স্বয়ংদ্যুতি ঘোষ। —ফাইল চিত্র
কোর্টে নামা অনিশ্চিত ছিল। সিঙ্গলস তো নয়ই, ডাবলস নিয়েও সংশয় ছিল। হাল ছাড়েনি সে। ইঞ্জেকশন নিয়ে খেলতে নেমে জাতীয় স্তরে সাব জুনিয়র র্যাঙ্কিং ব্যাডমিন্টন প্রতিযোগিতায় ডাবলসে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলার স্বয়ংদ্যুতি ঘোষ। জলপাইগুড়ির ষষ্ঠ শ্রেণির এই ছাত্র স্বপ্ন দেখে বিশ্বজয়ের। সেই লক্ষ্যেই ধীরে ধীরে এগিয়ে চলেছে সে। সাইনা নেহওয়াল, পিভি সিন্ধুর কোচ পুলেল্লা গোপীচন্দের মন্ত্রে নিজেকে তৈরি করছে স্বয়ংদ্যুতি।
সাড়ে চার বছর বয়সে প্রথম র্যাকেট হাতে নেওয়া স্বয়ংদ্যুতির। শুরু জলপাইগুড়ির টাউন ক্লাবে। পরে কলকাতায় আসা। জলপাইগুড়ির আশালতা বসু বিদ্যালয়ের এই ছাত্রের ধ্যানজ্ঞান ব্যাডমিন্টন। স্বয়ংদ্যুতির বাবা শুদ্ধসত্ত্ব আনন্দবাজার অনলাইনকে বললেন, ‘‘জলপাইগুড়ি টাউন ক্লাব ও কলকাতার স্টার ব্যাডমিন্টন অ্যাকাডেমিতে অনুশীলন করে স্বয়ংদ্যুতি। ওর প্রথম কোচ অরূপ বৈদ্য। পরে কৌশিক পাল, আশুতোষ তিওয়ারি, আব্দুল আয়াদ আনসারি, পল্লব বসু, দেবাঞ্জন মজুমদারদের কাছে শিখেছে। ও প্রতি দিন ৫-৬ ঘণ্টা অনুশীলন করে।’’
স্টার ব্যাডমিন্টন অ্যাকাডেমির সঙ্গে যুক্ত গোপীচন্দ। তাঁর পরামর্শেই কোচিং হয় সেখানে। তাই আপাতত রাজ্যের বাইরে যাওয়ার কোনও ভাবনা নেই শুদ্ধসত্ত্বের। তিনি বললেন, ‘‘জলপাইগুড়ি থেকে কলকাতায় এসেছি। এখানে যে সুবিধা পাচ্ছি তাতে আমি খুশি। এখনই ওকে বাইরে নিয়ে যাওয়ার কোনও ভাবনা নেই। পরে দেখা যাবে।’’
স্বয়ংদ্যুতির আদর্শ মালয়েশিয়ার প্রাক্তন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন লি চং ওয়েই। ভারতীয়দের মধ্যে লক্ষ্য সেনকে ভাল লাগে তার। এক বার লক্ষ্যের সঙ্গে দেখাও হয়েছে স্বয়ংদ্যুতির। ব্যাডমিন্টনের পাশাপাশি মোবাইলে গেম খেলা, বন্ধুদের সঙ্গে সাইক্লিং করতে ভালবাসে সে। খেলার জন্য অবশ্য পড়াশোনায় কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। অনুশীলন থাকায় অনেক দিন স্কুলে যেতে পারে না সে। তার মধ্যেই সবটা মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে স্বয়ংদ্যুতি।
বাংলার ব্যাডমিন্টনকে ভরসা দেওয়া স্বয়ংদ্যুতি ছাড়াও রাজ্যে প্রতিভাবান খেলোয়াড়ের সংখ্যা অনেক বলে জানিয়েছেন রাজ্য ব্যাডমিন্টন সংস্থার সচিব শেখর বিশ্বাস। আনন্দবাজার অনলাইনকে তিনি বললেন, ‘‘বাংলার ব্যাডমিন্টনে প্রতিভাবান খেলোয়াড় প্রচুর। বিশেষত সাব জুনিয়র ও জুনিয়র স্তরে। যে প্রতিযোগিতায় স্বয়ংদ্যুতি চ্যাম্পিয়ন হল সেখানে বাংলা থেকে কোয়ার্টার ফাইনালে চার জন, সেমিফাইনালে দু’জন ও ফাইনালে এক জন খেলেছে। আগামী দু’বছরের মধ্যে জাতীয় স্তরে অনেক পদক জিতব আমরা।’’
বাংলার ব্যাডমিন্টনের উন্নতিতে পরিকাঠামোর দিকে তাঁরা বিশেষ নজর দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন শেখর। তিনি বললেন, ‘‘উন্নত মানের অ্যাকাডেমি করেছি। সেখানে মাল্টি জিম আছে। ৩০ জন ছেলে ও ৩০ জন মেয়ে থাকতে পারে। ক্যান্টিন আছে। অনুশীলনের জন্য ছ’টা কোর্ট আছে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ফিজিয়ো, পুষ্টিবিদ, মনস্তাত্ত্বিক কোচ আছে। গোপীচন্দ নিজে আসেন। কখনও লোক পাঠান। আমরা নিশ্চিত দু’বছরের মধ্যে বাংলা ভারতীয় স্তরে ভাল খেলবে।’’