জ্যাক ক্রলি। ছবি: রয়টার্স।
চতুর্থ টেস্টে আবার বাজ়বল (ইংল্যান্ডের কোচ ব্রেন্ডন ম্যাকালামের ডাকনাম বাজ়। তাঁর সময়ে ইংল্যান্ড যে আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে খেলছে সেটার এই নাম দেওয়া হয়েছে।) খেলছে ইংল্যান্ড। অস্ট্রেলিয়াকে ৩১৭ রানে আটকে রেখে দ্বিতীয় দিনেই লিড নিয়ে নিলেন বেন স্টোকসেরা। জ্যাক ক্রলি ১৮৯ রান করলেন। জো রুট আউট ৮৪ রানে। তাঁদের ২০৬ রানের জুটিতেই লিড নেয় ইংল্যান্ড। দ্বিতীয় দিনের শেষে ইংল্যান্ডের স্কোর ৩৮৪/৪।
প্রথম দিনের শেষে অস্ট্রেলিয়া ব্যাট করছিল ২৯৯ রানে। তাদের আট উইকেট গিয়েছিল। দ্বিতীয় দিনের প্রথম বলেই প্যাট কামিন্সের উইকেট তুলে নেন জেমস অ্যান্ডারসন। এই টেস্টে ফেরানো হয়েছে অভিজ্ঞ পেসারকে। প্রথম দিনে তিনি উইকেট পাননি। কিন্তু দ্বিতীয় দিনের শুরুতেই অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়কের উইকেট তুলে নেন অ্যান্ডারসন। তার পর আর বেশি ক্ষণ ক্রিজে টেকেনি অস্ট্রেলিয়া। ৩১৭ রানে শেষ হয়ে যায় ব্যাগি গ্রিন টুপির মালিকদের ইনিংস। শেষ উইকেটটি নেন ক্রিস ওকস। প্রথম ইনিংসে পাঁচ উইকেট হয়ে গেল ইংল্যান্ডের পেসারের।
ইংল্যান্ড ব্যাট করতে নামলে তৃতীয় ওভারেই আউট হয়ে যান বেন ডাকেট। মিচেল স্টার্কের বলে খোঁচা দিয়ে উইকেটরক্ষকের হাতে ক্যাচ তুলে দেন ইংরেজ ওপেনার। সেই উইকেট যদিও ইংল্যান্ডকে কোনও বড় ধাক্কা দিতে পারেনি। অন্য ওপেনার ক্রলি এবং তিন নম্বরে নামা মইন আলি মিলে ১২১ রানের জুটি গড়েন। অলি পোপ চোট পেয়ে ছিটকে গিয়েছেন। তাঁর তিন নম্বর জায়গাটিতে নামেন মইন। তিনি ৫৪ রান করেন। সেই জুটি ভাঙেন স্টার্ক। মিডউইকেটে দাঁড়ানো উসমান খোয়াজার হাতে ক্যাচ দেন মইন।
১৩০ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারিয়েছিল ইংল্যান্ড। সেই সময় ২৭.১ ওভার হয়েছিল। পরের উইকেটটি পড়ল ৫৬.৫ ওভারে। অর্থাৎ ২৯.৪ বল একসঙ্গে খেলেন ক্রলি এবং জো রুট। এই সময়ের মধ্যেই ২০৬ রান তুলে নিলেন তাঁরা। অস্ট্রেলিয়ার রান টপকে ইংল্যান্ডকে লিড দিয়ে দেয় এই জুটিই। মনে হচ্ছিল টেস্টে ক্রলির চতুর্থ শতরানটি দ্বিশতরানে পৌঁছে যাবে। কিন্তু ক্যামেরন গ্রিনের অফ স্টাম্পের বাইরের বল ব্যাটে লেগে উইকেট ভেঙে দেয় ক্রলির। ১৮২ বলে ১৮৯ রান করে আউট হন ইংরেজ ওপেনার। তার পর আর বেশি ক্ষণ ক্রিজে টিকতে পারেননি রুটও। শতরানের কাছে পৌঁছে গিয়েছিলেন। দরকার ছিল আর ১৬ রান। কিন্তু সেটা হল না। টেস্টে ৩০টি শতরানের মালিক রুট বোল্ড হয়ে যান জস হেজ়লউডের বলে।
ইংল্যান্ড গোটা দিন ব্যাট করেনি। শুরুতে অস্ট্রেলিয়া ব্যাট করেছে। তাদের দু’টি উইকেট পড়েছে। এর পরেও প্রায় ৪০০ রান তুলে ফেললেন ক্রলিরা। তাঁদের এই আক্রমণাত্মক ক্রিকেটই বিপক্ষের জন্য ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে। অ্যাশেজের প্রথম দু’টি টেস্টে হারের পর ইংল্যান্ডের এই বাজ়বলের সমালোচনা হয়েছিল। কিন্তু সেটা খেলেই তৃতীয় টেস্ট জিতেছিল ইংল্যান্ড। চতুর্থ টেস্টে দ্বিতীয় দিনের শেষে ৬৭ রানে এগিয়ে তারা। হাতে এখনও ৬ উইকেট।
The end of a special day of Test cricket...
— England Cricket (@englandcricket) July 20, 2023
2️⃣ wickets
3️⃣8️⃣4⃣ runs
We lead Australia by 6️⃣7⃣ after Day 2. #EnglandCricket | #Ashes pic.twitter.com/W7waCdglzH
এ বারের অ্যাশেজে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া। এই সিরিজ়ের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এক ইতিহাস। যা কিছুটা ব্যাঙ্গাত্মক। খানিকটা শোকেরও। ১৮৮২ সালে ওভালে আয়োজিত টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার কাছে প্রথম হেরেছিল ইংল্যান্ড। অস্ট্রেলিয়ার ফ্রেড স্পফোর্থের অনবদ্য বোলিংয়ের কাছে হারতে হয়েছিল ইংরেজদের। চতুর্থ ইনিংসে ৮৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জিততে পারেনি তারা। স্পফোর্থ ৪৪ রানে ৭ উইকেট নিয়েছিলেন। ০-১ ব্যবধানে সিরিজ় হেরে গিয়েছিল। পরের দিন ইংল্যান্ডের সংবাদ পত্র ‘দ্য স্পোর্টিং টাইমস্’ তাদের প্রতিবেদনে ক্রিকেট দলের তীব্র সমালোচনা করেছিল। লেখা হয়েছিল, ইংরেজ ক্রিকেটকে চিরস্মরণীয় করে রাখল ওভালের ২৯ আগস্ট, ১৮৮২ তারিখটি। গভীর দুঃখের সাথে বন্ধুরা তা মেনে নিয়েছে। ইংরেজ ক্রিকেটকে ভস্মীভূত করা হয়েছে এবং ছাইগুলো অস্ট্রেলিয়াকে দেওয়া হয়েছে। এর পরের বছর সিরিজ় পুনরুদ্ধার করতে অস্ট্রেলিয়ায় যায় ইংল্যান্ড। সংবাদমাধ্যমের ব্যঙ্গ মনে রেখে ইংল্যান্ডের অধিনায়ক আইভো ব্লাই বলেছিলেন, তাঁরা অ্যাশেজ পুণরুদ্ধার করতে অস্ট্রেলিয়ায় এসেছেন।
সে সময় কয়েকজন অস্ট্রেলীয় মহিলা ব্লাইকে আগের সিরিজ়ে পরাজয় নিয়ে পাল্টা ব্যঙ্গ করে ছাই ভর্তি একটি পাত্র দিয়েছিলেন। যাতে ছিল উইকেটের উপরে থাকা বেলের ছাই। তার পর থেকে দু’দেশের টেস্ট সিরিজ় ‘অ্যাশেজ’ বলে পরিচিত হয়। ব্লাই অবশ্য ছাইয়ের সেই আধারটি ব্যক্তিগত উপহার হিসাবে নিজের কাছে রেখে দিয়েছিলেন। বিজয়ী দলকে ট্রফি হিসাবে তা দেওয়া হত না তখন। ব্লাইয়ের মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রী লর্ডসে এমসিসি জাদুঘরে সেই পাত্রটি দান করে দিয়েছিলেন।