অর্ধশতরানের পর করুণ নায়ার। ছবি: পিটিআই।
ভারতীয় ক্রিকেটে আবার ফিরে এলেন করুণ নায়ার।
লোকচক্ষুর আড়ালে চলে গিয়েছিলেন টেস্টে ত্রিশতরান করা ব্যাটার। রবিবার জসপ্রীত বুমরাহকে স্কোয়ার লেগের উপর দিয়ে যে ছক্কাটা মারলেন, সেটাই তাঁকে আবার ভারতীয় ক্রিকেটে চর্চায় ফিরিয়ে আনল।
এই মুহূর্তে ভারতের সেরা পেসার বুমরাহ। তাঁর ওভারেই করুণ নিলেন ১৮ রান। দুটি ছক্কা এবং একটি চার মারেন ওই ওভারে। বুমরাহের প্রথম বলে ছক্কাটা মারার পর হার্দিক পাণ্ড্যকে দেখা গেল হাততালি দিতে। পরের ছক্কাটা মারার সময় অবাক হয়ে বলের উড়ে যাওয়া দেখছিলেন বুমরাহ নিজে। ওই একটা ওভারই আবার প্রাসঙ্গিক করে দিল করুণকে।
২০২২ সালে শেষ বার আইপিএল খেলেছিলেন করুণ। শেষ বার অর্ধশতরান করেছিলেন ২০১৮ সালে। তার পর তিনটি মরসুমে আইপিএল খেলার সুযোগ পান। মাত্র আটটি ম্যাচ খেলেছিলেন ওই তিন মরসুম মিলিয়ে। করেছিলেন ৩৭ রান। রবিবার মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে অর্ধশতরান করলেন করুণ। সাত বছর পর আইপিএলে ৫০ রানের গণ্ডি পার করলেন তিনি। ইনিংস শেষ করলেন ৮৯ রানে।
এই মরসুমে ফর্মে রয়েছেন করুণ। বিজয় হজারে ট্রফিতে তাঁর পারফরম্যান্স সেই প্রমাণই দিচ্ছে। অপরাজিত ১১২, অপরাজিত ৪৪, অপরাজিত ১৬৩, অপরাজিত ১১১, ১১২, অপরাজিত ১২২, অপরাজিত ৮৮ এবং ২৭। আট ইনিংসে মাত্র দু’বার আউট। একার হাতে ফাইনালে তুলেছিলেন বিদর্ভকে। ট্রফি জেতাতে না পারলেও বুঝিয়ে দিয়েছিলেন সাদা বলের ক্রিকেটে কী করতে পারেন তিনি।
ভারতের হয়ে করুণ শেষ বার খেলেছিলেন ২০১৭ সালে। ছ’টি টেস্টে করেছিলেন ৩৭৪ রান। মনে রাখতে হবে এর মধ্যে একটি ম্যাচে ৩০৩ রান করে অপরাজিত ছিলেন করুণ। তার পরেও ভারতীয় দল থেকে বাদ পড়তে হয়েছিল তাঁকে। টেস্টে তিনশো করার পর বাদ পড়ার ঘটনা খুব একটা দেখা যায় না। করুণ ছিলেন সেই ব্যতিক্রম চরিত্র।
ধীরে ধীরে ভারতীয় ক্রিকেট মানচিত্রে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গিয়েছিলেন করুণ। ঘরোয়া ক্রিকেটেও সে ভাবে নজর কাড়তে পারেননি সেই সময়। বিজয় হজারে ট্রফিতে ধারাবাহিক রান করে আইপিএলের দলগুলির নজরে আসেন করুণ। নিলামে ৫০ লক্ষ টাকায় তাঁকে কিনেছিল দিল্লি। আগেও এই দলের হয়ে খেলেছিলেন তিনি। পুরনো দলে ফিরেতে পেরে খুশি চেপে রাখেননি। বলেছিলেন, “দিল্লি ক্যাপিটালসে ফিরতে পেরে খুশি। আশা করছি প্রথম একাদশে থাকব। ঘরোয়া ক্রিকেটে যে মানসিকতা নিয়ে খেলেছি, আইপিএলেও সেটাই করতে চাই। খেলার ধরন বদলাব না। আমি ছন্দে রয়েছি। সেই ছন্দই ধরে রাখতে চাই।” আশা করলেও প্রথম একাদশে সুযোগ পাননি। রবিবারের আগে কোনও ম্যাচে তাঁকে খেলায়নি দিল্লি। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বিরুদ্ধেও নেমেছিলেন ইমপ্যাক্ট ক্রিকেটার হিসাবে। সত্যিই ছাপ রেখে গেলেন করুণ।
রবিবার শুধু বুমরাহ নন, করুণের বিধ্বংসী ইনিংসের শিকার হলেন ট্রেন্ট বোল্ট, হার্দিক পাণ্ড্য, দীপক চহরের মতো বোলারেরাও। শেষ পর্যন্ত করুণকে থামান মিচেল স্যান্টনার। কিউয়ি স্পিনারের বলে বোল্ড হন তিনি। দিল্লির হারের আশঙ্কা শুরু ওখান থেকেই। শেষবেলায় রান আউটের হ্যাটট্রিক করে এ বারের আইপিএলে প্রথম হার দিল্লির।
মুম্বইয়ের ২০৫ রান তোলার নেপথ্যে অবশ্যই ওপেনার রিয়ান রিকেলটন। ২৫ বলে ৪১ রান করেন তিনি। যে ঝড় শুরুতেই তুলে দিয়েছিলেন রিকেলটন, সেটা গোটা ইনিংসে ধরে রাখলেন সূর্যকুমার যাদব (২৮ বলে ৪০ রান), তিলক বর্মা (৩৩ বলে ৫৯ রান) এবং নমন ধীর (১৭ বলে ৩৮ রান)। তাঁদের দাপটে ২০৫ রান তুলে নেয় মুম্বই।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে দিল্লির হয়ে দাপট দেখান করুণ। বাংলার অভিষেক পোড়েলের সঙ্গে ১১৯ রানের জুটি গড়েন তিনি। যদিও দিল্লির বাকি ব্যাটারেরা সেই ইনিংসের সম্মান দিতে পারলেন না। ১৯৩ রানে অল আউট হয়ে গেল দিল্লি। এ বারের আইপিএলে প্রথম বার হারল দিল্লি। ২ পয়েন্ট পেল মুম্বই।