জাপানের চন্দ্র অভিযাত্রী যান। শিল্পীর কল্পনায়। ছবি: সংগৃহীত।
হাওয়া ভাল বুঝছে না জাপান। চাঁদের পথে পা বাড়িয়েও পিছিয়ে আসছে বার বার। ভারতের চন্দ্রযান-৩ চাঁদে নামার পরই চাঁদে পাড়়ি দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল জাপানের। ভারতের মতোই এশিয়ার এই প্রযুক্তিপ্রেমী দেশও চায় চাঁদে মহাকাশ যান নামাতে। কিন্তু এরই মধ্যে দু’বার ভেস্তে গেল তাদের পরিকল্পনা। মঙ্গলবার জাপান জানাল, আপাতত সেপ্টেম্বরের আগে তাদের ‘চন্দ্রযান’ চাঁদে পাড়ি দেওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। কারণ হিসাবে জাপানের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা জানিয়েছে, আসন্ন ঝড়ের ভয়েই এই সিদ্ধান্ত।
চাঁদে মহাকাশ যান নামাতে পারলে জাপান হবে এই কৃতিত্বের অধিকারী এশিয়ার তৃতীয় দেশ এবং পৃথিবীতে পঞ্চম। এর আগে চাঁদের জমিতে সফ্ট ল্যান্ডিং করতে পেরেছে যথাক্রমে রাশিয়া, আমেরিকা, চিন এবং ভারত। তবে জাপান ভারতের চন্দ্রযান-৩-এর মতো চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কাছে অবতরণ করবে না। জাপানের ‘চন্দ্রযান’ নামের চাঁদের সামনের দিকে। অর্থাৎ যে অংশটি পৃথিবী থেকে দৃশ্যমান, সেখানে। চাঁদের বিষুব রেখার ১৩ ডিগ্রি দক্ষিণে এবং দ্রাঘিমা রেখার ২৫ ডিগ্রি পূর্বে রয়েছে শিওলি গিরিখাত। তারই ঢালু অংশে নামার কথা জাপানের চন্দ্রযানের।
জাপান তাদের চন্দ্রযানের যে জাপানি নাম দিয়েছে, তার ইংরেজি অর্থ ‘মুন স্নাইপার’। যার কাছাকাছি বাংলা অর্থ হতে পারে ‘চন্দ্র তীরন্দাজ’। তবে তীর মারার চেষ্টা করার আগেই দু’বার পিছিয়ে এল জাপান।
জাপানের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা জাক্সা প্রথমে জানিয়েছিল গত ২৬ অগস্ট চাঁদের পথে পাড়ি দেবে মুন স্নাইপার। কিন্তু খারাপ আবহাওয়ার কারণে তা পিছিয়ে দেওয়া হয়। ঠিক হয় মঙ্গলবার অর্থাৎ ২৯ অগস্ট চাঁদে পাড়ি দেবে জাপানের চন্দ্রাভিযান। কিন্তু মঙ্গলবারও চাঁদে যাওয়া হল না জাপানের। এ বারও জাক্সা জানাল পৃথিবীর বায়ু মণ্ডলের উচ্চস্তরে ঝোড়ো হাওয়ার ভয় পাচ্ছে তারা। এই হাওয়া তাঁদের মহাকাশযানের ক্ষতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে জাক্সার মহাকাশবিদেরা। জাক্সা সূত্রে জানানো হয়েছে, আগামী ১৫ সেপ্টেম্বরের আগে চাঁদে পাড়ি দেওয়ার কোনও সম্ভাবনাই নেই মুন স্নাইপারের।
জাপানের এই মহাকাশ যানের লক্ষ্য মূলত দু’টি— এক, চাঁঁদের মাটিতে সফ্টল্যান্ডিং এবং অনুসন্ধান (স্লিম)। দুই, এক্সরশ্মির মাধ্যমে ছবি তোলা এবং স্পেকট্রোকপি (জ্র়িজম )। আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার সঙ্গে একত্রে এই অভিযানের পরিকল্পনা করেছে জাক্সা। তাদের সহযোগিতা করেছে ইউরোপের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসাও। সফল হলে মুন স্নাইপারের পাঠানো এক্স-রে ছবি থেকে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের বহু রহস্যের সমাধান করতে পারবেন মহাকাশ গবেষকেরা। ইসা জানিয়েছে, কী ভাবে মহাকাশে আকার আকৃতি নিরূপণ করে কৃষ্ণ গহ্বর, কী ভাবেই বা বড় বড় নক্ষত্রমণ্ডলকে ঘিরে রাখে অতিতপ্ত গ্যাসীয় মেঘ, সেই সব রহস্যের উন্মোচন হবে জাপানের চন্দ্রাভিযানের মাধ্যমে।