পরিচালক: তরুণ মজুমদার। ডান দিকে, ‘পলাতক’ ছবিতে নববধূর বেশে অভিনেত্রী সন্ধ্যা রায়
মেঠো পথ ধরে হেঁটে আসছেন এক জন মানুষ। বাউন্ডুলে ভবঘুরে হাবভাব। হাঁটতে একটু কষ্ট হচ্ছে, তবে তাতে ভ্রুক্ষেপ নেই। পায়ের ক্ষতে কাপড়ের পট্টি বাঁধা। মানুষটিকে ‘সাকিন’ জিজ্ঞেস করলে জবাব আসে, ‘সাকিন নাই।’ রাস্তায় দেখা হয় এক গরুর গাড়ির চালকের সঙ্গে।কথায় কথায় আলাপ জমিয়ে সে উঠে পড়ে গাড়িতে, পথ চলতে চলতে গাড়ির দুলুনির সঙ্গে গান ধরে, ‘জীবনপুরের পথিক রে ভাই...’
‘পলাতক’ (১৯৬৩)-এর সেই নিরুদ্দেশ যাত্রা ষাটে পড়ল এ বছর। আর একেবারেই বিষম এক সমাপতনের মতো, জীবনপুরের সাকিন ছেড়ে অন্তহীন পথে পাড়ি দিলেন অবিস্মরণীয় এই চলচ্চিত্রের প্রধান স্রষ্টা তরুণ মজুমদার। ‘প্রধান’ কথাটা বলার কারণ, তখনও তিনি ‘যাত্রিক’ গোষ্ঠীর হয়েই ছবি পরিচালনা করেন। ‘চাওয়া পাওয়া’ (১৯৫৯) কিংবা ‘স্মৃতিটুকু থাক’ (১৯৬০) ছবি দু’টি সহযোগী পরিচালক শচীন ও দিলীপ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে করার পর থেকেই ক্রমশ গোষ্ঠীর প্রধান পরিচালক হয়ে উঠেছেন তরুণ মজুমদার। সে কারণে ‘কাঁচের স্বর্গ’ (১৯৬২) বা তার পরবর্তী সময়ের ‘পলাতক’ ছবির টাইটেল কার্ডে ‘যাত্রিক’ গোষ্ঠীর নাম থাকলেও ছবিগুলি প্রধানত তরুণবাবুর ছবি হিসেবেই পরিচিত। ১৯৬২ সাল নাগাদ তরুণ মজুমদার এক বার ছুটি কাটাতে গিয়েছিলেন উত্তরবঙ্গের প্রত্যন্ত পাহাড়ি অঞ্চলে—নাম মেটেলি। ছোটবেলার অনেকখানি কেটেছিল সেখানেই। পুরনো বাড়ির আলমারি ঘাঁটতে গিয়ে বেরোল মনোজ বসুর একটি গল্প সঙ্কলন। পড়তে পড়তে খুব ভাল লেগে গেল ‘আংটি চাটুজ্যের ভাই’ গল্পটি। মেটেলিতে তখন বিদ্যুৎ সংযোগ ছিল না। সন্ধ্যার পর লণ্ঠনের আলোয় বসে বসে ওই গল্প অবলম্বনে লিখেছিলেন ‘পলাতক’-এর চিত্রনাট্য। এ বার অভিনেতা নির্বাচন। মূল চরিত্রে প্রযোজকের পছন্দ ছিল উত্তমকুমারকে। তিনি আগেভাগে চিত্রনাট্য দেখাতে আগ্রহী হয়েছিলেন উত্তমকুমার নিজেও। কিন্তু আপত্তি করলেন স্বয়ং পরিচালক। ‘নায়ক’ হিসেবে কোনও ভাবেই যাঁর কথা মনে আসবে না দর্শকের, সেই রকম কাউকে তাঁর চাই, তাই বেছে নিলেন অনুপকুমারকে। চিত্রনাট্যের দাবি মাথায় রেখে উত্তমকুমারকে ‘না’ বলতেও দ্বিধা করেননি তরুণবাবু। ‘পলাতক’-এর সাফল্যের পর নাকি ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় তরুণবাবুকে ধরে নিয়ে এসে হোটেলে ভূরিভোজ করিয়ে বলেছিলেন, “ক্যান খাওয়াইলাম জানেন? আপনি প্রমাণ করসেন, কমেডিয়ান দিয়াও ভাল রোল হয়।” শুধু অনুপকুমার নন, জহর রায়কেও অন্য ধরনের ভূমিকায় দেখা গেল এই ছবিতে। কমেডির উপাদান অবশ্যই আছে তাঁর চরিত্রে, কিন্তু একমাত্র মেয়ের ভবিষ্যতের জন্য চিন্তায় অস্থির, পছন্দের পাত্রটি প্রথম বার পালিয়ে যাওয়ায় মেয়ের সামনে এসে দাঁড়াতে দ্বিধাগ্রস্ত, প্রায়-অপরাধী বাবার যে ভাষাহীন অভিব্যক্তি— তাও তো জহর রায়ের মুখে দেখালেন তরুণবাবুই। অন্যান্য চরিত্রে সন্ধ্যা রায়, রুমা গুহঠাকুরতা, অসিতবরণ প্রমুখ।
ছবি শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভেসে আসে নেপথ্যে কাজী সব্যসাচীর কণ্ঠে ভাষ্য— যার সারমর্ম, এ কোনও নায়কের জীবনের গল্প নয়। এই কাহিনির কেন্দ্রীয় চরিত্র, যার পোশাকি নাম বসন্ত, জীবনে কিছুই করেনি, করতে চায়ওনি। ঘরের বাঁধন তার সহ্য হয় না, তাই সে শুধু ঘুরে ঘুরে বেড়ায়। এমনিতে সে অবস্থাপন্ন ঘরের ছেলে, কথায় কথায় নিজের পরিচয় দেয় জমিদার ‘আংটি চাটুজ্যের ভাই’ হিসেবে। যে স্বেচ্ছায় ‘তালুক ছেড়ে মুলুক ফেলে’ ঘরের বার হয়ে এসেছে, তার মুখে অবশ্য এ ধরনের কথা সামন্ততান্ত্রিক মানসিকতার বিরুদ্ধে পরিহাসের মতোই শোনায়। অথচ সরাসরি শ্রেণিচেতনা নিয়ে প্রশ্ন তোলা এ ছবির উদ্দেশ্য নয়। বরং আকাশ-বাতাস-নদী, গ্রামের নানা রকম মানুষ, তাঁদের বিচিত্র জীবনধারা, নতুন নতুন দেশ দেখে বেড়ানোর নেশা এতই স্বাভাবিক ভাবে মিশে যায় এ ছবির ‘ন্যারেটিভ’-এর সঙ্গে, যে আলাদা করে গল্প আর চিত্রভাষা নিয়ে ভাবতে বসার অবকাশ থাকে না। এ গ্রামজীবনের ছবি শহুরে মানুষের অলস রোম্যান্টিকতার স্বপ্নে দেখা নয়, আবার চোখে আঙুল দিয়ে নব্য বা অতিবাস্তবতার আয়নায় দেখানো শুধুই দারিদ্র, ব্যাধি, ক্লিন্নতা আর কূপমণ্ডূকতায় ভরাও নয়। এখানে ভালমন্দ সবই আছে, কিন্তু সব কিছু ছাপিয়ে রয়েছে এক অদ্ভুত ভাল লাগা, অনাড়ম্বর অথচ বিচিত্র জীবনচর্যার হাতছানি, প্রাণের প্রাচুর্য— এবং সে সব কিছুই অত্যন্ত স্বাভাবিক, সহজ-সরল। ক্যামেরার ফ্রেমে, সংলাপের স্বাভাবিক ভঙ্গিতে, গল্প বোনার মরমিয়া কৌশলে তরুণ মজুমদার তৈরি করছেন স্বাভাবিক বাস্তবতার এক নতুন চিত্রভাষা, যাকে আলাদা করে বিশেষ কোনও ‘ইজ়ম’-এর তকমা নিতে হয় না। তেমনই স্বাভাবিক বাউল-মনের কেন্দ্রীয় চরিত্রটি। এ রকম বাঁধনহীন, বর্ণময় চরিত্র বাংলা সাহিত্যে বা ছবিতে যে আগে দেখা যায়নি তা নয়, কিন্তু ‘অতিথি’র তারাপদ, ‘শ্রীকান্ত’র ইন্দ্রনাথ— এদের দেখে বিস্ময়ে তাকিয়ে তাকিয়ে থাকতে হয়, সমাজ-সংসার, নিয়মকানুনের বিরুদ্ধে তাদের বিদ্রোহ সমীহ জাগায়। এখানেই অনুপকুমারের অভিনয়ে জীবন্ত হয়ে ওঠা বসন্ত চাটুজ্যে আলাদা। যেখানেই সে যায়, তাকে আত্মীয়তার বন্ধনে জড়িয়ে ফেলে মানুষজন। তার হাসিখুশি, খোলামেলা স্বভাব আর গানের গলার জন্য। বসন্তও সহজেই মিশে যেতে পারে অচেনা মানুষের সঙ্গে— সে ভিন্গাঁয়ের বৃদ্ধ কবিরাজ আর তাঁর মেয়ে হরিমতি হোক, বা ভ্রাম্যমাণ ঝুমুর দলের অধিকারী আর নাচগান-করা মেয়েরাই হোক। হঠাৎ করে এসে কারও মন জিতে আপন করে নিতে তার যেমন জুড়ি নেই, তেমনই আবার সব কিছু ছেড়ে পালিয়ে যেতেও সে দু’বার ভাবে না। উপরোধে পড়ে, অথবা খানিকটা মায়া পড়ে যাওয়ার দায়ে কবিরাজের মেয়েটিকে এক সময় বিয়ে করে ফেলে, তাকে ঘরে নিয়ে আসে, আবার স্ত্রী-সংসার ফেলে বেরিয়ে যায় অচিরেই। এই মানুষটিই যখন জড়িয়ে পড়ে হারিয়ে যাওয়া ছোট্ট একটি মূক-বধির মেয়ের ভালবাসায়, তার নিজের বাবা-মায়ের হাতে তাকে তুলে দিতে গিয়েও চোখে জল এসে যায়, অবাক হতে হয়। নিজের শরীরে মারণরোগ বাসা বেঁধেছে বুঝে সে এক বার ঘরে ফিরতে চায়, এসে দেখে শিশুসন্তানকে রেখে তত দিনে মারা গেছে স্ত্রী— তার ছবির সঙ্গে, সেই মুহূর্তে মানুষটির পাগলের মতো হেসে ওঠা দেখেও অবাক হতে হয় নতুন করে। ভাঙা মন নিয়ে শেষ বারের মতো ঘর ছাড়তে গিয়ে নৌকোয় এলিয়ে পড়ে তার শরীর, নেপথ্যে ভেসে আসে— “তোমার ঘরে সুখের বাতি যেন নেভে না কো/ আনন্দপাখিটা বন্ধু বন্দি করে রাখো/ সুখে থাকো তুমি বন্ধু আমি চলে যাই...”
গান আর ‘পলাতক’— পরস্পরের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য। এখানেও তরুণ মজুমদার-হেমন্ত মুখোপাধ্যায় মিলে সৃষ্টি করেন এক নতুন বাঁক। বাংলা ছবিতে গানের ব্যবহার সেই নিউ থিয়েটার্স-এর আমল থেকেই জনপ্রিয়। শ্রোতা-দর্শকরাও তাই চান; ছায়াছবির গান নায়ক-নায়িকার মিলনে অর্থাৎ রুপোলি পর্দার জগতে স্বপ্নপূরণে সফল হলেই তা বাস্তবেও মানুষের মুখে মুখে ফেরে। কিন্তু ‘পলাতক’-এ গান রাখতে হবে বলে রাখা নয়, চিত্রনাট্য এবং চরিত্রের পক্ষে তা অপরিহার্য বলেই রাখা, এবং প্রায় প্রতিটি গানই গল্পের বাঁক বদলে এতখানি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে যে, কোনও মুহূর্তেই তা আরোপিত বলে মনে হওয়ার সুযোগ নেই। গানও এ ছবির অভিনেতা। গানে গানে চিত্রভাষা রচনা যে এত স্বাভাবিক ও সামগ্রিক হতে পারে, তাও দেখিয়েছেন ‘পলাতক’-এর পরিচালক ও সঙ্গীত পরিচালকের জুটি— যে জুটির জয়যাত্রা চলেছিল ১৯৬৩ থেকে ১৯৮৮ পর্যন্ত— ব্যতিক্রম শুধু ‘বালিকা বধূ’র হিন্দি রূপান্তর। ভাবতে অবাক লাগে, এই ছবির সুরকারের দায়িত্ব নিতে প্রথমে দ্বিধায় ছিলেন হেমন্ত, কারণ লোকসঙ্গীতের বিষয়ে তিনি অনভিজ্ঞ। কিন্তু তরুণবাবুর জেদের ফলেই বাংলা ছবির সর্বকালের সেরা জনপ্রিয় গানের তালিকায় ঢুকে পড়ল ‘জীবনপুরের পথিক’, ‘মন যে আমার কেমন কেমন করে’, ‘আহা কৃষ্ণ কালো’, ‘দোষ দিও না আমায় বন্ধু’-র মতো গান। সবচেয়ে পরীক্ষামূলক গানটিই বোধহয় অন্যগুলির তুলনায় অল্পশ্রুত— ‘আহা রে বিধি গো তোর লীলা বোঝা দায়’। এ ছাড়াও সংলাপের ধাঁচে হেমন্ত মুখোপাধ্যায় আর রুমা গুহঠাকুরতার যুগলবন্দিতে তরজা-গানগুলিতে চমক আর নাটকীয়তা অনবদ্য। বিশেষ করে এই ছবির গান লেখানোর জন্যই সুরকার নিয়ে এসেছিলেন মুকুল দত্তকে। বাংলা ছবি এক নতুন, সম্ভাবনাময় গীতিকারকেও পেল। তিনি এর আগে চলচ্চিত্রের গান কখনও লেখেননি। সুরকার-পরিচালক এক সঙ্গে বসে, ‘সিচুয়েশন’ বুঝিয়ে তাঁকে দিয়ে গান লিখিয়ে নেওয়ার কথা— হঠাৎ কোমরের ব্যথা প্রচণ্ড বাড়ায় হেমন্তকে ভর্তি হতে হল বম্বেতে, চার্চ গেটের কাছাকাছি এক হাসপাতালে। ট্র্যাকশন দেওয়া আছে, ওই অবস্থাতেই তরুণ মজুমদার আর মুকুল দত্তকে ডেকে নিতেন ভিজ়িটিং আওয়ার্স-এ, এক-দু’ লাইন করে গান লেখা হত আর শুয়ে শুয়েই সুর করতেন সঙ্গীত পরিচালক। ‘পলাতক’-এর গানে কিন্তু লোকসঙ্গীতের হুবহু চলন রাখা হয়নি, ‘ছায়াছবির গান’ হিসেবে স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখার জন্যই। কোথাও বাউলের সঙ্গে মিশেছে আলাহিয়া বিলাবলের সরল চলন আর ভাটিয়ালি, তার মধ্যে খুব সূক্ষ্ম ভাবে কোথায় যেন রবীন্দ্রনাথের বাউল অঙ্গের গানের আভাসও (‘জীবনপুরের পথিক’)। কখনও ঝুমুর গানের সঙ্গে ‘সিচুয়েশন’ অনুযায়ী মিলেছে বৈষ্ণব পদাবলির আমেজ (‘চিনিতে পারি নি বঁধু’), আবার যাত্রাগানের সঙ্গে মিশেছে কীর্তন (‘আহা কৃষ্ণ কালো’)। আর গান দিয়েই অভিনয়ের চরম উদাহরণ ‘দোষ দিও না আমায় বন্ধু’— যাত্রার আসরে গানটা শেষ করতে পারে না বসন্ত, কাশির দমকে গলা আটকে যায়। সেই গানের শেষটুকু বেজে ওঠে তার অন্তিম যাত্রার দৃশ্যে— যা একই সঙ্গে চলচ্চিত্রের শেষ দৃশ্য হিসেবেও অনন্য তাৎপর্যবহ।
‘পলাতক’-এর জন্য ১৯৬৪-তে সেরা অভিনেতা হিসেবে বিএফজেএ পুরস্কার পেয়েছিলেন অনুপকুমার। রুমা গুহঠাকুরতা পেয়েছিলেন সেরা সহ-অভিনেত্রীর সম্মান। তরুণ মজুমদারের স্বনামে নির্মিত ছবিতে পরবর্তী কালেও যে সব বিষয় বার বার ধরা দিয়েছে, তার সূচনা এই ছবিতেই। প্রথাগত নায়ক-চরিত্রের বিনির্মাণ নানা ভাবেই ঘটিয়েছেন তিনি, ‘ফুলেশ্বরী’, ‘নিমন্ত্রণ’, ‘দাদার কীর্তি’র মতো ছবিতে। ‘পলাতক’-এর ঝুমুর দলের পথ ধরেই যেন বাংলার হারিয়ে যাওয়া লোকসংস্কৃতির এক-একটি দিক মুখ দেখিয়েছে তাঁর অন্যান্য ছবি— কখনও কবিগান, কখনও সঙের গান, কখনও বা কৃষ্ণযাত্রা। গ্রামবাংলার ঐতিহ্য, পরিবেশের সঙ্গে এমনই নিবিড় যোগ এই সব উপাদানের, যে ‘পলাতক’-এর হিন্দি রূপান্তর ‘রাহগির’ বাণিজ্যিক সাফল্য পায় না। একটা সময়ের পর বাংলার দর্শকও এ ধরনের ছবিতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছিলেন, তাই কি আশির দশকের শেষ দিক থেকেই পরিচালককে তাঁর বিশিষ্টতার জায়গা থেকে সরে আসতে হচ্ছিল ক্রমেই? ‘আগমন’ ছবির দৃশ্য মনে পড়ে— কৃষ্ণযাত্রার একটি দলকে মারমুখী শ্রোতাদের চাপে গাইতে হচ্ছে খেউড়, তাদের পয়সা উশুল হওয়ার সুযোগ দিয়েও গায়ক-অভিনেতা ক্ষোভের সুরে আর একটি গান ধরেন, যেন শ্রোতাদের অসহিষ্ণুতার জবাব দিতেই, “এ তো ভালবাসা নয়...” এই বার্তা কি পরিচালক বা তাঁর সুরকার-শিল্পীই দিতে চেয়েছিলেন কোনও ভাবে? সব প্রশ্নের উত্তর হয় না, বিশ্লেষণেও হয়তো থেকে যায় অধরা। জীবনমুখী স্বাভাবিকতাই যে শিল্পীর পথ, তাঁর ক্ষেত্রে বোধহয় এটাই স্বধর্ম। স্বেচ্ছায় হোক বা যুগধর্মের সঙ্গে তাল মিলিয়ে, শিল্পীকে অনেক বাঁক বদলের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। তরুণ মজুমদারও ব্যতিক্রম নন। তবুও দিনের শেষে সহজ সারল্যে বাঙালি জীবনের দিক্চিহ্ন যাঁরা তাঁদের চলচ্চিত্র-নির্মিতিতে অনায়াসে ছুঁতে পেরেছিলেন, তরুণ মজুমদার তাঁদের অন্যতম শ্রেষ্ঠ হয়েই থেকে যাবেন।