছিল ঢোলের শব্দ। কোচের কথায়, ‘‘জোধপুর থেকে রবিই প্রথম ভারতীয় দলে সুযোগ পেয়েছে। প্রথম ম্যাচেই সফল। ওর পরিবারকে নিয়ে উৎসব হওয়াই স্বাভাবিক।’’

রবির মতো তাঁর পরিবারের সদস্যেরাও জানেন, যাত্রা সবে শুরু। এখনও অনেক পথ হাঁটা বাকি।

Advertisement
আরও পড়ুন