ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের পর তারকাখচিত পার্টিতে হাজির ছিলেন বিশ্বের তাবড় তাবড় ব্যক্তিত্ব। সেই পার্টিতে হাজির ছিলেন ট্রাম্প-ঘনিষ্ঠ শিল্পপতি ইলন মাস্ক। সেই নৈশভোজের আসরে আরও এক জনের উপস্থিতি নজর কেড়েছে সংবাদমাধ্যমের। তিনি ইলনের সাম্প্রতিক সঙ্গিনী শিভন জ়িলিস।
সেই চাঁদের হাটে মাস্কের পাশে দাঁড়িয়ে শিভনকে দেখা গিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসনকে ঘিরে থাকা সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বের সঙ্গে আলাপচারিতায় মগ্ন হতে। হাঁটুঝুল কালো রঙের পোশাকে সেই পার্টিতে হাজির হয়েছিলেন শিভন।
ট্রাম্প-কন্যা ইভাঙ্কা, অ্যামাজ়ন কর্তা জ়েফ বেজোস ও তাঁর বাগ্দত্তা লরেন স্যাঞ্চোজ়ের সঙ্গে মাস্ক ও শিভনের কথোপকথনের ছবি ছড়িয়ে পড়েছে সমাজমাধ্যমে। এর আগে মাস্কের সঙ্গে তাঁর তিন সন্তানের মা শিভনকে প্রকাশ্য কোনও অনুষ্ঠানে দেখা যায়নি। মাস্কের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক রহস্যে মোড়া। কে এই শিভন জ়িলিস, যাঁকে নিয়ে সংবাদমাধ্যমে চর্চা তুঙ্গে।
ধনকুবের ইলনের সঙ্গিনী শিভনের সঙ্গে রয়েছে ভারতীয় যোগ। কানাডার অন্টারিয়োয় জন্মানো শিভনের মা পঞ্জাবি। বাবা কানাডিয়ান। ১৯৮৬ সালে জন্ম শিভনের। তাঁর মায়ের নাম সারদা এন ও বাবা রিচার্ড জ়িলিস।
ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করেছেন তিনি। অর্থনীতি এবং দর্শন নিয়ে পড়াশোনা শেষ করেন জ়িলিস। পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলার সঙ্গেও জড়িয়ে ছিলেন তিনি। কলেজজীবনে খেলতেন আইস হকি। ছিলেন গোলরক্ষক।
পড়াশোনা শেষ করে আইবিএমে কর্মজীবন শুরু করেন জ়িলিস। তার পর সেখান থেকে ব্লুমবার্গ বিটায় চলে যান। সেখান থেকেই ওপেনএআই। তার পর নিউরালিঙ্ক। শিভন ২০১৭ সাল থেকে কাজ করছেন ইলনের ব্রেন চিপ সংস্থা নিউরালিঙ্কে।
বর্তমানে সেখানেই কর্মরত তিনি। নিউরালিঙ্ক সংস্থার অপারেশন এবং বিশেষ প্রজেক্টের ডিরেক্টর জ়িলিস।
নিউরালিঙ্ক সংস্থার সহ-প্রতিষ্ঠাতা মাস্ক। এই সংস্থায় কাজ করার আগে জ়িলিস ওপেনএআই-তে কাজ করতেন। ওপেনএআই তৈরিতেও অন্যতম ভূমিকা ছিল মাস্কের। তবে পরে সেই সংস্থা থেকে বেরিয়ে আসেন তিনি।
জ়িলিস মাস্কের ব্রেন চিপ স্টার্টআপ নিউরালিঙ্কের একজন শীর্ষ পদাধিকারী এবং ওপেনএআই-এর একজন উপদেষ্টা। মাস্কের সংস্থায় যোগ দেওয়ার তিনি আগে ব্লুমবার্গ বিটায় বিনিয়োগ দলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন এবং এটি চালু হওয়ার পর থেকে ন’টির বেশি বিনিয়োগের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বলে ফোর্বস জানিয়েছে।
এই মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ইলন দু’বার বিয়ে করেছেন। তাঁর একাধিক নারীর সঙ্গে সম্পর্কের কথাও অজানা নয়। দু’বার বিচ্ছেদের পর ২০২১ সাল থেকে শিভনের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান ইলন। ২০২২ সাল পর্যন্ত এই তারকা জুটির খবর বিশ্বের কাছে গোপনই ছিল।
শিভনের সঙ্গে ইলনের গোপন সম্পর্কের কথা প্রথম ফাঁস হয় তাঁদের যমজ সন্তানের জন্য ইলনের পদবি ব্যবহারের আবেদনের নথি থেকে।
২০২১ সালের নভেম্বরে যমজ সন্তানের জন্ম দেওয়ার পর এপ্রিলে শিভন এবং ইলন আদালতের দ্বারস্থ হন সন্তানের নামের পদবি হিসাবে তাদের বাবার পদবি ব্যবহার করার অনুমতি চেয়ে।
পেশাদার বৃত্তে মাস্কের সঙ্গে জ়িলিসের যোগাযোগ অনেক পুরনো। তবে প্রকাশ্যে সে ভাবে তাঁদের কাছাকাছি আসতে দেখা যায়নি। এমনকি, এই যুগলের মধ্যে কবে থেকে প্রেমের সম্পর্কে গড়ে উঠল তা-ও অজানা।
সংবাদমাধ্যমের সূত্র বলছে, মা হওয়ার জন্য শুক্রাণুদাতার সন্ধান করছিলেন জ়িলিস। সেই সময়ই মাস্ক তাঁর নিজের শুক্রাণু ব্যবহার করার পরামর্শ দেন। সেই প্রস্তাবে সম্মত হন জ়িলিস। সেই থেকে মাস্ক-শিভনের ঘনিষ্ঠতার শুরু হয় বলে গুঞ্জন বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে।
প্রথম বার জ়িলিসের গর্ভে এক পুত্র ও এক কন্যা জন্মানোর পর ২০২৪ সালে আরও একটি সন্তানের জন্ম দেন মাস্ক ও শিভন। সেই সন্তানের পরিচয় অবশ্য গোপনই রেখেছেন তারকা জুটি।
অনেকেই দাবি করছিলেন, এই সন্তানকে নিয়ে ‘গোপনীয়তা’ বজায় রাখছেন মাস্ক। যদিও টেসলাকর্তা স্পষ্ট করেছেন, পরিবার এবং বন্ধুবান্ধব— সকলেই বিষয়টি জানতেন।
২০০২ সালে প্রথম পিতৃত্বের সুখ লাভ করেন ইলন। প্রথম স্ত্রী জাস্টিন উইলসনের পাঁচ সন্তান রয়েছে। ২০২৪ সালেও ১২তম সন্তানের বাবা হন তিনি। ২২ বছরে মোট ১২ জন সন্তানের বাবা হওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে ইলনের। তবে দুঃখের বিষয়, ইলনের প্রথম সন্তান নেভাদা আলেকজ়ান্ডার মাস্ক জন্মের ১০ সপ্তাহের মধ্যেই মারা যায়।
বিবাহবিচ্ছেদের পর ইলন ২০০৮ সালে অভিনেত্রী তালুলা রিলের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান। তাঁদের কোনও সন্তান হয়নি। তাঁর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর সঙ্গীতশিল্পী গ্রাইমস, অর্থাৎ ক্লেয়ার বাউচারের সঙ্গে সংসার পাতেন তিনি। ক্লেয়ারের সঙ্গে সম্পর্কে থাকাকালীন ২০২০ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে মাস্ক তিন সন্তানের বাবা হন।
বিশ্বের সেরা ধনী তিনি, তাঁর ব্যক্তিগত জীবনও চোখধাঁধানো। ইলনের দুই স্ত্রী ও প্রেমিকা ছাড়া আরও কত জনের সঙ্গে তিনি সম্পর্কে জড়িয়েছেন তা নিয়ে আলোচনার শেষ নেই। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, স্পেসএক্সের অন্তত দু’জন কর্মীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন প্রতিষ্ঠানের সিইও মাস্ক।
সব ছবি: সংগৃহীত।