Chetan Sharma

বার বার বিতর্ক, ভুল সিদ্ধান্ত! বরখাস্ত হওয়া চেতনকেই প্রধান নির্বাচক করে বোর্ডের প্রহসন

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের ব্যর্থতার কয়েক দিন পরেই গোটা নির্বাচক কমিটিকে বরখাস্ত করা হয়। অনেকেই ভেবেছিলেন, ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড বুঝি এ বার কড়া হওয়ার দিকে এগোচ্ছে। কোথায় কী? চেতনই আবার চেয়ারম্যান হিসাবে ফিরলেন।

Advertisement
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০২৩ ১৮:১৭
তিন মাস আগে বরখাস্ত হওয়া চেতনকে শনিবার শুধু আবার নির্বাচক করাই নয়, বসিয়ে দেওয়া হল চেয়ারম্যান হিসাবে!

তিন মাস আগে বরখাস্ত হওয়া চেতনকে শনিবার শুধু আবার নির্বাচক করাই নয়, বসিয়ে দেওয়া হল চেয়ারম্যান হিসাবে! ফাইল ছবি

ভারতের নির্বাচক কমিটি বেছে নেওয়া হল শনিবার। পাঁচ সদস্যের নির্বাচন কমিটি বেছে নিয়েছেন ক্রিকেট উপদেষ্টা কমিটির অশোক মলহোত্র, যতীন পরাঞ্জপে এবং সুলক্ষণা নায়েক। চেতন শর্মাই আবার ফিরেছেন নির্বাচক কমিটির চেয়ারম্যান হিসাবে। সঙ্গে রয়েছেন শিব সুন্দর দাস, সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়, সলিল আঙ্কোলা এবং শ্রীধরন শরথ। চেতনের পুনর্নিয়োগ নিয়ে বিস্মিত অনেকে।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের ব্যর্থতার কয়েক দিন পরেই গোটা নির্বাচক কমিটিকে বরখাস্ত করা হয়। অনেকেই ভেবেছিলেন, ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড বুঝি এ বার কড়া হওয়ার দিকে এগোচ্ছে। কোথায় কী? কিছু দিন পরেই জানা গেল, চেতন আবার নির্বাচক হওয়ার জন্যে আবেদন করেছেন। এবং তাঁকে আবেদন করতে বলেছেন বোর্ডেরই কিছু কর্তা! তার পরেই উঠল প্রশ্ন, নির্বাচক কমিটি ছেঁটে ফেলা কি আদতে প্রহসন ছিল? ক্রিকেট সমর্থকরা যাতে কিছু দিনের জন্যে শান্তিতে থাকতে পারেন, তার চেষ্টা করা হল?

Advertisement

তিন মাস আগে বরখাস্ত হওয়া চেতনকে শনিবার শুধু আবার নির্বাচক করাই নয়, বসিয়ে দেওয়া হল চেয়ারম্যান হিসাবে! অতীতে দল নির্বাচন করতে গিয়ে বার বার প্রশ্নের মুখে পড়েছেন চেতন। দল বেছে নিয়েছেন, সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন, সবই ঠিক। কিন্তু কোনও ক্রিকেটারকে বাদ দেওয়া হলে তার যথাযথ উত্তর দিতে পারেননি।

তাঁর আমলে ভারতীয় ক্রিকেটে ‘বিশ্রাম’ শব্দটি বহুল প্রচলিত হয়েছে। ক্রিকেটপ্রেমীরা মজা করে বলে থাকেন, এখন ভারতীয় ক্রিকেটে কেউ বাদ যান না। সবাইকে ‘বিশ্রাম’ দেওয়া হয়। রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি, কেএল রাহুলের মতো বড় নামই হোক বা হর্ষল পটেল, আরশদীপ সিংহ— ধারাবাহিক ভাবে খেলতে না পারলে সাময়িক ভাবে বাদ দেওয়াটাই দস্তুর। কিন্তু এখন আর কাউকেই বাদ দেওয়া হচ্ছে না। বলা হচ্ছে তিনি বিশ্রামে গেলেন।

চেতন শর্মার আমলে আরও কিছু বিষয় প্রশ্নের মুখে পড়েছে। প্রথমত, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। ভারতীয় দল আগামী দিনে কেমন দাঁড়াবে, কী ভাবে খেলবে এবং কাদের বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে, সে ব্যাপারে একেবারেই ওয়াকিবহাল থাকতে দেখা যায়নি তাঁকে। ২০২১-এর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আমিরশাহির মতো ঘূর্ণি পিচ থাকা সত্ত্বেও দলে নেওয়া হয়নি যুজবেন্দ্র চহালকে। আবার ২০২২-এ অস্ট্রেলিয়ায় মতো গতিশীল এবং বাউন্সি পিচে খেলা থাকা সত্ত্বেও নেওয়া হয় রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে। অনেকেই এই নির্বাচনগুলির অর্থ বুঝতে পারেননি। প্রত্যাশিত ভাবেই চেতনের থেকেও কোনও ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। তার আগে সঞ্জু স্যামসনকে না নেওয়া নিয়েও বিতর্ক হয়েছে। ভারতের বহু প্রাক্তন ক্রিকেটার দীর্ঘ দিন ধরে উমরান মালিককে দলে নেওয়ার কথা বলছিলেন। তবু উমরানকে দলে নেওয়া হচ্ছিল না।

আরও একটি বিষয় হল ফিটনেস সম্পর্কে জ্ঞানের অভাব। ২০২১ বিশ্বকাপে যশপ্রীত বুমরা এবং হার্দিক পাণ্ড্যের চোট সম্পর্কে কোনও ধারণাই ছিল না তাঁর। প্রতিযোগিতার আগে চেতন জানিয়েছিলেন, হার্দিক বল করতে পারবেন। কিন্তু গোটা প্রতিযোগিতাতেই হার্দিককে দেখে বোঝা গিয়েছিল, ফিটনেসের চূড়ান্ত অভাব রয়েছে। গত বছর বিশ্বকাপের আগে চোটের কারণে এশিয়া কাপে পাওয়া যায়নি বুমরাকে। তবু তাঁকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দলে রাখা হয়। কিছু দিন বাদেই জানা যায়, বুমরা বিশ্বকাপে খেলতে পারবেন না। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজ়‌ে জায়গা পাননি সরফরাজ আহমেদ। নির্বাচকরা বলেন, সরফরাজকে ‘নজরে’ রাখা হচ্ছে।

কোহলি যখন টি-টোয়েন্টির অধিনায়কত্ব ছাড়েন, তখন তাঁর সঙ্গে ভাল করে কথা বলেনি নির্বাচক কমিটি। আচমকা দায়িত্ব দিয়ে দেওয়া হয় রোহিতকে। তার পরে জনসমক্ষে কোহলি এবং চেতন একে অপরের উল্টো কথা বলতে থাকেন। সেই বিতর্কে জড়িয়ে গিয়েছিলেন তৎকালীন বোর্ড সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ও।

চেতন ফিরতে পারেন শুনে কিছু দিন আগেই বাংলার প্রাক্তন ক্রিকেটার সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায় আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেছিলেন, “ব্যাপারটা খুবই অদ্ভুত। তিন মাস আগে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হল। তার পর আবার তাঁকেই চাকরি দেওয়ার জন্য সাক্ষাৎকার নেওয়া হচ্ছে। এমন হয় নাকি!” একই সুর প্রাক্তন নির্বাচক দেবাঙ্গ গান্ধীর গলাতেও। তিনি বলেন, “এটা সত্যিই অদ্ভুত। তবে কারও যদি মনে হয় তিনি আবার আবেদন করবেন সেটা করতেই পারেন। নেওয়া হবে কি না সেটা উপদেষ্টা কমিটি ঠিক করবে।”

কার্যত দেখা গেল, সসম্মানে চেয়ারম্যানের মসনদে ফিরলেন চেতন। আগামী দিনে এই পদক্ষেপ ভারতীয় ক্রিকেটকে এগিয়ে নিয়ে যাবে নাকি পিছিয়ে দেবে, তা সময়ই বলবে।

আরও পড়ুন
Advertisement