জসপ্রীত বুমরাহ। সিডনি টেস্টে পিঠের পেশিতে চোট পেয়েছেন ভারতীয় পেসার। ছবি: পিটিআই।
সিডনি টেস্টের পরেই রোহিত শর্মা টেস্ট থেকে অবসর নেবেন বলে জল্পনা শুরু হয়েছে। রোহিত অবশ্য নিজে জানিয়েছেন, শুধুমাত্র এই টেস্ট থেকে তিনি সরে দাঁড়িয়েছেন। অবসরের কোনও সম্ভাবনা এখনই নেই। তার পরেও জল্পনা শেষ হয়নি। রোহিত ভারতের টেস্ট দলের অধিনায়কত্ব ছাড়লে পরবর্তী নেতা কে হবেন? দৌড়ে এগিয়ে জসপ্রীত বুমরাহ। কিন্তু তাঁর চোট কি তাঁকে পিছিয়ে দিচ্ছে? বুমরাহ কি আদৌ ভারতের অধিনায়ক হওয়ার যোগ্য?
সিডনিতে দ্বিতীয় দিন পুরো সময় মাঠে থাকতে পারেননি জসপ্রীত বুমরাহ। মধ্যাহ্নভোজের বিরতির পরেই মাঠ ছাড়তে হয়েছে তাঁকে। জানা গিয়েছে, পিঠের পেশিতে চোট পেয়েছেন তিনি। স্ক্যান করা হয়েছে। রবিবার তিনি ব্যাট করতে পারবেন বলে জানা গিয়েছে। তবে বল করতে পারবেন কি না তা এখনও নিশ্চিত নয়। রবিবার সকালে চোট পরীক্ষা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। বুমরাহ যদি বল করতে না পারেন তা হলে বড় ধাক্কা খাবে ভারত। কারণ, চলতি সিরিজ়ে এখনও পর্যন্ত ৩২টি উইকেট নিয়েছেন বুমরাহ। সিরিজ়ের সর্বাধিক উইকেটশিকারিকে ছাড়া সিডনি জয় কঠিন হয়ে পড়বে। বুমরাহের এই চোটপ্রবণতার কারণেই কি রোহিতের পর তাঁর পাকাপাকি অধিনায়ক হওয়ার সম্ভাবনা কমছে?
বুমরাহের চোটপ্রবণতা নতুন নয়। ২০২২-২৩ সালেও পিঠের পেশির চোট ভুগিয়েছে তাঁকে। চোটের কারণে ২০২২ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে পারেননি। ২০২৩ সালের আইপিএলেও ছিলেন না। সেই বছর এক দিনের বিশ্বকাপের আগে পর্যন্ত মাঠের বাইরে থাকতে হয়েছে তাঁকে। পিঠের পেশিতে অস্ত্রোপচার হয়েছে। দীর্ঘ দিন বেঙ্গালুরুতে জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে রিহ্যাব করতে হয়েছে। তার পরে আবার ধীরে ধীরে মাঠে ফিরেছেন তিনি। সিডনিতে আরও এক বার সেই পিঠের পেশিতেই চোট পেয়েছেন ভারতীয় পেসার। সেই কারণেই উদ্বেগ বাড়ছে।
বুমরাহের এই চোটপ্রবণতার কারণে তাঁকে নিয়ে ধীরে চলো নীতি নিয়েছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। বেছে বেছে খেলেন তিনি। যে সিরিজ় ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, সেখানে বিশ্রাম পান। অজিত আগরকর ভারতের নির্বাচক প্রধান হওয়ার পর নির্দেশ দিয়েছিলেন, সকল ক্রিকেটারকে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলতে হবে। ব্যতিক্রম বুমরাহ। দেশের মাটিতে নিউ জ়িল্যান্ড সিরিজ়ের আগে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বিশ্রাম দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। অস্ট্রেলিয়া সিরিজ়ের কথা মাথায় রেখেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। সেই সিদ্ধান্ত যে একেবারে সঠিক ছিল তা চলতি সিরিজ়ে বোঝা যাচ্ছে। সিরিজ়ের সর্বাধিক উইকেটের মালিক তিনি।
কিন্তু একজন অধিনায়ক বেছে বেছে সিরিজ় খেলতে পারেন না। তাঁকে প্রতিটি ম্যাচে দলকে নেতৃত্ব দিতে হয়। ব্যক্তিগত কারণে যখনই বিরাট কোহলি বা রোহিত শর্মা কোনও টেস্ট খেলেননি তাঁরা সমালোচিত হয়েছেন। ভারতে ক্রিকেটকে ধর্ম হিসাবে দেখেন সকলে। তাই সেখানে কোনও রকম অবহেলা বরদাস্ত করেন না সমর্থকেরা। বুমরাহের ক্ষেত্রেও সেটাই সমস্যা। অনেক বিশেষজ্ঞ তাঁকে লম্বা দৌড়ের ঘোড়া বলে মনে করেন না। তাঁদের মতে, অদ্ভুত বোলিং অ্যাকশনের জন্য একটানা দীর্ঘ সময় খেলতে পারবেন না তিনি। সেই কারণেই হয়তো তাঁকে বেছে বেছে খেলানো হয়। কিন্তু একজন অধিনায়কের সেই সুবিধা নেই। তাঁকে দেখলে হয় না, প্রতিপক্ষ জ়িম্বাবোয়ে না অস্ট্রেলিয়া। রোহিতের পর সেই দায়িত্ব বুমরাহকে দিলে তিনি টানা খেলতে পারবেন তো? তিনি কি সত্যিই অধিনায়ক হওয়ার যোগ্য? তাঁর চোট কিন্তু তাঁকে পিছিয়ে দিচ্ছে অনেকটাই।