Messi and Barcelona

‘অতীত’ মেসিকেই আঁকড়ে বার্সেলোনা-বিপণন, ব্রাত্য মারাদোনা, লিয়োর ঘরে উঁকি আনন্দবাজার অনলাইনের

লিওনেল মেসির ঘর। আসলে লিওনেল মেসির প্রাক্তন আবাস। বার্সেলোনা ফুটবল ক্লাবের ক্যাম্প ন্যু স্টেডিয়াম। গত জুন মাস থেকে যা ভেঙে ফেলে নতুন করে তৈরির কাজ শুরু হয়েছে।

Advertisement
অনিন্দ্য জানা
বার্সেলোনা শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০১:১৩
অতীত! ক্যাম্প ন্যু-তে গোলের পর মেসির উচ্ছ্বাস। এমন দৃশ্য বার বার দেখেছে দুনিয়া।

অতীত! ক্যাম্প ন্যু-তে গোলের পর মেসির উচ্ছ্বাস। এমন দৃশ্য বার বার দেখেছে দুনিয়া। —ফাইল চিত্র।

মূল শহর থেকে খানিক বাইরে। অনেকটা সল্টলেকের যুবভারতীর মতো। ফাঁকায় ফাঁকায়। দূরে পাহাড় দেখা যাচ্ছে। সেই দিগন্তে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে এক অতিকায় স্টেডিয়ামের হাড় বার-করা অবয়ব।

Advertisement

লিওনেল মেসির ঘর। আসলে লিওনেল মেসির প্রাক্তন আবাস। বার্সেলোনা ফুটবল ক্লাবের ক্যাম্প ন্যু স্টেডিয়াম। গত জুন মাস থেকে যা ভেঙে ফেলে নতুন করে তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। বার্সেলোনার অনুশীলন এখন হয় শহরের অন্য প্রান্তে অলিম্পিক্স স্টে়ডিয়ামে। ক্যাম্প ন্যু (এখন ‘স্পটিফাই ক্যাম্প ন্যু’) দাঁড়িয়ে রয়েছে অতীতের কঙ্কাল হয়ে।

আসলে ক্যাম্প ন্যু এখনও অতীতেই রয়েছে। সেই অতীত জুড়ে একটিই নাম— লিওনেল মেসি। বার্সেলোনা ফুটবল ক্লাবের মিউজ়িয়ামে তাঁর জন্য বরাদ্দ গোটা একটা দেওয়াল। সেখানে কাচের ও পারে রক্ষিত তাঁর ১০ নম্বর ফুলস্লিভ জার্সি। তার এক দিকে সাতটি চোখধাঁধানো ব্যালন দি’অর। অন্য দিকে ছ’টি সোনার বুট। সেই দেওয়ালের এক পাশে তাঁর প্রমাণ সাইজ়ের পূর্ণাবয়ব অতীত ছবি। যেখানে তিনি দাঁড়িয়ে রয়েছেন বার্সার জার্সি তুলে ধরে।

এখনও মেসিময় বার্সা। ক্যাম্প ন্যু-তে মেসির দেওয়াল।

এখনও মেসিময় বার্সা। ক্যাম্প ন্যু-তে মেসির দেওয়াল। —নিজস্ব চিত্র।

ছোটবেলা থেকে বার্সেলোনা মেসির ঘর। যে ঘর তিনি চোখের জলে ছেড়ে চলে গিয়েছেন ২০২১ সালে। বার্সেলোনা ফুটবল ক্লাব তাঁর কাছে এখন অতীত। কিন্তু কী আশ্চর্য! মেসির কাছে বার্সেলোনা অতীত হতে পারে। তবে বার্সেলোনার কাছে মেসি একেবারেই অতীত নন। তিনি এখনও এই ক্লাবের কাছে সবচেয়ে মহার্ঘ বিপণনযোগ্য পণ্য। তাদের উৎপাদিত সেরা ‘প্রডাক্ট’। তাঁকে ঘিরে, তাঁকে বিক্রি করেই এখনও বাঁচে বার্সেলোনা ফুটবল ক্লাব।

এতটাই যে, তাঁর চেয়ে উঁচু বা তাঁর সমকক্ষ কোনও বিগ্রহের অস্তিত্ব স্বীকারেও সম্ভবত আপত্তি বার্সা কর্তৃপক্ষের!

দিয়েগো মারাদোনাও বার্সেলোনাতে ১৯৮২ থেকে ১৯৮৪ সময়কালে খেলেছেন। কিন্তু বার্সেলোনার মাঠে তিনি মেসির কাছে পাঁচ গোল খাবেন। গোটা মিউজ়িয়ামের কোথাও বিশ্ব ফুটবলের রাজপুত্র নেই। বার্সায় মারাদোনা নেহাতই দুয়োরানির সন্তান। না কি তা-ও নয়? জাদুঘরে মারাদোনার নামগন্ধও নেই। সেখানে কেবল অনতি-অতীতের সাফল্যের ছবি। ট্রফির পর ট্রফি। মেসির জাদু-দেওয়াল। জাভি, জেরার, পিকে, ইনিয়েস্তা— সকলে রয়েছেন। কিন্তু বিশ্ব ফুটবলের রাজপুত্রের কোনও ছবি নেই। তাঁর কোনও কথাও নেই। মারাদোনা অনেক দূরের অতীত। মেসি কাছাকাছি সময়ের বলেই কি?

বার্সার ঘরের মাঠ ক্যাম্প ন্যু-র রেপ্লিকা।

বার্সার ঘরের মাঠ ক্যাম্প ন্যু-র রেপ্লিকা। —নিজস্ব চিত্র।

ক্যাম্প ন্যু ভেঙে নতুন করে গড়া হচ্ছে ঠিকই (শেষ হতে হতে ২০২৪ সালের নভেম্বর। তেমনই জানালেন সেখানকার কর্মীরা)। কিন্তু ভাঙাচোরা স্টেডিয়ামের পাশে বার্সেলোনার মিউজ়িয়ামটা দেখলেই তাক লেগে যায়! সোমবার কাজের দিনের ভরদুপুরেও সেখানে কাতারে কাতারে ফুটবল-পাগল (আমাদের শহরে বা দেশে ‘ফুটবল উন্মাদনা শব্দটা খুব আলটপকা ব্যবহার করা হয়। ভুল হয়) ভিড় জমিয়েছেন। না কি তাঁরা আসলে ফুটবল পর্যটক? পরনে বার্সেলোনার জার্সি। চড়া রোদে আরও চড়া দামের টিকিট কেটে তাঁরা মিউজ়িয়ামে ঢুকছেন। বিশাল জায়গা নিয়ে সেই জাদুঘর। সারি সারি ট্রফি, ১২৪ বছরের অতীত থরে থরে সাজানো। সাম্প্রতিক অতীতের ১০ বছরের সময়কালের জার্সি, বুট, স্মারক— সব কাচের শো কেসে পর পর রাখা রয়েছে। তার সামনে তদ্গত হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন ফুটবলঅন্তপ্রাণেরা। ছবি তুলছেন। বিড়বিড় করে গলা মেলাচ্ছেন পটভূমিকায় অনবরত বাজতে-থাকা ক্লাবের গানের সঙ্গে।

‘যত দূর যায় চোখ...’, বার্সার ট্রফি ক্যাবিনেট।

‘যত দূর যায় চোখ...’, বার্সার ট্রফি ক্যাবিনেট। —নিজস্ব চিত্র।

কিন্তু তাক লেগে গেল ‘স্পটিফাই ক্যাম্প ন্যু ৩৬০’ নামক গোলাকৃতি হলঘরটায় ঢুকে। এক ঝলকে বিড়লা তারামণ্ডলের মতো মনে হতে পারে। কিন্তু একেবারে ফাঁকা। মাথার উপরে কিছু নেই। মেঝের মতো ছাদও নিকষ কালো। শুধু চারদিকের দেওয়াল জুড়ে প্রায় ৫০ ফুট উঁচু ডিজিটাল স্ক্রিন। একটানা। তাতে অনবরত চলছে বিভিন্ন মুহূর্ত। কখনও মেসি ড্রিবল করে গোল করছেন, কখনও হেড করছেন জেরার পিকে। কখনও টিমের ট্রফিজয়ের উল্লাস। কখনও গ্যালারিতে সারি সারি উদ্বিগ্ন মুখ। গমগম করছে চারদিক। কখনও মনে হচ্ছে, ক্যাম্প ন্যু ফুটবল স্টেডিয়ামের একেবারে সেন্টার সার্কলে দাঁড়িয়ে আছি। কখনও মনে হচ্ছে, বসে আছি সমর্থক-ঠাসা গ্যালারিতে। চারদিকে জনসমুদ্রের গর্জন। বিবশ করে দেওয়ার মতো। চারদিকের লোকজনকেও সম্মোহিতের মতো লাগছিল।

আরও একটু এগিয়ে চোখে থ্রি-ডি চশমা এঁটে ‘ভার্চুয়াল স্টেডিয়ামে’ ঢুকে পড়া যায়। বাইরের কাচের দেওয়ালের এ পার থেকে দেখা যাচ্ছিল, কয়েক জন পর্যটক চশমা এঁটে হাওয়ার সঙ্গে ফুটবল খেলছেন।

ঘটনাচক্রে, সেই একই সময়ে ভার্চুয়াল ক্যাম্প ন্যুয়ের সামনে দাঁড়িয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের সরকারি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সফররত মোহনবাগানের সচিব দেবাশিস দত্ত। তাঁকেও বিহ্বল লাগছিল। পরে যিনি স্বীকারই করে নেবেন, ‘‘আমরা অন্তত ২০০ বছর পিছিয়ে আছি!’’

ঘাস পর্যন্ত বিক্রি করছে বার্সা। তা নিয়ে চলছে রিয়াল সমর্থকদের বিদ্রুপও।

ঘাস পর্যন্ত বিক্রি করছে বার্সা। তা নিয়ে চলছে রিয়াল সমর্থকদের বিদ্রুপও। —নিজস্ব চিত্র।

এই পশ্চাদপদতা অবশ্য ফুটবলকে বিপণনে। বার্সেলোনার ক্যাম্প ন্যুয়ে ইউরো, যাকে বলে, উড়ছে। এমন কোনও বস্তু নেই, যা স্মারক হিসেবে বিক্রি হচ্ছে না। এমনকি, বন্ধ হয়ে যাওয়া ক্যাম্প ন্যু স্টেডিয়ামের ঘাসও! গোল বা চৌকো আকারের চাবির রিং, পেপারওয়েট। ২০ থেকে ৪০ ইউরো দাম। প্রতিটা স্ফটিকের মতো স্বচ্ছ। তার ভিতরে দেখা যাচ্ছে ঘন সবুজ ঘাস। কাচের উপরে লেখা— ‘ক্যাম্প ন্যুয়ের আসল ঘাস’। জাতশত্রু রিয়েল মাদ্রিদের সমর্থকেরা অবশ্য কটাক্ষ করছেন, ‘‘টাকা নেই বলে ঘাসও বিক্রি করছে!’’

এ ছাড়া জলের বোতল, ফুটবল ঝোলানো চাবির রিং, সোনার বুট, পুঁচকে পুঁচকে রবারের বল থেকে শুরু করে আসল সাইজ়ের ফুটবল, হোম এবং অ্যাওয়ে জার্সি, প্র্যাকটিস জার্সি, হুডি, উইন্ডচিটার, পুঁচকে পুঁচকে পুতুল, টর্চ, রেফ্রিজারেটর চুম্বক— কী নেই! এত লিখেও মনে হচ্ছে কিছু আইটেমের নাম বোধহয় এখনও বাকি থেকে গেল! সব কিছুতে বার্সেলোনার রং। বার্সেলোনার অভিজ্ঞান। বার্সেলোনার বিপণন।

দেওয়ালজোড়া ছবির কোলাজ আবেগ উস্কে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।

দেওয়ালজোড়া ছবির কোলাজ আবেগ উস্কে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। —নিজস্ব চিত্র।

জগদ্বিখ্যাত ট্রফির সঙ্গে ছবি তুলতে চান? পোলারয়েড ক্যামেরার ব্যবস্থা আছে। সে ছবি নিতে হবে এমন কোনও জোরাজুরি নেই। মিউজ়িয়াম দেখে ফেরার সময় বললেও হবে। তবে কি না, কে-ই বা আর এমন ছবি হারাতে চায়। নিজের মোবাইলে তুলতে পারবেন না। খপ করে এসে কর্মীরা ধরবেন। মুভি ক্যামেরা নিয়ে বিনা অনুমতিতে ঢোকা নিষেধ। ক্যাম্প ন্যুতে ঢোকার মুখে একটা খাঁচায় ‘রোবোকিপার’। রোবট গোলকিপার। আসলে যান্ত্রিক ভাবে নিয়ন্ত্রিত গোলরক্ষক। গোলপোস্টের নীচে দাঁড়ানো। আপনাকে ইউরো গুনে দিয়ে পেনাল্টি মারতে হবে। গোলপোস্টটা অবশ্য মাপে ছোট। ফলে ধাতব গোলকিপার ডাইনে বা বাঁয়ে ঝাঁপিয়ে গোল বাঁচাচ্ছে। আর ফুটবল-পাগলদের জেদ বাড়ছে। ফুটবল-বাণিজ্য কাকে বলে!

ঘুরতে ঘুরতে ক্ষুধার উদ্রেক হলে ‘বার্সা কাফে’ আছে। সেখানেও দেওয়ালে দেওয়ালে বিভোর করে দেওয়ার মত‌ো ছবি আর কোলাজ। আবেগ উস্কে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।

দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিল, এ আসলে একটা আলাদা সংস্কৃতি। দেবাশিস ঠিকই বলেছেন, আমরা অন্তত ২০০ বছর পিছিয়ে।

মেসির অন্যতম কর্মভূমি থেকে ৭.৯ কিলোমিটার দূরে মেসির আঁতুড়ঘর— লা মাসিয়া অ্যাকাডেমি। সেখানেও এক চক্কর ঘুরে আসা গেল। যদিও সেখানে ঢোকা বারণ। হাইওয়ের পাশে ফ্ল্যাটবাড়ির মতো বহুতল। আওতার ভিতরে একটা ফ্লাডলাইট লাগানো মাঠও আছে— যোহান ক্রুয়েফ স্টেডিয়াম। তার এক দিকে তিন ধাপের গ্যালারি উঠে গিয়েছে। বাইরের রাস্তা থেকে দেখা গেল, ঝলমল করছে মাঠটা।

লিও মেসি যেখানে বুটে বল ফিরে পেলেন।

লিও মেসি যেখানে বুটে বল ফিরে পেলেন। —নিজস্ব চিত্র।

‘লা মাসিয়া’ শব্দের অর্থ ফার্ম হাউস। খামারবাড়ি। বার্সেলোনার যুব অ্যাকাডেমিকে এই নামেই ডাকা হয়। আমরা বলব বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ‌ফুটবলার তৈরির কারখানা বলে। যে কারখানার শ্রেষ্ঠতম কীর্তি মেসি। ইউরোপে বার্সেলোনার সাফল্যের পিছনে এই কারখানা। যারা ২০০০ সাল এবং তার আশপাশের সময়ে একাধিক বিশ্বমানের ফুটবলার তৈরি করেছে।

কারখানার বদলে অবশ্য ‘গুরুকুল’ বললেও চলে। প্রায় ৩০০ কিশোর এবং তরুণ ফুটবলারের গুরুগৃহ। ২০১০ লা মাসিয়ার তিন ছাত্র ব্যালন ডি’অরের চূড়ান্ত পর্যায়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন— আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা, জ়াভি এবং মেসি। সারা পৃথিবীর মধ্যে কোনও ফুটবল অ্যাকাডেমি এই পর্যায়ের কৃতিত্ব দেখাতে পারেনি। শুরু হয়েছিল ১৯৭৯ সালে। শুরু করেছিলেন নেদারল্যান্ডসের ফুটবলার ক্রুয়েফ (জীবনের পরের দিকে বার্সেলোনায় থিতু হওয়া ক্রুয়েফ প্রয়াত হয়েছেন ২০১৬ সালে। তাঁর নামেই অ্যাকাডেমির ফুটবল স্টেডিয়ামের নামকরণ)। কাজ এবং লক্ষ্য ছিল একটাই— বার্সেলোনার জন্য বিশ্বমানের ফুটবলার তৈরি। তবে এই অ্যাকাডেমির ছাত্রেরা ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগেও খেলেছেন। খেলেছেন আর্সেনাল, ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডে। খেলেছেন জার্মানির স্টুটগার্টে, ফ্রান্সের বোর্দোতে।

জোহান ক্রুয়েফ স্টেডিয়াম। ডাচ টাচ জুড়ে রয়েছে কাতালানে।

জোহান ক্রুয়েফ স্টেডিয়াম। ডাচ টাচ জুড়ে রয়েছে কাতালানে। —নিজস্ব চিত্র।

১১ থেকে ১৮ বছর বয়সি প্রতিভার ইস্কুল হল লা মাসিয়া। সেই প্রতিভাদের অধিকাংশই আসে স্পেন থেকে। কিছু লাতিন আমেরিকা আর কিছু আফ্রিকা থেকেও। এমন অ্যাকাডেমি ইউরোপের আরও কিছু ক্লাবে আছে। কিন্তু সাফল্যে তারা লা মাসিয়ার কাছে গন্ডাখানেক গোল খাবে। সকাল সাড়ে ৭টায় গ্রুপ ব্রেকফাস্ট দিয়ে দিন শুরু। তার পরে স্থানীয় স্কুলে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টো পর্যন্ত ক্লাস। তার পরে কিছু শিক্ষার্থী দিবানিদ্রা দেয়। কিছু স্কুলের হোমওয়ার্ক করে।

বিকেল ৪টে থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত নিবিড় ফুটবল প্রশিক্ষণ। তার পরে জিমে কঠোর শরীরচর্চা। রাত ৯টায় গ্রুপ ডিনার। রাত ১০টায় আলো নেভে অ্যাকাডেমির। তখন ঘুমোতে যাওয়ার সময়। তার আগে পর্যন্ত কেউ গান শোনে, কেউ বই পড়ে। কেউ আবার স্কুলের হোমওয়ার্ক এগিয়ে রাখে। তবে সকলেই ‘গোপাল বড় সুবোধ বালক’ হয় না। অ্যাকাডেমির প্রাক্তন ছাত্র ইনিয়েস্তার কথায়, ‘‘আমরা হলঘরের দরজাকে গোলপোস্ট বানিয়ে ফুটবল পেটাতাম। ডিরেক্টরের কানে আওয়াজ গেলেই অবশ্য দৌড়ে ঘরে ঢুকে পড়তাম।’’ ছাত্রদের ফুটবলের পাশাপাশিই বিনয়ী হতেও শেখানো হয়। কারণ, এই অ্যাকাডেমি বিশ্বাস করে, বিনয়ই শ্রদ্ধা আহ্বান করে। বলে রাখা যাক, এই প্রতিভাশালী ছাত্রদের সকলেই যে ভবিষ্যতে পেশাদার ফুটবলার হয়, তা নয়। তাই অ্যাকাডেমি তাদের পড়াশোনার রাস্তাতেও এগিয়ে দেয়। যাতে ফুটবল না খেললেও ভবিষ্যৎটা ঝরঝরে না হয়ে যায়। লা মাসিয়ার প্রাক্তন ছাত্র জেরার পিকে বলেছেন, ‘‘সবচেয়ে আগে শেখানো হয় মূল্যবোধ। শু‌ধু ফুটবল মাঠের জন্য নয়, ব্যক্তিজীবনেও।’’

সোমবার অবশ্য বাইরে থেকে সেস ব কিছু বোঝা গেল না। ঝাঁ ঝাঁ দুপুরে অ্যাকাডেমিটা দেখাই হল শুধু। আর মনে হল, ঠিকই। লা মাসিয়া থেকে ক্যাম্প ন্যু— বার্সেলোনার মেসিময়ই হওয়া উচিত। ঠিকই ভেবেছেন কঠোর বিপণনবুদ্ধি সম্পন্ন বার্সা কর্তৃপক্ষ। মারাদোনা এখানে কল্কে পেতেন না। এটা ‘মেসির ঘর’। এবং একমাত্র মেসিরই ঘর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement