Ashes 2023

বেয়ারস্টোর ‘বুদ্ধিবিভ্রাট’, অ্যাশেজে শতরান করে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে একাই লড়ছেন স্টোকস

অ্যাশেজের শেষ দিনে লড়ছেন বেন স্টোকস। শতরান করে ফেলেছেন তিনি। কিন্তু উল্টো দিকে পঞ্চম দিনে বেয়ারস্টোকে হারিয়ে চাপ বেড়েছে ইংল্যান্ডের। তাঁর আউট হওয়ার ধরনও অবাক করে দেওয়ার মতো।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০২৩ ১৭:৪৭
Ben Stokes

বেন স্টোকস। —ফাইল চিত্র।

জনি বেয়ারস্টো আউট হয়ে মাঠে অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটারেরা হাত মেলাচ্ছেন। আর অসহায় বেয়ারস্টো তাকিয়ে রয়েছেন বেন স্টোকসের দিকে। বুঝতে পারছেন না কী করবেন। মধ্যাহ্নভোজের যাওয়ার আগে ইংল্যান্ডের স্কোর ২৪৩/৬। জয়ের জন্য এখনও ১২৮ রান প্রয়োজন স্টোকসদের। শতরান করে অধিনায়ক এখনও ক্রিজে। সঙ্গী স্টুয়ার্ট ব্রড। অস্ট্রেলিয়ার চাই চার উইকেট।

অ্যাশেজে দ্বিতীয় টেস্টের পঞ্চম দিনে ইংল্যান্ডের প্রয়োজন ছিল ২৫৭ রান। অস্ট্রেলিয়ার লক্ষ্য ছিল ছ’উইকেট তুলে নেওয়া। রবিবার প্রথম সেশনে প্রথমে আউট হন বেন ডাকেট। ইংরেজ ওপেনার ৮৩ রান করে আউট হন। ব্যাট করতে নামেন জনি বেয়ারস্টো। তাঁর সঙ্গে স্টোকসের জুটির দিকেই তাকিয়ে ছিল ইংল্যান্ড। কিন্তু ক্যামেরন গ্রিনের বাউন্সার থেকে মাথা বাঁচিয়ে নেওয়ার পর বেয়ারস্টো ভুলেই গেলেন বল কোথায়। ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। উইকেটরক্ষক অ্যালেক্স ক্যারি সঙ্গে সঙ্গে বল ছুড়ে উইকেট ভেঙে দেন। রান আউট হয়ে যান বেয়ারস্টো। যদিও অনেকের মতে এটাকে স্টাম্পও বলা যায়। উইকেটরক্ষকই তো বল ছুড়ে উইকেট ভেঙেছেন।

Advertisement

বেয়ারস্টো আউট হতেই সময় নষ্ট করা ছেড়ে দিলেন স্টোকস। তিনি বুঝে গিয়েছেন যে, আর অপেক্ষা করলে ম্যাচ হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে। গ্রিনের এক ওভারে ২৪ রান নিলেন স্টোকস। পর পর তিনটি ছক্কা মেরে শতরান করলেন। দ্রুত ম্যাচ শেষ করার চেষ্টা করছেন তিনি। ২০১৯ সালের অ্যাশেজের তৃতীয় ম্যাচের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছেন। সেই ম্যাচে শতরান করে দলকে জিতিয়েছিলেন স্টোকস। রবিবারও শতরান করেছেন। ম্যাচ জেতাতে পারবেন কি?

এ বারের অ্যাশেজে প্রথম ম্যাচটি হেরেছে ইংল্যান্ড। যে ম্যাচের পরই প্রশ্ন উঠতে শুরু করে দেয় ইংল্যান্ডের ‘বাজ়বল’ (ইংল্যান্ডের কোচ ব্রেন্ডন ম্যাকালামের ডাকনাম বাজ়। তাঁর সময়ে ইংল্যান্ড যে আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে খেলছে সেটার এই নাম দেওয়া হয়েছে।) নিয়ে। দ্বিতীয় ম্যাচে হারলে যে প্রশ্ন আরও জোরালো হবে। কিন্তু ইংল্যান্ড অধিনায়ক যদি এই ম্যাচ জিতিয়ে দিতে পারেন, তাহলে সমালোচকদের চুপ করিয়ে দেওয়া সম্ভব হবে।

অ্যাশেজ মানেই লড়াইটা শুধু ক্রিকেটে আটকে থাকবে না। মধ্যাহ্নভোজের সময় অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটারেরা যখন মাঠ থেকে বার হচ্ছিলেন, সেই সময় ইংরেজ সমর্থকেরা তাঁদের বিদ্রুপ করেন। এই ঘটনা নতুন নয়। অ্যাশেজ সিরিজ়ের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এক ইতিহাস। যা কিছুটা ব্যাঙ্গাত্মক। খানিকটা শোকেরও। ১৮৮২ সালে ওভালে আয়োজিত টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার কাছে প্রথম হেরেছিল ইংল্যান্ড। অস্ট্রেলিয়ার ফ্রেড স্পফোর্থের অনবদ্য বোলিংয়ের কাছে হারতে হয়েছিল ইংরেজদের। চতুর্থ ইনিংসে ৮৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জিততে পারেনি তারা। স্পফোর্থ ৪৪ রানে ৭ উইকেট নিয়েছিলেন। ০-১ ব্যবধানে সিরিজ় হেরে গিয়েছিল। পরের দিন ইংল্যান্ডের সংবাদ পত্র ‘দ্য স্পোর্টিং টাইমস্‌’ তাদের প্রতিবেদনে ক্রিকেট দলের তীব্র সমালোচনা করেছিল। লেখা হয়েছিল, ইংরেজ ক্রিকেটকে চিরস্মরণীয় করে রাখল ওভালের ২৯ আগস্ট, ১৮৮২ তারিখটি। গভীর দুঃখের সাথে বন্ধুরা তা মেনে নিয়েছে। ইংরেজ ক্রিকেটকে ভস্মীভূত করা হয়েছে এবং ছাইগুলো অস্ট্রেলিয়াকে দেওয়া হয়েছে। এর পরের বছর সিরিজ় পুনরুদ্ধার করতে অস্ট্রেলিয়ায় যায় ইংল্যান্ড। সংবাদমাধ্যমের ব্যঙ্গ মনে রেখে ইংল্যান্ডের অধিনায়ক আইভো ব্লাই বলেছিলেন, তাঁরা অ্যাশেজ পুণরুদ্ধার করতে অস্ট্রেলিয়ায় এসেছেন।

সে সময় কয়েকজন অস্ট্রেলীয় মহিলা ব্লাইকে আগের সিরিজ়ে পরাজয় নিয়ে পাল্টা ব্যঙ্গ করে ছাই ভর্তি একটি পাত্র দিয়েছিলেন। যাতে ছিল উইকেটের উপরে থাকা বেলের ছাই। তার পর থেকে দু’দেশের টেস্ট সিরিজ় ‘অ্যাশেজ’ বলে পরিচিত হয়। ব্লাই অবশ্য ছাইয়ের সেই আধারটি ব্যক্তিগত উপহার হিসাবে নিজের কাছে রেখে দিয়েছিলেন। বিজয়ী দলকে ট্রফি হিসাবে তা দেওয়া হত না তখন। ব্লাইয়ের মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রী লর্ডসে এমসিসি জাদুঘরে সেই পাত্রটি দান করে দিয়েছিলেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement