নাগপুর টেস্টে জাডেজা এবং অশ্বিনের বল সামলাতেই পারলেন না অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটাররা।
একা অশ্বিনে রক্ষে নেই, জাডেজা দোসর।
নাগপুরে দুই ‘রবি’র তেজে ঝলসে গেল অস্ট্রেলিয়া। সফরকারীদের ১৫টি উইকেট তুলে নিলেন ভারতের দুই স্পিনার। রবিচন্দ্রন অশ্বিন এবং রবীন্দ্র জাডেজার বল বুঝতেই পারলেন না অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটাররা।
অশ্বিনকে নিয়ে প্রথম থেকেই চিন্তায় ছিলেন প্যাট কামিন্সরা। ভারতের অভিজ্ঞ অফস্পিনারকে সামলাতে বিশেষ প্রস্তুতি নিয়েছিলেন তাঁরা। তাতেও লাভ হল না। চোট সারিয়ে পাঁচ মাস পর ভারতীয় দলে ফেরা জাডেজাও এতটা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবেন, তা হয়তো আঁচ করতে পারেননি তাঁরা। প্রথম ইনিংসে জাডেজা নিয়েছিলেন ৫ উইকেট। দ্বিতীয় ইনিংসে অশ্বিন নিলেন ৫ উইকেট। দ্বিতীয় ইনিংসে জাডেজা তুলে নিলেন প্রতিপক্ষের ২ উইকেট। প্রথম ইনিংসে অশ্বিন পেয়েছিলেন ৩ উইকেট। অর্থাৎ, অস্ট্রেলিয়ার ২০ উইকেটের ১৫টিই তুলে নিয়েছেন দু’জনে।
নাগপুরের ২২ গজ স্পিন সহায়ক হলেও খেলার অযোগ্য ছিল না। জাডেজা ছাড়াও রোহিত শর্মা, অক্ষর পটেল, মহম্মদ শামিরা তা প্রমাণ করে দিয়েছেন ব্যাট হাতে। তবু অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটাররা দাঁড়াতে পারলেন না। প্রথম ইনিংসে মার্নাস লাবুশেন, অ্যালেক্স ক্যারিরা কিছুটা রান পেলেও দ্বিতীয় ইনিংসে স্টিভ স্মিথ ছাড়া কেউ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেননি। অশ্বিন, জাডেজার স্পিন পড়তেই পারলেন না সফরকারীরা।
এ বার ভারত সফরে এসে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেননি কামিন্সরা। পরিবর্তে বেঙ্গালুরুর কাছে আলুরে চার দিনের বিশেষ প্রস্তুতি শিবির করেছিলেন তাঁরা। অশ্বিনকে সামলানোর জন্য তাঁর ‘নকল’, অর্থাৎ বদোদরার স্পিনার মহেশ পিঠিয়ার বলে অনুশীলন করেছেন তাঁরা। নাগপুরে এসে বুঝলেন আসল এবং নকলের পার্থক্য। অশ্বিনের মতো বৈচিত্র মহেশের বলে নেই। প্রতিশ্রুতিমান স্পিনার হলেও মহেশ অনভিজ্ঞ। এই মরসুমেই তাঁর অভিষেক হয়েছে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে। অশ্বিনের বল খেলার জন্য বিশেষ অনুশীলন করেও তাঁর বিরুদ্ধে সাফল্য পেলেন না কামিন্সরা। অন্য দিকে, বাঁহাতি অলরাউন্ডারের খেলা নিয়ে সিরিজ় শুরুর আগে সংশয় ছিল। পাঁচ দিনের ম্যাচ খেলার ধকল তিনি নিতে পারবেন কি না, সে ব্যাপারে নিশ্চিত ছিলেন না রাহুল দ্রাবিড়রা। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের নির্দেশে রঞ্জি ট্রফির ম্যাচ খেলতে হয়েছিল তাঁকে। সৌরাষ্ট্রের হয়ে তামিলনাড়ুর বিরুদ্ধে সেই ম্যাচে ছন্দে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন জাডেজা। ভারত সফরে আসা পেশাদার অস্ট্রেলিয়া শিবির নিশ্চিত ভাবেই সে দিকে নজর রেখেছিল। তবু প্রস্তুতির অভাব স্পষ্ট হয়ে গেল নাগপুরে।
সব দেশই নিজেদের শক্তি অনুযায়ী উইকেট তৈরি করে। ক্রিকেটে এটাই নিয়ম। ইংল্যান্ড বা অস্ট্রেলিয়ায় যেমন স্পিন সহায়ক উইকেট দেখা যায় না, তেমনই ভারতীয় উপমহাদেশের উইকেট হয় স্পিন সহায়ক। বিদেশ সফরের আগে সেই মতো অনুশীলন করে সব দল। অস্ট্রেলিয়াও করেছিল। তবু দুই ‘রবি’র তেজে ঝলসে গেল তারা।
২০০৪ সালের পর ভারতের মাটিতে টেস্ট ম্যাচ জেতেনি অস্ট্রেলিয়া। নাগপুরের পারফরম্যান্সের পর এ বারের সিরিজ় নিয়েও আশাবাদী নন সে দেশের প্রাক্তন ক্রিকেটারদের একাংশ। বিশেষ প্রস্তুতির পরেও অশ্বিন, জাডেজার বলের সামনে অস্ট্রেলীয় ব্যাটাররা কুঁকড়ে থাকলেন!
আরও তিনটি টেস্ট খেলতে হবে অস্ট্রেলিয়াকে। ফলে ‘পিকচার আভি বাকি হ্যায়’।