সময় কি শেষ পুজারা-রহাণের? ফাইল ছবি
ইদানীং সাংবাদিক বৈঠকে উপস্থিত হলেই তাঁদের মুখে দুটো বাক্য শোনা যায়। প্রথম, আমরা বাইরের আওয়াজে কান দিই না। দ্বিতীয়, আমরা একটা নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া মেনে চলি। সেটাই অনুসরণ করতে চাই।
তবে চেতেশ্বর পুজারা এবং অজিঙ্ক রহাণে ভালই বুঝতে পারছেন, বাইরের আওয়াজটা এ বার ক্রমশ জোরালো হচ্ছে এবং প্রক্রিয়া আর কাজে দিচ্ছে না। কিছু দিন পরে যখন শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজের দল বাছতে বসবে চেতন শর্মার নেতৃত্বাধীন নির্বাচক কমিটি, তখন কি এই দু’জনের নাম নিয়ে একটুও আলোচনা, বৈঠক সরগরম হবে?
গরিষ্ঠ সংখ্যার লোকজনই বলছেন, সম্ভবত নয়। পুজারা যদিও বা টিকে যেতে পারেন, রহাণের কাছে ভারতীয় টেস্ট দলের দরজা বন্ধ হয়ে গেল কিনা, সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। শ্রেয়স আয়ার, হনুমা বিহারি, শুভমন গিল (চোট রয়েছে, তবে দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠার পথে) বেঞ্চে বসে রয়েছেন। আর কতদিন তাঁদের বসিয়ে রাখা হবে, সেই প্রশ্নটা এ বার উঠেই গিয়েছে। নির্বাচকরাও এ বার হয়তো দেওয়াল লিখন পড়তে পারছেন।
Keegan Petersen with a magnificent catch on the second ball of the day😍 #SAvIND #FreedomTestSeries #BePartOfIt | @Betway_India pic.twitter.com/zqcAtMahSi
— Cricket South Africa (@OfficialCSA) January 13, 2022
জোহানেসবার্গ টেস্টে প্রথম ইনিংস দেখার পর সুনীল গাওস্কর বলেছিলেন, নিজেদের টেস্টজীবন বাঁচানোর জন্য আর একটি ইনিংস পেতে পারেন পুজারা-রহাণে। দ্বিতীয় ইনিংসে দু’জনেই অর্ধশতরান করেন। জিতলে তবু তাঁদের নিয়ে কথা হত। কিন্তু ভারত টেস্ট হেরে যাওয়ায় পুজারা-রহাণের যাবতীয় কৃতিত্ব ধামাচাপা পড়ে যায়। টুইটারে দু’জনের পদবীর থেকে শব্দ নিয়ে সমর্থকরা তাঁদের ‘পুরানে’ নামে অভিহিত করা শুরু করেন। বোঝাতে চেয়েছেন, ভারতীয় ক্রিকেটে দু’জনেই ‘পুরনো’ হয়ে গিয়েছেন।
নিজেদের স্বপক্ষে কী যুক্তি দেখাতে পারবেন পুজারা, রহাণে? দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে সিরিজের কথাই ধরা যাক। ছ’টি ইনিংসেই দু’জনে ব্যাট করেছেন। পুজারার সংগ্রহ ১২৪ রান। গড় ২০.৬৬। রহাণে সামান্য বেশি। তিনি ১৩৬ রান করেছেন। গড় ২২.৬৬। সব থেকে বড় ব্যাপার, ভারতীয় ক্রিকেটে এই দু’জনের কাছে নিজেদের প্রমাণ করার জন্য যে সময় দেওয়া হয়েছে তা অন্য কারওর ক্ষেত্রে ঘটেছে কিনা, সেটা অনেকেই মনে করতে পারছেন না।
বিরাট কোহলীর খারাপ ছন্দ, শতরানের অভাব নিয়ে বারবার আলোচনা হয়েছে। তবে পরিসংখ্যান ঘাঁটলে দেখা যাচ্ছে, শেষ শতরানের পর থেকে প্রায় ৫০টির কাছাকাছি টেস্ট ইনিংস খেলে ফেলেছেন পুজারা। অর্ধশতরান বেশ কিছু রয়েছে, কিন্তু শতরান নেই। শেষ বার ২০১৯-এর ৩ জানুয়ারি অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সিডনিতে ১৯৩ করেছিলেন। তারপর এক বার ৮১ এবং এক বার ৯১ রান করেছেন। কিন্তু শতরান নেই।
রহাণের ক্ষেত্রে শতরান না পাওয়া ইনিংসের সংখ্যাটা ৩০-এর কাছাকাছি। ২০২০-এর ডিসেম্বরে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে মেলবোর্নে দুরন্ত প্রত্যাবর্তন ঘটিয়েছিল ভারত। সেই টেস্টে শতরান করেছিলেন রহাণে। তারপর অনেক জলই বয়ে গিয়েছে। টেস্ট দলে কোহলীর সহকারী হিসেবে কার্যত তাঁর যে স্থানটি পাকাপাকি হয়ে গিয়েছিল, সেই জায়গা ইতিমধ্যেই হারিয়েছেন তিনি। দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে রোহিত শর্মাকে সহকারীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তিনি চোটের জন্য ছিটকে যাওয়ায় সহকারী হন কেএল রাহুল। তিনি জোহানেসবার্গ টেস্টে নেতৃত্বও দিয়েছেন। এতেই পরিষ্কার, ভারতীয় ক্রিকেট তাকাতে শুরু করে দিয়েছে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের দিকে। বেঞ্চে বসে রয়েছেন প্রতিভাবান তরুণরা। টুইটারে বৃহস্পতিবার থেকেই হ্যাশট্যাগে ‘ধন্যবাদ রহাণে’ লিখতে শুরু করেছেন ক্রিকেট সমর্থকরা।
পুজারা এ ব্যাপারে একটু হলেও এগিয়ে রয়েছেন। এর কারণ, টেস্টে তিন নম্বরে যোগ্য ব্যাটারের অভাব। তরুণ কোনও ক্রিকেটারকে এখনই তিন নম্বরে পাঠিয়ে পরীক্ষার মুখে ফেলে দিতে চান না নির্বাচকরা। পাশাপাশি, বিদেশের মাটিতে এখনও তিন নম্বরে দলকে ভরসা দেওয়ার মতো জায়গায় রয়েছেন তিনি। কিন্তু রহাণের জায়গায় মিডল অর্ডারে ভারতের হাতে একাধিক ক্রিকেটার।