mars

Marsquakes: মঙ্গলে প্রাণের স্পন্দন শুনল নাসার ল্যান্ডার! থরথরিয়ে কেঁপে উঠল লাল গ্রহ, তিন বার

নাসা বৃহস্পতিবার খবর দিয়েছে, গত ২৫ অগস্ট থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর, এই ২৫ দিনে মঙ্গলে হয়েছে তিন-তিনটি বড় মাপের কম্পন।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৭:৩৪
থরথরিয়ে কেঁপে উঠল লাল গ্রহ। -প্রতীকী ছবি।

থরথরিয়ে কেঁপে উঠল লাল গ্রহ। -প্রতীকী ছবি।

কে বলল ‘লাল গ্রহ’ মঙ্গলে নেই প্রাণের ‘রক্তকণিকা’? নেই ‘রক্তস্রোত’? কে বলল সেই রক্তস্রোত এখনও বয়ে চলছে না লাল গ্রহের ‘ধমনী’তে?

ধুকপুক করছে না মঙ্গলের ‘হৃৎপিণ্ড’? শোনা যায় না তার হৃৎপিণ্ডের লাব-ডুব?

Advertisement

২৫ দিনে ৩ বার মঙ্গলের হৃৎপিণ্ডের লাব-ডুব!

শুনল তো আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা-র পাঠানো রোভার ‘ইনসাইট’। এক মাসের মধ্যে অন্তত দু’দিন। দু’দিনে মোট তিন বার থরথর করে কেঁপে উঠল মঙ্গল। এক দিন তো মঙ্গলের বুকে কম্পন চলল টানা আধ ঘণ্টা ধরে।

লাল গ্রহ বুঝিয়ে দিল, তার অন্তরে, অন্দরে এখনও চলছে নানা ধরনের পালাবদল। তার হৃদয়ের রং বদলে যাচ্ছে দ্রুত! অন্তরে থাকা পাথরগুলির স্তর একে অন্যকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিচ্ছে। উপরের স্তর একটু নীচে নামছে। আর নীচের স্তর উঠছে একটু উপরে। যা নির্জীব, নিষ্প্রাণ হলে আদৌ সম্ভব হত না।

মঙ্গলের বুকে নাসার ইনসাইট ল্যান্ডার। ছবি- নাসার সৌজন্যে।

মঙ্গলের বুকে নাসার ইনসাইট ল্যান্ডার। ছবি- নাসার সৌজন্যে।

বাসুকির মাথা নাড়ানোর উল্লাস মঙ্গলে

নাসা বৃহস্পতিবার খবর দিয়েছে, গত ২৫ অগস্ট থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর, এই ২৫ দিনে মঙ্গলে হয়েছে তিন-তিনটি বড় মাপের কম্পন (মঙ্গলে বলে তাকে ভূকম্পন লেখা যাচ্ছে না)। লাল গ্রহে বাসুকির এই মাথা নাড়ানোর উল্লাসকে বলা হয় ‘মার্সকোয়েক’। মঙ্গলের ‘ভূমিকম্প’।

কম্পন: কবে, কী মাত্রার?

২৫ দিনের মধ্যে মঙ্গলের বুকে প্রথম কম্পনটি নাসার ইনসাইট রোভার শুনেছিল গত ২৫ অগস্ট। যার মাত্রা ছিল ৪.২। তার কিছু পরে সে দিনই মঙ্গলের বুকে আরও একটি কম্পন ধরা পড়ে ইনসাইট-এর সিসমোমিটারে। যার মাত্রা ছিল ৪.১।

এর পরেই ১৮ সেপ্টেম্বর মঙ্গল থরথর করে কেঁপে ওঠে আরও একটি বড় কম্পনে। যার মাত্রা ছিল ৪.২।

থরথর করে কাঁপল মঙ্গল আধ ঘণ্টা ধরে!

পাঁচ দিন আগের সেই কম্পন লাল গ্রহে স্থায়ী হয়েছিল টানা আধ ঘণ্টা। ভাবতে পারছেন, কী ভয়ঙ্কর ছিল সেই কম্পন। পৃথিবীতে আধ ঘণ্টা ধরে ভূকম্পন চললে কী ভয়াবহ পরিণতি হতে পারে, সেই ছবিটা একটু ভেবে নিতে পারেন।

মঙ্গলে কম্পন: দুবছর আগে-পরে

এর আগে নাসার ইনসাইট ল্যান্ডার ২০১৯ সালে মঙ্গলের বুকে কম্পনের হদিশ পেয়েছিল। তবে তার মাত্রা ছিল অনেক কম। ৩.৭।

নাসা জানিয়েছে, ২০১৯-এর কম্পনের যে পরিমাণ শক্তি ছিল, গত ২৫ অগস্টের কম্পনের শক্তি ছিল তার পাঁচ গুণ। ওই দিন যে দু’টি কম্পন হয়েছিল তার একটির উৎপত্তিস্থল (‘এপিসেন্টার’) ছিল নাসার ল্যান্ডার ইনসাইট-এর খুব কাছেই। ৫৭৫ মাইল দূরে।

মঙ্গলের বুকে নাসার ইনসাইট ল্যান্ডারের সিসমোমিটার। ছবি- নাসার সৌজন্যে।

মঙ্গলের বুকে নাসার ইনসাইট ল্যান্ডারের সিসমোমিটার। ছবি- নাসার সৌজন্যে।

কেন এত ঘনঘন কম্পন মঙ্গলে?

কলকাতার ইন্ডিয়ান সেন্টার ফর স্পেস ফিজিক্স (আইসিএসপি)-এর অধিকর্তা জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞানী সন্দীপ চক্রবর্তী বলেছেন, “মঙ্গল যে একেবারেই নির্জীব হয়ে যায়নি, এই সব কম্পনই তার প্রমাণ। এখনও সেখানকার পাথরের স্তরগুলি উপরে-নীচে নামছে। পাশে সরছে। একে অন্যকে ধাক্কা মারছে। সরিয়েও দিচ্ছে। পৃথিবীর মতো টেকটনিক প্লেট না থাকলেও, এটাই মঙ্গলের প্রাণের প্রমাণ। এটাকে বলা হয় জিওলজিক্যাল অ্যাক্টিভিটি। তবে মঙ্গলের অন্দরে গলিত ধাতুর স্রোত এখন আর প্রায় নেই বললেই চলে। তাই লাল গ্রহের কোনও চৌম্বক ক্ষ‌েত্র নেই। অতীতের সাগর, মহাসাগর, হ্রদগুলিও শুকিয়ে গিয়েছে। তাই সেই সব গর্তে গিয়ে পড়ছে মঙ্গলের ভিতরের শিলাস্তর। তাই এত ঘনঘন বড় মাপের কম্পন হচ্ছে সেখানে। যা খুব বড় আকারের টেকটনিক প্লেট থাকলে হত না। কারণ তারা এত ঘনঘন সরতে পারে না। তা ছাড়াও সূর্যের টানও মঙ্গলে এত ঘনঘন কম্পনের কারণ হতে পারে।’’

Advertisement
আরও পড়ুন