কলকাতা
শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৮:০৩
রণে-বনে-জলে-জঙ্গলে মোবাইল কিংবা ল্যাপটপে ফেসবুক খুললেই দেখা মিলছে তার। সমাজমাধ্যমের কোনায় কোনায় ছড়িয়ে পড়েছে তার ছবি, সঙ্গে পাঁচ অক্ষরের একটি ইংরেজি শব্দ— সরি।
—ফাইল চিত্র।
কথা হচ্ছে রবার্টকে নিয়ে। সে একটি পুতুল, যার বাস সুদূর ফ্লরিডায়। সেখানকার ফোর্ট ইস্ট মার্টেলো মিউজিয়াম তার ঠিকানা। সম্প্রতি সমাজমাধ্যমে শোরগোল ফেলে দিয়েছে সে।
—ফাইল চিত্র।
কাঠের চেয়ারের উপর বসে থাকা ছোট্ট ছেলে রবার্ট। পায়ের উপর পা তুলে দিয়ে তার বসার বিশেষ ভঙ্গিমায় ফুটে ওঠে ফুরফুরে মেজাজ। তবে রবার্টের চোখমুখে যেন গভীর চিন্তার ছাপ।
—ফাইল চিত্র।
রবার্টের পরনে নাবিকের পোশাক। মাথায় টুপি। হাতে একটি ছোট্ট কুকুর। তার সঙ্গেই যেন দিনরাত সুখদুঃখের গল্প করে ছোট্ট রবার্ট। কিন্তু এই ছোটখাটো নিষ্পাপ পুতুলটিকে নিয়ে এত ভয় কেন?
—ফাইল চিত্র।
রবার্ট আসলে ‘ভূতুড়ে পুতুল’। তার চোখের উদাসীন ভঙ্গির দিকে তাকিয়ে শিউরে ওঠেন অনেকে। ঝুঁকি না নিয়ে তড়িঘড়ি শেয়ার করে দেন রবার্টের ছবি, সঙ্গে লেখেন দু’টি শব্দ— ‘সরি রবার্ট’।
—ফাইল চিত্র।
রবার্ট এবং তাকে বলা এই পাঁচ অক্ষরের শব্দের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ১১৯ বছরের ইতিহাস। ফ্লরিডার মিউজিয়ামে রবার্টকে আনা হয় ১৯৯৪ সালে। তার আগে এই পুতুলের ঠিকানা ছিল ফ্লরিডার কি ওয়েস্ট শহরের ওটো পরিবারের বাড়ি।
—ফাইল চিত্র।
রবার্ট ইউজিন ওটো কি ওয়েস্টের এক নামজাদা চিত্রকর ছিলেন। তাঁকে তাঁর ছোটবেলায় তাঁর দাদু জার্মানি থেকে একটি পুতুল এনে দিয়েছিলেন। পুতুলের নামও মালিকের নাম অনুসারে রাখা হয়।
—ফাইল চিত্র।
শোনা যায়, ওটো বড় হয়ে যাওয়ার পরেও কখনও ওই পুতুলের সঙ্গে তার বিচ্ছেদ হয়নি। সে যেখানে যেত, পুতুলটি থাকত তার সঙ্গে। এমনকি, ওই পুতুলের সঙ্গে সে নিয়মিত কথা বলত, গল্প করত, ভাগ করে নিত মনের কথা।
—ফাইল চিত্র।
আশপাশের মানুষের কাছে ওটোর এই আচরণ একেবারেই স্বাভাবিক ঠেকত না। অনেকে আড়ালে তাঁকে নিয়ে হাসাহাসিও করতেন। কিন্তু তাতে পরিস্থিতি বদলায়নি। ওটোর কাছে যেন ওই পুতুল ছিল জ্যান্ত বন্ধু।
—ফাইল চিত্র।
জানা যায়, পুতুলটি তৈরি করেছিল জার্মানির স্টেইফ কোম্পানি। তবে তারা এই পুতুল সম্ভবত বিক্রি করার জন্য তৈরি করেননি। ঘর সাজানোই ছিল মূল উদ্দেশ্য। বর্তমানে রবার্টের পরনে পোশাকও প্রথম থেকে এক রকম ছিল না। ছোটবেলায় ওটো যে পোশাক পরতেন, তা-ই পরে পুতুলটিকে পরানো হয়।
—ফাইল চিত্র।
শোনা যায়, ছোট থেকেই ওটো তাঁর নিজের অপরাধমূলক কাজের দায় চাপাত এই পুতুলের উপর। সে একটু বড় হতে না হতেই পুতুলটির মধ্যে অলৌকিক গুণ প্রকট হতে শুরু করে। অনেকে বলেন, ওটোর বাড়ির জানলার উপরে পুতুলটি রাখা থাকত। মাঝেমাঝেই নাকি সে সেখান থেকে অদৃশ্য হয়ে যেত। ওটোর বাড়ি এড়িয়ে চলতেন অনেকেই।
—ফাইল চিত্র।
১৯৭৪ সালে ওটোর মৃত্যুর পর তাঁদের বাড়ি বিক্রি হয়ে যায়। পুতুলটি তখনও সেখানেই ছিল। অনেকে নাকি ওই বাড়ির ছাদে হাঁটাচলা এবং মাঝেমাঝে অট্টহাসির শব্দ শুনতে পেতেন। বাড়িময় নাকি ঘুরে বেড়াত ‘ভূত-পুতুল’। অনেকে আবার বলেন, কেউ ওই পুতুলের সামনে তাকে বা ওটোকে অপমান করে কথা বললে পুতুলের মুখের হাবভাব পাল্টে যেত।
—ফাইল চিত্র।
ওটোর মৃত্যুর পরও ২০ বছর ওই বাড়িতে ছিল রবার্ট পুতুল। তার পর তাকে জাদুঘরে দিয়ে দেওয়া হয়। তার পর থেকে যেন রবার্টের কাহিনিতে মোড় ঘুরে গিয়েছে। একাধিক সিনেমা, টিভি শো-তে এই পুতুল ব্যবহার করা হয়েছে। রবার্টের জন্যই ধীরে ধীরে ভিড় বেড়েছে মিউজিয়ামে। তাকে নিয়ে বইও লেখা হয়েছে বিস্তর।
—ফাইল চিত্র।
ফ্লরিডার ওই মিউজিয়াম থেকে রবার্টের প্রতিরূপ কেনা যায়। অনেকে আবার চাইলে টাকা দিয়ে তার সঙ্গে অন্ধকার ঘরে সময়ও কাটাতে পারেন।
—ফাইল চিত্র।
অনেক দর্শনার্থী রবার্টকে দেখে যাওয়ার পর চিঠি লিখে পাঠান। রবার্টকে লেখা সে সব চিঠিতে থাকে নিঃশর্ত ক্ষমাপ্রার্থনা। সকলেই পুতুলটিকে ‘সরি’ বলেন।
—ফাইল চিত্র।
শোনা যায়, রবার্টকে যাঁরা দেখে গিয়েছেন, তার পর থেকেই নাকি তাঁদের জীবনে নেমে এসেছে দুর্ভাগ্যের আঁধার। দুঃসময় যেন কাটতেই চায় না তাঁদের জীবনে। তাঁরা অনেকে পরে চিঠি লিখে রবার্টের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন।
—ফাইল চিত্র।
মানুষের বিশ্বাস, রবার্ট পুতুলটিকে কোনও ভাবে অশ্রদ্ধা বা অসম্মান করলে জীবনে নেমে আসে অভিশাপ। সেই কাহিনিই এখন নতুন করে ভাইরাল হয়েছে সমাজমাধ্যমে। সকলে পুতুলটিকে ‘সরি’ বলতে শুরু করেছেন।
—ফাইল চিত্র।
ফ্লরিডার মিউজিয়ামের দর্শকদের অনেকে দাবি করেছেন, তাঁরা যখন পুতুলটির ছবি তোলার চেষ্টা করেছেন, সেই মুহূর্তে ক্যামেরা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। মিউজ়িয়াম থেকে বেরোনোর পর আবার নিজে থেকেই নাকি ঠিক হয়ে গিয়েছে ক্যামেরাগুলি। অর্থাৎ, রবার্ট চায় না তার ছবি তোলা হোক।
—ফাইল চিত্র।
মিউজ়িয়ামের কর্মীদের দাবি, কাচের পাত্রের ভিতরে রাখলেও মাঝেমধ্যে দেখা যায়, রবার্ট কাচের গায়ে হাত দিয়ে রয়েছে। কখনও বা দর্শনার্থীদের দিকে ভয়াল দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখা যায় রবার্টকে।
—ফাইল চিত্র।
অনেকে ফ্লরিডার রবার্টকে ‘বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর পুতুল’ বলে আখ্যা দেন। অনেকে বলেন, এই পুতুলের উপর বহু বছর আগে কোনও ‘কালা জাদু’ প্রয়োগ করা হয়েছিল। তার ফলে সে অলৌকিক কাণ্ড ঘটাতে শুরু করে।
—ফাইল চিত্র।
রবার্টের কাণ্ডকারখানা অবশ্য অলীক কল্পনা বলেই উড়িয়ে দেন অনেকে। তাঁদের মতে, অন্ধবিশ্বাস, ভয় বা কুসংস্কার থেকে লোকের মুখে মুখে এই ধরনের কাহিনি ঘুরে বেড়াচ্ছে। এই প্রচারের পিছনে কারও কারও ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য থাকতে পারে বলেও মনে করা হয়।
—ফাইল চিত্র।
