চাঁদে পরমাণু চু্ল্লি প্রকল্পের এলাকা দেখতে হবে এমনটাই। কম্পিউটার সিম্যুলেশনে নাসার মডেল। ছবি- নাসার সৌজন্যে।
চাঁদে এ বার বসানো হবে পরমাণু চুল্লি। নভশ্চরদের থাকার ব্যবস্থার জন্য, খনিজ উত্তোলন-সহ নানা ধরনের কাজে শক্তির প্রয়োজন মেটাতে।
চাঁদে প্রয়োজনীয় শক্তির জন্য আর সূর্যের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে চায় না নাসা। চায় না প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সরকারও। তাই চাঁদে পরমাণু চুল্লি বানানোর জন্য নাসার সঙ্গে হাত মিলিয়েছে আমেরিকার শক্তি দফতরের অধীনে থাকা ‘আইড্যাহো ন্যাশনাল ল্যাবরেটরি (আইএনএল)’। নাসার একটি সূত্র শুক্রবার এই খবর দিয়েছে। আইএনএল-ই আমেরিকার পরমাণু শক্তি সংক্রান্ত গবেষণার শীর্ষ গবেষণাগার।
এই পদ্ধতি কাজে লাগবে পৃথিবীতেও
নাসা সূত্রের খবর, এই দশকের শেষাশেষি চাঁদে সেই পরমাণু চুল্লি বসানোর কথা ভাবা হয়েছে। চাঁদে সফল হলে সভ্যতার দ্বিতীয় উপনিবেশের শক্তির প্রয়োজন মেটাতে সূর্যের উপর নির্ভরতা ছেড়ে ‘লাল গ্রহ’ মঙ্গলেও পরমাণু চুল্লি বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে আমেরিকার। এই পদ্ধতি পৃথিবীতেও পারমাণবিক শক্তির অসামরিক ব্যবহারের জন্য আগামী দিনে খুব জরুরি হয়ে উঠবে।
ফিশান সারফেস পাওয়ার প্রজেক্ট
নাসা সূত্রের খবর, চাঁদে ও ভবিষ্যতে মঙ্গলে পরমাণু চুল্লি বসানোর জন্য নাসার প্রকল্পটির নাম- ‘ফিশান সারফেস পাওয়ার প্রজেক্ট (এফএসপিপি)’। পরমাণু চুল্লিটি বানানো হবে পৃথিবীতে। তার পর সেটিকে চাঁদে নিয়ে যাওয়া হবে মহাকাশযানে চাপিয়ে।
কী ভাবে সেই পরমাণু চুল্লি বানালে সেটা সেরা হয় তার পরিকল্পনা জমা দেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক ভাবে টেন্ডার ডাকা হয়েছে। আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি তার চূড়ান্ত সময়সীমা।
অন্তত ৪০ ওয়াট শক্তি ১০ বছর ধরে নিরবচ্ছিন্ন ভাবে
সেই পরমাণু চুল্লি বানানোর জন্য কী কী শর্ত পূরণ করতে হবে, নাসা ও আইড্যাহো ন্যাশনাল ল্যাবরেটরির তরফে শুক্রবার সেই সবও জানানো হয়েছে। সেই চুল্লির ভিতরে জ্বালানি হিসেবে থাকবে ইউরেনিয়াম। সেই জ্বালানি যে শক্তি উৎপাদন করবে, তা বিদ্যুৎ-সহ নানা ধরনের শক্তিতে বদলে নেওয়া হবে বিভিন্ন প্রয়োজনে। সেই চুল্লিকে এতটাই দড় হতে হবে, যাতে চাঁদের রুক্ষ ও খুব ঠান্ডা পরিবেশেও তা টানা ১০ বছর ধরে অন্তত ৪০ ওয়াট বিদ্যুৎশক্তি উৎপাদন করে যেতে পারে। নিরবচ্ছিন্ন ভাবে।
নিজেকে নিজেই চালাবে চাঁদের পরমাণু চুল্লি
সেই পরমাণু চুল্লি কোনও মানুষ ছাড়াই চলবে। তাকে পৃথিবী থেকে কোনও যন্ত্রের নির্দেশেও চালানো হবে না। সেই চুল্লি আপনাআপনিই চালু হবে ও বন্ধ হবে প্রয়োজনে, নির্দিষ্ট সময় পরপর। সেই চুল্লি এমন ভাবে বানানো হবে, যাতে এক জায়গা থেকে তাকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়। শক্তি উৎপাদনের প্রয়োজনে। তা দিয়ে চাঁদে নামা ল্যান্ডার ও রোভারও যাতে কাজকর্ম করতে পারে সেটাও নিশ্চিত করতে হবে নির্মাতাদের।
তা ছাড়াও, নির্মাতাদের খেয়াল রাখতে হবে, পৃথিবী থেকে চাঁদে পাঠানোর পর সেই চুল্লিটিকে যেন এমন একটি সিলিন্ডারের মধ্যে বসানো যায় যার উচ্চতা ১৮ ফুট বা ৬ মিটার। ব্যাস ১২ ফুট বা ৪ মিটার। আর সেই চুল্লির ওজন ১৩ হাজার ২০০ পাউন্ড বা ৬ হাজার কিলোগ্রামের বেশি হলে চলবে না।
নাসা সূত্রের খবর, এর আগেও মঙ্গলে রোভার ‘পারসিভের্যান্স’-এর রেডিওআইসোটোপ পাওয়ার সিস্টেম বানাতে আইড্যাহো ন্যাশনাল ল্যাবরেটরির প্রযুক্তিগত সহায়তা নিয়েছিল নাসা। সেই রেডিওআইসোটোপ পাওয়ার সিস্টেমে তাপশক্তি উৎপাদনের জন্য ব্যবহার করা হয় তেজস্ক্রিয় মৌল প্লুটোনিয়ামের ২৩৮ (পরমাণুর নিউক্লিয়াসে নিউট্রন সংখ্যা) আইসোটোপ।
ছবি সৌজন্যে- নাসা।