ছবি: কুনাল বর্মণ।
পূর্বানুবৃত্তি: পরবর্তী কংগ্রেস অধিবেশনে কার কী ভূমিকা থাকবে, তা ঠিক করার জন্য পার্ক সার্কাসে একটি সভা ডাকা হয়। তাতে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর সর্বাধিনায়ক নিযুক্ত হন সুভাষচন্দ্র বসু। বিভিন্ন প্রদেশ থেকে আগত কংগ্রেসের নেতা ও কর্মীদের সামলানোর কাজে আরও উপযুক্ত কর্মীর প্রয়োজন থাকায়, সকলে হরপার্বতীর নাম প্রস্তাব করে। হরপার্বতী রাজি হয়ে যায়, কারণ সুভাষচন্দ্রের কাছাকাছি থাকতে পারা নিঃসন্দেহে সৌভাগ্যের কথা। অধিবেশন থেকে ফেরার পথে সে ব্রজ ডাক্তারের ডিসপেনসারি থেকে তার অসুস্থ মায়ের জন্য ওষুধ নিয়ে ফেরে। পরের দিনই হেমন্ত বসু হরপার্বতীকে নিয়ে গিয়ে সরাসরি কথা বলিয়ে দেন সুভাষচন্দ্রের সঙ্গে। সুভাষচন্দ্র সংক্ষেপে হরপার্বতীকে তার দায়িত্ব-কর্তব্য বুঝিয়ে দেন। সেখানে একটি যুবতীকে দেখে যেন বেশ চেনা-চেনা লাগে হরপার্বতীর, তবে তাকে কোথায় দেখেছে কিছুতেই মনে করতে পারে না সে।
বাস এসে গিয়েছিল। দোতলা বাস। ওয়ালফোর্ড কোম্পানি সবে চালু করেছে কলকাতার রাস্তায়। কালীঘাট থেকে শ্যামবাজার অবধি গুটিকয়েক এই রকম বাস চলে। হরপার্বতীর ভাগ্য ভাল, তাই একটু অপেক্ষা করতেই এই দোতলা বাসের দেখা পেল। নীচের তলায় জায়গা নেই। হরপার্বতী সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে গেল ও একটা ফাঁকা জায়গা দেখে বসেও পড়ল। বাসের উপর থেকে বেশ কলকাতা শহরটাকে দেখা যায়। হরপার্বতী শহরের জনজীবন দেখতে দেখতে বাড়ির পথে চলল। এই বাসের কোনও ছাদ না থাকায় রোদ্দুর এসে লাগছিল তার গায়ে। শীত-রোদের এই ওমটুকু উপভোগ করতে করতে কখন যে তার চোখ লেগে গিয়েছিল, সেটা খেয়াল ছিল না।
এক বয়স্ক ভদ্রলোকের মৃদু ধাক্কায় ঘুমটাভেঙে গেল।
“নামবে না নাকি?” বলে ভদ্রলোক তাকে টপকে এগিয়ে গেলেন সামনে। চোখ খুলে হরপার্বতী দেখল শ্যামবাজার এসে গেছে। বাস থেকে নেমে সে হাঁটা শুরু করল বাড়ির পথে...
৩৯
একটা অদ্ভুত স্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙে গেল হরপার্বতীর। স্বপ্নে সে দেখল প্রকাশ্য রাজপথে মহাত্মাজির সঙ্গে সুভাষচন্দ্র বসুর তর্ক বেধে গেছে। অনেক লোক ভিড় করে সেই বাদানুবাদ শুনছে ও উপভোগ করছে। সেই ভিড়ে শশিকান্তও আছে। তার মুখে হাসি। শশিকান্তকে হাত তুলে ডাকার আগেই তার ঘুমটা ভেঙে গেল। ঘড়িতে দেখল, চারটে বেজে দশ মিনিট। বিছানায় আরও দশ মিনিট ওই ভাবে পড়ে থেকে হরপার্বতী উঠে পড়ল। আজ তার অনেক কাজ। আজকেই সেই দিন, যে দিনের জন্য সে এত দিন ধরে অপেক্ষা করে আছে। কংগ্রেসের অধিবেশন শুরু হবে আজ পার্ক সার্কাস ময়দানে। আপাতত তার কাজ হাওড়া স্টেশনে যাওয়া।
আজ ডিসেম্বর মাসের চতুর্থ দিন। গা থেকে লেপ সরাতে শীতের কামড় বেশ ভালই অনুভব করল হরপার্বতী। তবু আলস্য কাটিয়ে বিছানা থেকে উঠে প্রস্তুত হয়ে নিল যত দ্রুত সম্ভব। তার পর গন্তব্যের উদ্দেশে বেরিয়ে পড়ল সে।
চার দিকে সাজো সাজো রব। কংগ্রেসের এমন অধিবেশন আগে হয়নি। লোক আসতে শুরু করেছে। কর্মী-সমর্থক ছাড়া উৎসুক জনতাও ভিড় করেছে। দু’-তিনটি ক্যাম্প খোলা হয়েছে। হরপার্বতী একটি ক্যাম্পের সামনে গিয়ে নিজের পরিচয় দিতেই, তাকে একটি ব্যাজ ধরিয়ে দেওয়া হল। হরপার্বতী ব্যাজ হাতে নিয়ে দেখল, তাতে লেখা আছে ‘স্বেচ্ছাসেবক-প্রধান’। ব্যাজ বুকপকেটে পরে একটা অন্য রকম অনুভূতি হল হরপার্বতীর।
কিন্তু সে কী ভাবে কাজ শুরু করবে, সেটা বুঝতে না পেরে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে রইল। লম্বা চেহারার এক ভদ্রলোক তার দিকে এগিয়ে এলেন। চোখে চশমা, গায়ের রং কালো। পরনে ধুতি ও পিরান। পিরানের পকেটে একটা ঝর্না কলম গোঁজা।
ভদ্রলোক কাছে এসে বললেন, “কোনখান থেকে শুরু করবে, বুঝতে পারছ না তো?”
হরপার্বতী কিছু বলার আগেই ভদ্রলোক বললেন, “আমার নাম হরিকুমার চক্রবর্তী। হেমন্ত আমাকে তোমার কথা বলেছে। আমি অতিথি আপ্যায়নের দায়িত্বে আছি। এই যত স্বেচ্ছাসেবক দেখছ, তারা তোমার নির্দেশেই চলবে। দেখবে, কেউ যেন এক জায়গায় ভিড় না করে। সভাপতির ট্রেন এসে পৌঁছলেই আমরা ডেলিগেটদের নিয়ে পার্ক সার্কাস অভিমুখে যাত্রা করব...”
তাঁর কথা শেষ হওয়ার আগেই বিউগল বেজে উঠল। শঙ্খধ্বনি ও জনতার কলরবে মুখরিত হয়ে উঠল হাওড়া স্টেশন প্ল্যাটফর্ম।
স্বেচ্ছাসেবকদের কিছু প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়ার পর হরিকুমার হরপার্বতীকে সঙ্গে নিয়ে ডেলিগেটদের দিকে এগিয়ে গেলেন।
এই ক’দিন কংগ্রেসের বিভিন্ন কার্যালয়ে গিয়ে হরপার্বতী অনেককেই চিনে গেছে। মোতিলাল নেহরুকে অভ্যর্থনা জানাতে যে দু’জন ভদ্রলোক এগিয়ে গেলেন, তাঁদের সঙ্গে তার আলাপ না থাকলেও, চেনে ভাল করেই। চোখে গোল ফ্রেমের চশমা পরা, দীর্ঘ চেহারার যে ভদ্রলোক নেহরুর হাতে পুষ্পস্তবক তুলে দিচ্ছেন, তিনি যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত। সবাই তাঁকে দেশপ্রিয় বলে সম্বোধন করে। অন্য ভদ্রলোক বিধানচন্দ্র রায়। ডাক্তার হিসেবে এই ভদ্রলোকের খুব নাম। দূরদূরান্ত থেকে তাঁর কাছে রোগী আসে চিকিৎসার জন্য। কংগ্রেসে খুব বেশি দিন আসেননি, কিন্তু এর মধ্যেই একেবারে সামনের সারিতে।
হাওড়া স্টেশনের বাইরে থিকথিকে ভিড়। উৎসাহী জনতা মোতিলাল নেহরু ও তাঁর পুত্র জওহরলাল নেহরুকে দেখার জন্য উদ্গ্রীব। হরপার্বতী স্বেচ্ছাসেবকদের ক্রমাগত নির্দেশ দিয়ে চলেছে ভিড় সরিয়ে অতিথিদের যাওয়ার পথ সুগম করতে। সামনে শোভাযাত্রা শুরু হয়েছে। অন্তত দু’হাজার স্বেচ্ছাসেবক ও পাঁচশো স্বেচ্ছাসেবিকা মিছিলের পুরোভাগে হেঁটে চলেছে। সবার প্রথমে চলেছেন স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর সর্বাধিনায়ক সুভাষচন্দ্র বসু। তিনি আজ অশ্বারোহী। সুভাষচন্দ্রকে দেখে কেন যেন ছত্রপতি শিবাজির কথা খুব মনে পড়ছিল হরপার্বতীর। তাঁর সঙ্গে একটা অশ্বারোহী বাহিনী আছে, তিনি সেই বাহিনীকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। অশ্বারোহী বাহিনীর ঠিক পিছনেই একটি ঘোড়ার গাড়িতে অভ্যর্থনা সমিতির সভাপতি দেশপ্রিয় যতীন্দ্রমোহনের সঙ্গে চলেছেন মোতিলাল নেহরু। ব্যান্ড পার্টির বাজনা ও বিউগলের আওয়াজে কানে প্রায় তালা লেগে যাচ্ছিল হরপার্বতীর।
মিছিলে হাঁটতে হাঁটতে শশিকান্তর কথাগুলো খুব মনে পড়ছিল ওর, “কংগ্রেস পার্টিতে আড়ম্বর বেশি, কাজের কাজ কম।” কথাটা মনে পড়তেই মুখে একটু হাসি এসে মিলিয়ে গেল হরপার্বতীর। কারণ তার নজরে এল, স্বেচ্ছাসেবিকাদের মধ্যে সেই মেয়েটি হেঁটে চলেছে। এলগিন রোডে সুভাষচন্দ্রের বাড়িতে বসে যা মনে হয়েছিল, আজও তা-ই মনে হল— মেয়েটিকে কোথায় যেন সে দেখেছে। নিজের স্মৃতিশক্তির উপর হরপার্বতীর আস্থা ছিল। সেটা যে এতটাই দুর্বল, তা তার ধারণা ছিল না।
গঙ্গার উপর ভাসমান কাঠের পুল পেরিয়ে আসার পর আর সে মেয়েটিকে দেখতে পেল না। জনসমুদ্রে হারিয়ে গেল মেয়েটি। হ্যারিসন রোড, কলেজ স্ট্রিট, বৌবাজার, ওয়েলিংটন হয়ে শোভাযাত্রা যখন পার্ক সার্কাস ময়দানে এসে শেষ হল, তখন বেলা এগারোটা বেজে গেছে। স্বেচ্ছাসেবকদের মধ্যে একটি ছেলে এসে তাকে বলল, “আমাদের খাবারের ব্যবস্থা?”
খাবারের দায়িত্বে থাকা হরিকুমার চক্রবর্তীর কাছে স্বেচ্ছাসেবকের দলটিকে পাঠিয়ে, সে অনুভব করল, তারও খিদে পেয়েছে। কিন্তু যাবে কি না যখন ভাবছে, ঠিক সেই সময় কানের কাছে গম্ভীরকণ্ঠস্বর, “পেটে কিছু দিয়েছ, নাকি খালিপেটে কাজ করে চলেছ?”
চমকে পিছনে তাকিয়ে দেখল, হেমন্ত বসু। হেসে উত্তর দিল হরপার্বতী, “না, স্বেচ্ছাসেবকরা খাচ্ছে, এখনই খাওয়া উচিত হবে কি না ভাবছিলাম।”
হা হা করে হেসে উঠলেন হেমন্ত বসু। বললেন, “প্রধান স্বেচ্ছাসেবকের আগে খাওয়া দরকার। চলো আমার সঙ্গে...” এক রকম হাত ধরে তাকে নিয়ে চললেন হরিকুমারের কাছে।
তিন দিন কী রকম একটা ঘোরের মধ্যে কেটে গেল হরপার্বতীর। অনেক গণ্যমান্য মানুষের সঙ্গে পরিচিত হল সে। তাঁরা সবাই যে কংগ্রেসের সভ্য, তা নয়। রাজনীতির জগতের বাইরের মানুষজনকেও কর্তৃপক্ষ আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। অধিবেশনের তৃতীয় দিনে সন্ধেবেলা এলেন কবি নজরুল ইসলাম। বলিষ্ঠ চেহারা, মাথায় ঝাঁকড়া চুল, চোখ দুটো যেন আনন্দে পরিপূর্ণ। হরপার্বতী খুব কাছ থেকে দেখল কবিকে। খুব আনন্দ হল তার। মনে হল, জীবন সার্থক। ধুতির ওপর একটা উজ্জ্বল কমলা রঙের পিরান গায়ে দিয়েছেন কবি। তার উপর একটা লাল রঙের শাল। উপস্থিত দর্শক সকলেই তাঁর কাছে গান শুনতে চায়। তারা এই তিন দিন ধরে কংগ্রেসেরবিশিষ্টজনদের বক্তব্য শুনতে শুনতে জনগণ ক্লান্ত। নজরুল ইসলাম মাইক্রোফোনের সামনে গেলেন। দর্শকদের হাত তুলে আশ্বস্ত করলেন। তার পর উদাত্তকণ্ঠে গেয়ে উঠলেন...
নবীন মন্ত্রে দানিতে দীক্ষা আসিতেছে ফাল্গুনী।
জাগো রে জোয়ান! ঘুমায়ো না ভুয়া শান্তিরবাণী শুনি...
হঠাৎ নজরুলের গান থেমে গেল। ময়দানের সমস্ত আলো নিবে গেছে। হরপার্বতী হতচকিত। কী করবে বুঝে উঠতে পারছে না। এমন সময় আলো জ্বলে উঠল, কিন্তু একটা শোরগোল ভেসে এল। শোনা গেল, সে দিনের প্রবেশমূল্যের বাক্সটা নাকি পাওয়া যাচ্ছে না। মঞ্চে উপবিষ্ট কংগ্রেস নেতৃবৃন্দ-সহ নজরুলের কানেও কথাটা গেল। তিনি হাসলেন। অট্টহাস্য নয়। তার স্বভাববিরুদ্ধ মৃদু হাসি। তার পর উঠে দাঁড়ালেন। দর্শক শ্রোতৃমণ্ডলীর অনেক অনুরোধেও আর দ্বিতীয় বার গান ধরলেন না। ধীর পায়ে মঞ্চ থেকে নেমে এলেন। ময়দানের বাইরে তাঁর মোটরগাড়ি দাঁড়িয়েছিল। নজরুল সেই দিকে হেঁটে চললেন। সারাটা পথ আপন মনে কী যেন বকছিলেন। এই পথটুকু কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে হরপার্বতীও সঙ্গ দিয়েছিল কবির। মোটর নজরুলকে নিয়ে চলে যাওয়ার পরও হরপার্বতী দাঁড়িয়ে রইল সেখানে। তার মাথায় তখন একটাই প্রশ্ন— কী বলছিলেন কবি আপন মনে বিড়বিড় করে?
৪০
শীত সদ্য শেষ হয়েছে। বসন্তের আগমনে প্রকৃতির রূপ স্নিগ্ধ। গাছে গাছে নতুন পাতার বাহার। পলাশ, কৃষ্ণচূড়ায় ফুলের সমারোহ। পাখিদের কলকাকলিতে উদ্বেলিত চার দিক। অমরেন্দ্রনাথের প্রিয় ঋতু এই বসন্তকাল। শীতকালে একটু দেরি করে উঠলেও, বসন্তকালে ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয় না তাঁর। ভোর পাঁচটার মধ্যে ঘুম থেকে উঠেই চলে আসেন ছাদে। সেখানে খানিক শরীরচর্চার পর, দু’চোখ মেলে চেয়ে থাকেন যত দূর চোখ যায়। প্রাণ ভরে উপভোগ করেন প্রকৃতিকে। আজও তা-ই করছিলেন। কিন্তু রাজনৈতিক নেতাকে শুধু প্রকৃতি নিয়ে ব্যস্তথাকলে চলে না। তাঁর মাথায় চলে সারা দিনের কাজের পরিকল্পনা।
আজ তাঁর বিস্তর কাজ। বালিগঞ্জে কংগ্রেসের কার্যনির্বাহী সভার সভাপতি তিনি। সেখানে সময়মতো পৌঁছনো ও সভার কাজ ঠিকমতো সম্পাদন করার চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। ইদানীং কংগ্রেসের যে কোনও সভায় হাতাহাতি বাদে সবই হয়। এই তো কিছু দিন আগে কৃষ্ণনগরে কংগ্রেসের প্রাদেশিক সম্মেলনে কংগ্রেসের দুই পক্ষের মধ্যে এমন ঝগড়া বাধল যে, সম্মেলনটাই ভেস্তে যায় আর কী! সভাপতি ছিলেন বীরেন্দ্রনাথ শাসমল। তাঁকে আজকাল দেশপ্রাণ বলে সম্বোধন করা হয়। সেই দেশপ্রাণ তাঁর ভাষণে হঠাৎ বাংলার তরুণ বিপ্লবীদের কদর্য ভাষায় আক্রমণ করতে শুরু করলেন। ব্যস! শুরু হয়ে গেল হই-হট্টগোল। সভাপতির ভাষণের পর উপেন্দ্রনাথ মঞ্চে উঠে জোরালো কণ্ঠে সভাপতির বক্তব্যের প্রতিবাদ জানালেন এবং বীরেন্দ্রনাথকে তাঁর বক্তব্য প্রত্যাহার করতে অনুরোধ জানালেন।
বীরেন্দ্রনাথও গোঁয়ার মানুষ, “যা বলেছি, ঠিক বলেছি। প্রত্যাহার করার প্রশ্নই আসে না,” বলে নিজেই সভাস্থল পরিত্যাগ করলেন। শেষে, সরোজিনী নাইডু ও যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্তের প্রচেষ্টায় বিপ্লবীদের সম্পর্কে সভাপতির ওই বক্তব্য বাদ দিয়ে সভার কাজ চালানো হয়। মানবেন্দ্র এখন জেলে। ইংরেজ সরকার তাঁকে ছ’বছরের জন্য সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে। জেলের বাইরে থাকলে তাঁর সঙ্গে এক বার এই নিয়ে কথা বলা যেত। কংগ্রেসের এই কোন্দল আর ভাল লাগছে না। নতুন পথের সন্ধান করতে হবে। এই সব ভাবতে ভাবতে ছাদের সিঁড়ি দিয়ে নামতে থাকেন অমরেন্দ্রনাথ। সিঁড়ির বাঁকে মন্মথ বিশ্বাসের সঙ্গে দেখা। হন্তদন্ত হয়ে উপরে উঠে আসছিল। অমরেন্দ্রনাথকে দেখে থমকে দাঁড়িয়ে গেল। মন্মথনাথ বসন্ত বিশ্বাসের খুড়তুতো ভাই। বসন্ত বিশ্বাসের ফাঁসি হয়ে যাওয়ার পর থেকেই এ বাড়িতে তার স্থান হয়েছে। বাড়ির সকলে তাকে মোটাদা বলে ডাকে। অমরেন্দ্রনাথও তাকে ওই নামে সম্বোধন করেন।
মন্মথনাথকে শশব্যস্ত হয়ে সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠতে দেখে, অমরেন্দ্রনাথ বললেন, “কোথায় চললে মোটাদা?”
“এই তোমার কাছে...” বলে হাঁপাতে শুরুকরল মন্মথনাথ।
অমরেন্দ্রনাথ এগিয়ে এসে মন্মথনাথের কাঁধে হাত রাখলেন। বললেন, “চলো, নীচে চলো।”
ক্রমশ