জয়ের নায়ক। হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে উইকেট নিয়ে উল্লাস গুজরাতের মহম্মদ সিরাজের। ছবি: পিটিআই।
সেই প্রথম ম্যাচে ২৮৬ রান করেছিল সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। তার পর থেকে যেন ব্যাট করা ভুলে গিয়েছেন ট্রেভিস হেড, অভিষেক শর্মা, ঈশান কিশনরা। আরও একটি ম্যাচে ব্যর্থ হায়দরাবাদের ব্যাটিং আক্রমণ। বলা ভাল, ঘরের মাঠে গুজরাত টাইটান্সের হায়দরাবাদি পেসার মহম্মদ সিরাজের কাছে আত্মসমর্পণ করলেন প্যাট কামিন্সেরা। কোনও পরিকল্পনা দেখা গেল না তাঁদের ব্যাটিংয়ে। তার ফলে যা হওয়ার তা-ই হল। চলতি আইপিএলে পর পর চারটি ম্যাচ হারল হায়দরাবাদ। ঠিক উল্টো ছবি গুজরাত শিবিরে। প্রথম ম্যাচ হারার পর জয়ের হ্যাটট্রিক করলেন শুভমন গিলেরা।
টস জিতে প্রথমে বল করার সিদ্ধান্ত নেন গুজরাতের অধিনায়ক শুভমন। তাঁর সিদ্ধান্ত সঠিক প্রমাণিত করেন সিরাজ। নতুন বলে হায়দরাবাদকে জোড়া ধাক্কা দেন তিনি। গত কয়েকটি ম্যাচে প্রতিপক্ষ নয়, নিজের দলের মাথাব্যথা হয়ে উঠেছেন হেড। এই ম্যাচেও তাই হল। প্রথম ওভারেই ৮ রান করে সিরাজের বলে আউট হন তিনি। পঞ্চম ওভারে অভিষেককে ১৮ রানের মাথায় ফেরান সিরাজ। পাওয়ার প্লে-র মধ্যে দুই ওপেনারকে হারায় হায়দরাবাদ।
ঈশান শুরুতে একটু ধরে খেলছিলেন। দেখে মনে হচ্ছিল, বড় ইনিংস খেলার চেষ্টা করবেন। কিন্তু কোথায় কী? প্রসিদ্ধ কৃষ্ণের বলে বড় শট মারতে গিয়ে ১৭ রানের মাথায় ফেরেন তিনি। যে তিন ব্যাটারের উপর দলকে ভাল শুরু দেওয়ার দায়িত্ব ছিল, তাঁরা তিন জনই অল্প রানে ফেরেন।
চতুর্থ উইকেটে জুটি বাঁধেন নীতীশ রেড্ডি ও হেনরিখ ক্লাসেন। মাঝে মাঝে বড় শট মারছিলেন তাঁরা। ৫০ রানের জুটি হয় দু’জনের মধ্যে। কিন্তু তাঁরাও শেষ পর্যন্ত খেলতে পারেননি। প্রথমে ২৭ রান করে ক্লাসেন ও তার পর ৩১ রান করে নীতীশ আউট হন। দু’টি উইকেটই নেন বাঁহাতি স্পিনার সাই কিশোর। ১৫ ওভারের মধ্যে পাঁচ উইকেট হারিয়ে আরও চাপে পড়ে যায় হায়দরাবাদ।
বোঝা যাচ্ছিল, আরও একটি ম্যাচে বড় রান করতে পারবে না হায়দরাবাদ। অনিকেত বর্মা, কামিন্সেরা অনেক চেষ্টা করেন। কিন্তু গুজরাতেরা বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের সামনে হাত খুলতে পারছিলেন না তাঁরা। নিয়মিত ব্যবধানে উইকেট হারানোয় জুটি হয়নি। নিজের স্পেলের শেষ ওভারে অনিকেত ও সিমরজিৎ সিংহকে আউট করেন সিরাজ। চার ওভারে ১৭ রান দিয়ে ৪ উইকেট নেন ঘরের ছেলে। আইপিএলে এটি সিরাজের সেরা বোলিং। ২০তম ওভারে ইশান্ত শর্মার বলে ১৭ রান নেন কামিন্স ও মহম্মদ শামি। দলকে কিছুটা সম্মানজনক অবস্থায় নিয়ে যান তাঁরা। শেষ পর্যন্ত ২০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৫২ রান করে হায়দরাবাদ।
লড়াই করতে হলে বোলিংয়ের শুরুটা ভাল করতে হত হায়দরাবাদকে। তেমনটাই করে তারা। ফর্মে থাকা সাই সুদর্শনকে ৫ রানে আউট করেন শামি। গুজরাতের আগের ম্যাচের নায়ক জস বাটলারকে শূন্য রানে ফেরান কামিন্স। ১৬ রানে ২ উইকেট পড়ে যায় গুজরাতের। দেখে মনে হচ্ছিল, রান তাড়া করতে সমস্যা হবে শুভমনদের।
কিন্তু অন্য পরিকল্পনা ছিল ওয়াশিংটন সুন্দরের। চলতি আইপিএলে প্রথম ম্যাচ খেললেন তিনি। সেই কারণেই হয়তো নিজেকে প্রমাণ করার তাগিদ তাঁর বেশি ছিল। প্রথম বল থেকে বড় শট খেলা শুরু করেন সুন্দর। পাল্টা আক্রমণের পথে হাঁটেন তিনি। সুন্দরের আক্রমণে চাপে পড়ে যায় হায়দরাবাদ। সিমরজিৎ, জিশান আনসারির মতো অনভিজ্ঞ বোলারদের নিশানা করেন সুন্দর। তিনি ব্যাট চালাতে থাকায় থিতু হওয়ার সময় পান শুভমন।
একটা সময় পরে হাত খোলা শুরু করেন শুভমনও। লক্ষ্য বেশি না হওয়ায় তাঁরা জানতেন, সাবধানে খেললেই ম্যাচ জেতা যাবে। অহেতুক ঝুঁকি নেওয়ার দরকার নেই। সেটাই করলেন দুই ব্যাটার। দৌড়ে রান নিলেন। মাঝেমধ্যে খারাপ বলে বড় শট খেললেন। সময় যত গড়াচ্ছিল, তত সুযোগ কমছিল হায়দরাবাদের। বাধ্য হয়ে সব তাস খেলে ফেলেন কামিন্স। সেই শামিই ম্যাচে ফেরান হায়দরাবাদকে। সুন্দরকে ৪৯ রানের মাথায় আউট করেন তিনি। ভাল খেলেও অর্ধশতরান হাতছাড়া হয় সুন্দরের। তবে তত ক্ষণে খেলার দখল অনেকটা গুজরাতের হাতে। এই ইনিংসের পর দলে নিজের জায়গা পাকা করে নিলেন এই অলরাউন্ডার।
সুন্দর আউট হলেও ক্রিজ়ে ছিলেন শুভমন। অর্ধশতরান করেন তিনি। ৩৬ বলে ৪১ রান দরকার ছিল গুজরাতের। অভিষেকের ওভারে ১৮ রান নেন শারফেন রাদারফোর্ড। দেখে বোঝা যাচ্ছিল, দ্রুত খেলা শেষ করে নেট রানরেট বাড়িয়ে নিতে চাইছেন তাঁরা। শেষ পর্যন্ত ২০ বল বাকি থাকতে সাত উইকেটে ম্যাচ জেতে গুজরাত। শুভমন ৬১ ও রাদারফোর্ড ৩৫ রানে অপরাজিত থাকেন। খেলা শেষ হওয়ার অনেক আগেই দেখা যায়, মাঠ ছাড়ছেন হায়দরাবাদের সমর্থকেরা। এই দৃশ্য কিন্তু গত বারের রানার্সদের জন্য ভাল বিজ্ঞাপন নয়।