বাংলাদেশের জয়ের দুই কারিগর শান্ত (বাঁ দিকে) এবং শাকিব। ছবি: পিটিআই।
বিশ্বকাপে মুখোমুখি হয়েছিল এশিয়ার দুই দেশ। এক দলের কাছে ছিল মরণবাঁচন, আর এক দলের কাছে নিয়মরক্ষার। সপ্তাহের প্রথম কাজের দিনে আপাত গুরুত্বহীন এই ম্যাচের দিকে চোখ রাখেননি অনেকেই। কিন্তু সেই ম্যাচেরই পরতে পরতে জড়িয়ে থাকল নাটক। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ‘টাইম্ড আউট’ নামের নিয়ম যেমন প্রথম বার দেখা গেল, তেমনই অ্যাঞ্জেলো ম্যাথেউজ এবং শাকিব আল হাসানের লড়াই উপভোগ্য হয়ে উঠল। দিনের শেষে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে দিল বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার তোলা ২৭০ রান বাংলাদেশ তুলে দিল তিন উইকেট বাকি থাকতেই। ১৯৯৬ সালে বিশ্বকাপজয়ী শ্রীলঙ্কা বিদায় নিল এ বারের বিশ্বকাপ থেকে।
টসে জিতে আগে বল করার সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশের অধিনায়ক শাকিব। সিদ্ধান্ত ভুল ছিল না। শুরুতেই কুশল পেরেরাকে ফেরান শোরিফুল ইসলাম। কিন্তু দ্বিতীয় উইকেটে ৬১ রানের জুটি হয় পাথুম নিসঙ্ক এবং কুশল মেন্ডিসের। দু’জনেই পর পর দু’ওভারে ফিরে যাওয়ার পর কিছুটা চাপে পড়ে শ্রীলঙ্কা। কিন্তু সাদিরা সমরবিক্রম এবং চরিত আসালঙ্ক দলের ধস সামলান।
দলের ১৩৫ রানের মাথায় সমরবিক্রম (৪১) ফেরার পরেই নাটক। মাঠে নামতে একটু দেরি করেন ম্যাথেউজ। ক্রিজে এসেই দেখেন হেলমেটের স্ট্র্যাপ ছেড়া। তা বদলানোর জন্যে ডাগআউট থেকে কাউকে ডাকেন। কিন্তু তার মধ্যেই আইসিসি-র নিয়ম ভঙ্গ করেছিলেন তিনি। দু’মিনিটের মধ্যে বল খেলার জন্যে তৈরি থাকতে হত। তা করেননি। শাকিবের আবেদনের ভিত্তিতে আম্পায়ার ম্যাথেউজকে ‘টাইম্ড আউট’ দেন। মাথা নাড়তে নাড়তে সাজঘরে ফেরেন ম্যাথেউজ। বাউন্ডারির দড়ি পেরিয়েই হেলমেট, গ্লাভস ছুড়ে ফেলে দেন। ফেরার পথে বাংলাদেশের শ্রীলঙ্কাজাত কোচ চন্ডিকা হাতুরুসিঙ্ঘের সঙ্গেও একপ্রস্থ কথার আদান-প্রদান হয়।
ম্যাথেউজ ফেরায় শ্রীলঙ্কা ১৩৫-৫ হয়ে যায়। মনে হচ্ছিল ২০০-ও পেরোবে না। কিন্তু ধনঞ্জয় ডি’সিলভা (৩৪) এবং মাহিশ থিকশানাকে (২২) নিয়ে বুক চিতিয়ে লড়াই করেন আসালঙ্ক। ৬টি চার এবং ৫টি ছয়ের সাহায্যে শতরান করেন তিনি। শেষ ওভারে আউট হন।
২৮০ রান তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশও বেকায়দায় পড়েছিল। দুই ওপেনার তানজিদ হাসান (৯) এবং লিটন দাস (২৩) সাজঘরে ফেরেন ৪১ রানের মধ্যে। কিন্তু বাংলাদেশের ধস আসতে দিলেন না শাকিব এবং নাজমুল হোসেন শান্ত। তৃতীয় উইকেটে তাঁদের ১৬৯ রানের জুটি বাংলাদেশের জয়ের রাস্তা গড়ে দিল।
নাটকের তখনও বাকি ছিল। ব্যক্তিগত ৮২ রানের মাথায় শাকিব ফেরেন সেই ম্যাথেউজের বলে। তার পরেই ব্যঙ্গ করে নিজের হাতঘড়ি দেখার অভিনয় করতে থাকেন ম্যাথেউজ। ‘টাইম্ড আউট’-এ যে তিনি কতটা ক্ষুব্ধ সেটা বুঝিয়ে দেন। তার আগে ২৬তম ওভারে বলের বদল নিয়ে আম্পায়ারদের সঙ্গে একপ্রস্থ ঝগড়া হয় শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটারদের।
শাকিবের পর নাজমুলও (৯০) ফিরতে কিছুটা চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। দলের দুই প্রতিষ্ঠিত ব্যাটার মাহমুদুল্লাহ (২২) এবং মুশফিকুর রহিমও (১০) শেষ পর্যন্ত ক্রিজে থাকতে পারেননি। এক সময় সাত উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। তবে তৌহিদ হৃদয় এবং তানজিম হাসান দলকে জিতিয়ে দেন।