India U-19

ভারতীয় অনূর্ধ্ব-১৯ শিবিরে ‘ফুড ডেলিভারি বয়’ রাহুল

বেঙ্গালুরুর জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে শুরু হবে শিবির। এখান থেকেই অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের দল বাছাই হবে। রাহুলের কাছে দুপুরে ফোন আসে। সেই সময় কুমারটুলি ইনস্টিটিউটের হয়ে ব্যাট করছিলেন।

Advertisement
ইন্দ্রজিৎ সেনগুপ্ত 
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০২৩ ০৮:৪৩
Rahul Prasad from Sodepur

স্বপ্নপূরণ: অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলতে চান রাহুল।  — নিজস্ব চিত্র।

মাত্র ১৮ বছর বয়স। কিন্তু স্বপ্ন আকাশ ছোঁয়া। শুধু মাঠেই তাঁকে লড়াই করতে হয়নি। লড়াইটা দারিদ্রের সঙ্গেও।

সোদপুরের রাহুল প্রসাদ অনূর্ধ্ব-১৯ ভারতীয় শিবিরে ডাক পেলেন। তাঁর সঙ্গেই বাংলা থেকে সেই শিবিরে যাচ্ছেন সুমিত নাগ ও সৈয়দ ইরফান আফতাব। তাঁদের প্রত্যেকের জীবনেই লুকিয়ে আছে সংগ্রাম। কিন্তু রাহুলের লড়াই অনুপ্রাণিত করতে পারে উঠতি ক্রিকেটারদের।

Advertisement

গত বছর মা’কে হারিয়েছেন রাহুল। তার তিন দিনের মধ্যে কল্যাণীতে বাংলার ট্রায়াল ছিল। রাহুল ট্রায়ালে যাওয়ার অবস্থায় ছিলেন না। কিন্তু তাঁর ছোটবেলার কোচ বীরেন্দ্র প্রতাপ সিংহ জোর করে পাঠান। এবং তাঁর অফস্পিন ও ব্যাটিংয়ে কার্যত মুগ্ধ হয়ে নির্বাচকেরা বাংলা দলে সুযোগ দেন। যে ঘটনার পরে ১৮ বছরের তরুণের জীবন হঠাৎ পাল্টে যেতে শুরু করে।

বাংলা শিবিরে সুযোগ পাওয়ার আগে সংসার চালানোর দায়িত্বও নিয়েছিলেন রাহুল। বাবা ট্যাক্সিচালক। সিএবিতেও গাড়িচালকের কাজ করেছেন। ছেলে অনুশীলন করার সময় বাবা হরিকিষন প্রসাদ সিএবি কর্তাদের বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছে দিতেন গাড়ি চালিয়ে। শুধুমাত্র ট্যাক্সি চালিয়ে সংসারের খরচ চালানো সম্ভব হচ্ছিল না রাহুলের বাবার। তাই রাহুল নিজে সকালে ক্রিকেট খেলে রাতে সাইকেলে করে খাবার ডেলিভারি দিতে শুরু করেন। সোদপুরের ‘সুইগি বয়’ এ বার ভারতীয় অনূর্ধ্ব-১৯ শিবিরে।

বেঙ্গালুরুর জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে শুরু হবে শিবির। এখান থেকেই অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের দল বাছাই হবে। রাহুলের কাছে দুপুরে ফোন আসে। সেই সময় কুমারটুলি ইনস্টিটিউটের হয়ে ব্যাট করছিলেন। বিকেলের দিকে জানতে পারেন, ভাল খবরটা!

আনন্দবাজারকে রাহুল বলছিলেন, ‘‘ছোটবেলা থেকে কষ্ট করেছি শুধুমাত্র এক বার ভারতীয় দলে খেলব বলে। একটা সময় ছিল, বাবার পক্ষে সব দিক সামলানো সম্ভব হত না। চেষ্টা করতাম খাওয়া-দাওয়া কমিয়ে থাকার। মরসুম শেষ হওয়ার পরে ঘরে বসে থাকার কোনও রকম বিকল্পও ছিল না। সোদপুর চত্বরে ‘ডেলিভারি বয়’-এর কাজ করতাম। বাইক নেই। প্রত্যেক দিন ২২-২৪ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে খাবার পৌঁছে দিতে হত। পরের দিন ম্যাচ থাকলে খুব কষ্ট হত। চার মাসের বেশি এই কাজটা করতে পারিনি।’’

রাহুলের ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করার লক্ষ্যে তাঁর ছোটবেলার কোচ বীরেন্দ্র প্রতাপ ভর্তি করেন বারাসতের এক কোচিং ক্যাম্পে। সেখানে কোচ আব্দুল মোনায়েমের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ হয়। তরুণের কথায়, ‘‘আব্দুল স্যর আমার থেকে পারিশ্রমিক নেননি কখনও। ভবানীপুর ক্লাবের হয়ে অনূর্ধ্ব-১৮ প্রতিযোগিতা খেলতে দিয়েছেন। সেই দলকে নেতৃত্বও দিয়েছি। দুই কোচ আমাকে অনেক সাহায্য করেছে। আমার লক্ষ্য তাঁদের কিছু ফিরিয়ে দেওয়ার।’’

রাহুলের কোচ মোনায়েম বলছিলেন, ‘‘ওর মধ্যে হার-না-মানা লড়াই করার ক্ষমতা আছে। মায়ের মৃত্যুর পরেও যে ভাবে ও বাংলার ট্রায়ালে পারফর্ম করেছে, তা সত্যি মনে থাকবে। ওর লড়াই দেখে অনুপ্রাণিত হতে পারে অন্য তরুণ ক্রিকেটারেরা। আশা করি, রাহুল অনেক দূর যাবে।’’

বাংলা থেকে আগেও অনেকে অনূর্ধ্ব-১৯ ভারতীয় শিবিরে গিয়েছেন। ঈশান পোড়েল, শ্রীবৎস গোস্বামী, রবিকান্ত সিংহরা বিশ্বকাপ জিতেও ফিরেছেন। কিন্তু অনেকেই এই পর্যায়ের পরে নিজের খেলা ধরে রাখতে পারেন না। রাহুলের ভবিষ্যতে কী লেখা আছে তা সময়ই বলবে।

আরও পড়ুন
Advertisement