Shahbaz Ahmed

ভারতীয় দলের জার্সি পরলেন শাহবাজ়, সিরিজ় বাঁচানোর লড়াইয়ে নামছেন বাংলার অলরাউন্ডার

দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে এক দিনের সিরিজ়ে দলে নেওয়া হল তাঁকে। বাংলার অলরাউন্ডারকে সুযোগ দেওয়া হল রাঁচীর ম্যাচে। সিরিজ় বাঁচাতে এই ম্যাচ জিততেই হবে ভারতকে।

Advertisement
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০২২ ১৩:১৩
সুযোগ পেলেন শাহবাজ আহমেদ।

সুযোগ পেলেন শাহবাজ আহমেদ। —ফাইল চিত্র

ভারতীয় দলে অভিষেক হল বাংলার শাহবাজ় আহমেদের। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে এক দিনের সিরিজ়ে দলে নেওয়া হল তাঁকে। বাংলার অলরাউন্ডারকে সুযোগ দেওয়া হল রাঁচীর ম্যাচে। সিরিজ় বাঁচাতে এই ম্যাচ জিততেই হবে ভারতকে। শাহবাজ়ের হাতে টুপি তুলে দিলেন শিখর ধাওয়ান।

ঘরোয়া ক্রিকেটে দীর্ঘ দিন ধরেই ছন্দে রয়েছেন শাহবাজ়। রঞ্জিতে ব্যাটে, বলে বাংলার ভরসা ছিলেন তিনি। আইপিএলে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের হয়েও নিয়মিত সুযোগ পেয়েছেন। নির্বাচকদের নজর কেড়ে নিয়েছেন তিনি। বাংলার হয়ে রঞ্জিতে শতরান করেছেন, এক ইনিংসে পাঁচ উইকেটও নিয়েছেন। নিয়মিত ব্যাটে, বলে সফল হয়েছেন শাহবাজ়। সেই সাফল্যের দাম পেলেন তিনি।

Advertisement

এর আগে জ়িম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে ভারতীয় দলে সুযোগ পেলেও ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি। এ বার দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে সেই সুযোগটাই চলে এল শাহবাজ়ের কাছে। ২৭ বছরের শাহবাজ় চার বছর আগে বাংলার দলে সুযোগ পান। তাঁকে দলে নেওয়ার জন্য জোর করেছিলেন বাংলার প্রাক্তন অধিনায়ক মনোজ তিওয়ারি। সেই সময় শাহবাজ়কে ‘বহিরাগত’ বলা হত। হরিয়ানায় জন্ম শাহবাজের। ২০১৩ সালে তিনি বাংলায় ক্লাব ক্রিকেট খেলতে আসেন। বয়সভিত্তিক ক্রিকেট না খেলেই ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেন শাহবাজ়। তিনি বলেন, “প্রমোদ চান্ডিলা আমার বন্ধু। ও সেই সময় বাংলার হয়ে খেলছে। প্রমোদ আমাকে কলকাতায় নিয়ে আসে। ক্লাব ক্রিকেটে নিয়ে যায়। সেখানেই খেলতে থাকি। বাংলার হয়ে খেলব সেটা ভাবিনি। কিন্তু সারা দেশে কলকাতার ক্লাব ক্রিকেটই সেরা। তাই এখানেই খেলছিলাম।”

সেই ক্লাব ক্রিকেটেই মনোজের নজরে আসেন শাহবাজ়। বাংলার প্রাক্তন অধিনায়ক বলেন, “আমি সব সময় এমন স্পিনার দলে চাইতাম, যে ব্যাট করতে পারে। রঞ্জিতে এমন স্পিনারই প্রয়োজন। সে রকম এক জনকেই খুঁজছিলাম। দল নির্বাচনের সময় সব ক্লাবের ক্রিকেটারদের পরিসংখ্যান দেখা হয়। সেখানে শাহবাজকে দেখলাম ৫০-এর উপর উইকেট নিয়েছে আবার ১২০০-১৫০০ রানও করেছে। আমি ওকেই দলে চাইলাম।”

তাঁকে যে সহজে পেয়ে গিয়েছিলেন মনোজ, তেমনটা নয়। অন্য রাজ্যের ক্রিকেটারদের খেলানোর ব্যাপারে বাংলার ক্রিকেট সংস্থার বেশ কিছু নিয়ম রয়েছে। সে সব ঠিক মতো পেরিয়ে এলেও শাহবাজ়কে শুনতে হয়েছে যে তিনি বহিরাগত। মনোজ বলেন, “আমি যত দূর জানি অন্য রাজ্যের ক্রিকেটারদের জন্য যে নিয়ম সিএবি-র রয়েছে তা শাহবাজ় মেনে খেলছে। সেই জন্যই দলে তাকে নিয়েছেন নির্বাচকরা। তাই তাকে বাইরের ক্রিকেটার বলার কোনও মানেই হয় না। এটা ঠিক যে শাহবাজ়কে বার বার শুনতে হয়েছে যে ও বাইরের ছেলে। কিন্তু ফলাফল সকলের সামনে আছে। ওকে দলে নিয়ে যে কোনও ভুল হয়নি, সেটা প্রমাণ করে দিয়েছে ও।”

বাংলা দলে সুযোগ পেয়ে শাহবাজ় নিজেও মনোজের প্রতি কৃতজ্ঞ। বাংলার অলরাউন্ডার বলেন, “কলকাতায় যখন প্রথম খেলতে শুরু করি, তখন মনোজ ভাইয়াই আমাকে প্রথম লক্ষ করে। ওর নেতৃত্বেই প্রথম বাংলার হয়ে খেলি। ক্লাব ক্রিকেট থেকে সোজা ঘরোয়া ক্রিকেটে সুযোগ পাওয়া সহজ নয়। আমি রাজ্যের হয়ে বয়সভিত্তিক ক্রিকেট খেলিনি। তা-ও মনোজ ভাইয়া আমাকে সুযোগ দেয় বাংলার সিনিয়র দলের হয়ে খেলার।”

শুধু মনোজ নন, শাহবাজ়ের উত্থানের পিছনে রয়েছেন অরুণ লালও। বাংলার প্রাক্তন কোচ দিল্লির লোক। তিনি বাংলার হয়ে খেলেছিলেন, বাংলাকে রঞ্জিও জিতিয়েছিলেন। তাঁকে কোচ হিসাবে পেয়ে উপকৃত হয়েছেন বলেই মনে করেন শাহবাজ়। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “বাংলার হয়ে দুটো ম্যাচ খেলার পরেই আমাকে বসিয়ে দেওয়া হয়। তখন ব্যাট করার সময় আমি পা অনেকটা ফাঁক করে দাঁড়াতাম। অরুণস্যর আমাকে বলেন যে এই ভাবে দাঁড়ালে ঘরোয়া ক্রিকেটে রান করা কঠিন। তাই দল থেকে বাদ দিয়ে উনি বলেন আমার ব্যাট করার সময় দাঁড়ানোর ধরন পাল্টাতে। সেটা করার পর থেকে আমি ব্যাট হাতে সাফল্য পেতে শুরু করি। রঞ্জিতেও সাফল্য পাই। অরুণস্যর খুবই ইতিবাচক কথা বলেন। উনি আমাদের বলেছেন যে, আমরা ভারতের হয়েও খেলতে পারি। এই ইতিবাচক মনোভাব আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয়। আমার খেলায় অনেক উন্নতি প্রয়োজন। তবেই জাতীয় দলে খেলার আশা করতে পারব। ছন্দ ধরে রাখতে হবে, দলকে ম্যাচ জেতাতে হবে। বিশেষ করে ব্যাট হাতে। সুযোগ পেলে ধারাবাহিকতা দেখাতে হবে।”

সেই সুযোগটাই পেয়ে গিয়েছেন শাহবাজ়। এ বার ধারাবাহিকতা দেখিয়ে দলে টিকে থাকার লড়াইয়ে নেমে পড়তে হবে তাঁকে।

আরও পড়ুন
Advertisement