চারদিকে লাল-নীল আলো। কখনও ডান্স ফ্লোরের উপর দিয়ে খেলা করে যাচ্ছে রামধনু রং। পার্টি বেশ ভালই জমে উঠেছে। তবে যে পার্টিতে অতিথি হিসাবে উপস্থিত রয়েছেন শাহরুখ খানের পুত্র আরিয়ান, সেই পার্টির আমেজ তো অন্য রকম হতে বাধ্য। তার উপর আবার তিনি ধরা দিয়েছেন এক বাঙালি অভিনেত্রী নায়রা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। নেটমাধ্যমে সেই ছবি এবং ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়ায় নায়রা এবং আরিয়ানকে নিয়ে ইতিমধ্যেই চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে।
মাদককাণ্ডে নাম জড়ানোর পর মাতামাতি শুরু হয়েছিল আরিয়ানকে নিয়ে। ২০২২ সালের অন্তিম পর্বে আরিয়ান আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করেছিলেন যে, মদ বিক্রির একটি সংস্থা খুলতে চলেছেন শাহরুখ-তনয়। চলতি বছরে আরিয়ান পরিচালিত একটি ওয়েব সিরিজ়ও মুক্তি পেতে চলেছে বলে শোনা যাচ্ছে। সব মিলিয়ে বলিপাড়ায় চর্চার কেন্দ্রবিন্দু জুনিয়র কিং খান। কিন্তু বলি নায়িকাদের বাদ দিয়ে নায়রার সঙ্গে কেন সময় কাটাচ্ছেন তিনি? তা হলে কি এই বাঙালি অভিনেত্রীই তাঁর নতুন বান্ধবী? একের পর এক প্রশ্ন উঁকি মারছে শাহরুখ অনুরাগী এবং নেটব্যবহারকারীদের মনে।
নায়রার আসল নাম মধুরিমা বন্দ্যোপাধ্যায়। ১৯৮৭ সালের ১৪ মে মুম্বইয়ে জন্ম তাঁর। মধুরিমার বাবা পেশায় ছিলেন প্রযুক্তিবিদ। তাঁর মা লেখালিখির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
মায়ের কাছে ছোটবেলা থেকে গান শিখেছেন মধুরিমা। শাস্ত্রীয় সঙ্গীত থেকে শুরু করে গজল ঘরানার গান শিখেছেন তিনি। বাচ্চাদের জন্য লেখা বহু গান রেকর্ড করেছেন মধুরিমা।
গানের পাশাপাশি নাচের প্রতিও আগ্রহ ছিল মধুরিমার। কত্থক নাচে পটু ছিলেন তিনি। কিন্তু বাবার বদলির চাকরি হওয়ায় বেশি দিন নাচ চালিয়ে যেতে পারেননি তিনি। মুম্বইয়ের একটি বেসরকারি স্কুলে পড়তেন তিনি।
স্কুলের পড়াশোনা শেষ করার পর মুম্বইয়ের একটি কলেজ থেকে আইন বিষয় নিয়ে স্নাতক হন মধুরিমা। পড়াশোনার পাশাপাশি নিয়মিত গান রেকর্ড করতেন তিনি। অভিনয়ের প্রতি কোনও রকম আগ্রহ ছিল না তাঁর।
ছোটদের গান রেকর্ড করার সূত্রে কন্নড় পরিচালক গণপতি ভেঙ্কটরমন আইয়ারের সঙ্গে আলাপ হয় মধুরিমার। গণপতি তাঁর ছবিতে অভিনয়ের জন্য প্রস্তাব দেন মধুরিমাকে।
রামায়ণ মহাকাব্যের উপর নির্মিত ওই ছবিতে সীতা চরিত্রে অভিনয়ের জন্য নির্বাচন করা হয়েছিল মধুরিমাকে। ছবির কাজ শুরু করার পরিকল্পনাও করে ফেলেছিলেন গণপতি। কিন্তু ২০০৩ সালে পরিচালক মারা যাওয়ার কারণে এই ছবির পরিকল্পনাও মিলিয়ে যায়।
‘শশশ... ফির কোই হ্যায়’ ধারাবাহিকের একটি পর্বে প্রথম অভিনয় করেন মধুরিমা। তবে, হিন্দি ছবির মাধ্যমেই বড় পর্দায় কাজ শুরু করেন তিনি।
২০০৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘টস: অ্যা ফ্লিপ অফ ডেস্টিনি’ ছবিতে প্রথম অভিনয় করেন মধুরিমা। এই ছবিতে রাজপাল যাদব, অস্মিত পটেল, জাকির হুসেন এবং রণবিজয় সিংহের মতো তারকারা কাজ করেছেন। মধুরিমার পাশাপাশি রণবিজয়ও এই ছবির মাধ্যমে অভিনয়ে হাতেখড়ি করেছিলেন।
প্রথম ছবি সাড়া না পেলে দক্ষিণী ফিল্মজগতে সুযোগ খুঁজতে থাকেন মধুরিমা। কখনও পার্শ্বচরিত্রে, কখনও বা মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় তাঁকে। পর পর দু’বছর চার-পাঁচটি তেলুগু ছবিতে কাজ করেছিলেন তিনি। কিন্তু অভিনয়জগতে তাঁর পরিচিতি তৈরি হচ্ছিল না।
পরিচিতি তৈরি না হওয়ার কারণে অভিনয় ছেড়ে পড়াশোনায় মন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন মধুরিমা। কিন্তু হিন্দি এবং মালয়ালনম ছবির পরিচালক প্রিয়দর্শন আবার মধুরিমাকে অভিনয়ে নামার জন্য রাজি করান।
২০১২ সালে প্রিয়দর্শন পরিচালিত ‘কামাল ধামাল মালামাল’ ছবিতে মধুরিমাকে অভিনয়ের সুযোগ দেন তিনি। মধুরিমা ছাড়াও এই ছবিতে কাজ করেছিলেন নানা পটেকর, ওম পুরী, পরেশ রাওয়াল এবং শ্রেয়স তালপাড়ের মতো বলি অভিনেতারা। তারকা সমন্বিত এই ছবির একমাত্র নায়িকা ছিলেন মধুরিমা।
প্রিয়দর্শনের ছবি হিট না হলেও মধুরিমার পরিচিতি তৈরি হয়ে গিয়েছিল বলিপাড়ায়। এমনকি, একের পর এক তেলুগু, কন্নড় এবং তামিল ছবিতে কাজও করতে শুরু করেন তিনি।
২০১৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত নরেশ মলহোত্র পরিচালিত ‘ইশক নে ক্রেজ়ি কিয়া রে’ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন মধুরিমা। এই ছবিতে মধুরিমার সঙ্গে কাজ করেছিলেন মুগ্ধা গডসে। কিন্তু এই ছবিও বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ে।
তবে ইন্ডাস্ট্রিতে এসে সমস্যায় পড়েন মধুরিমা। এই কারণে নিজের নামও বদলে ফেলেছিলেন নায়িকা। মধুরিমা তুলি নামে তাঁর এক সমসাময়িক অভিনেত্রী নাম করছিলেন। একই নাম হওয়ার জন্য এই সমসাময়িক নায়িকার সঙ্গে যেন কোনও সমস্যায় জড়িয়ে পড়তে না হয়, সেই কারণে নিজের নাম বদলে ফেলেন তিনি।
মধুরিমার ডাকনাম ছিল নায়রা। তাই মধুরিমার বদলে নায়রা নামই সর্বত্র ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
২০১৬ সালে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নায়রা বলেছিলেন, ‘‘আমি চাই না কোনও পুরনো সংস্থার সঙ্গে মধুরিমা নামটি জড়িত থাকুক। বরং আমি চাই যে, সকলেই যেন আমায় নায়রা নাম ধরে ডাকার অভ্যাস তৈরি করেন।’’
নাম পরিবর্তন করার পর যেন ভাগ্য খুলে যায় নায়রার। জ্যাসমিন ডি’সুজ়া পরিচালিত ‘ওয়ান নাইট স্ট্যান্ড’ ছবিতে সানি লিওনির সঙ্গে অভিনয় করতে দেখা যায় নায়রাকে।
অভিনয়ের পাশাপাশি পরিচালনার প্রতিও আগ্রহ জেগে ওঠে নায়রার। ২০১৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত টোনি ডি’সুজ়া পরিচালিত ‘আজহার’ ছবিতে সহ-পরিচালক হিসাবে কাজ করেছিলেন তিনি। এই ছবিতে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন ইমরান হাশমি।
২০১৯ সাল থেকে ছোট পর্দায় একচেটিয়া কাজ শুরু করেন নায়রা। কখনও দ্বিতীয় মুখ্য চরিত্রে, কখনও বা নেতিবাচক চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। মিউজ়িক ভিডিয়োতেও নাচের দৃশ্যে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে নায়রাকে।
কানাঘুষো শোনা যায় যে, ছোট পর্দায় কাজ করার সময় নায়রার সঙ্গে আলাপ হয় টেলি অভিনেতা কর্ণ খন্নার। কর্ণের সঙ্গে বন্ধুত্ব প্রেমের সম্পর্কে পরিণত হতে বেশি সময় নেয় না। দু’জনে দীর্ঘ দিন সম্পর্কে ছিলেন বলে শোনা যায়। কিন্তু নিজেদের সম্পর্ক নিয়ে কখনও প্রকাশ্যে কিছু বলেননি তাঁরা। কী কারণে কর্ণের সঙ্গে নায়রার বিচ্ছেদ হয়, সেই বিষয়েও কিছু জানা যায়নি।
সম্প্রতি ‘পিশাচিনী’ নামের একটি হিন্দি ধারাবাহিকের কাজ শেষ করেছেন নায়রা। ধারাবাহিকের সমস্ত পর্ব ওটিটি প্ল্যাটফর্মেও রয়েছে।
অভিনয় ছাড়াও দু’টি সংস্থার মালিকানা রয়েছে নায়রার।বিভিন্ন মডেল, নেটপ্রভাবী এবং সংস্থার ব্যবসা কী ভাবে বৃদ্ধি করা যায় তা নিয়ে কাজ করেন তিনি। ইনস্টাগ্রামে নায়রার অনুরাগীর সংখ্যাও নজরকাড়া। এখনও পর্যন্ত ইনস্টাগ্রামে ৫৯ লক্ষ অনুরাগী রয়েছে তাঁর।
তবে, শাহরুখ-পুত্রের সঙ্গে নায়রার কী সম্পর্ক তা এখনও স্পষ্ট নয়। তাঁরা দু’জনে কোথায় একসঙ্গে পার্টি করেছিলেন, সে বিষয়েও জানা যায়নি। আরিয়ানের সঙ্গে ছবি এবং ভিডিয়ো পোস্ট করে তাঁকে শুভেচ্ছাবার্তাও জানান অভিনেত্রী। কী নিয়ে এই শুভেচ্ছাবার্তা তাও স্পষ্ট বলেননি নায়রা। বলিপাড়ার একাংশের অনুমান, আরিয়ানের নতুন বান্ধবী তিনি। তবে সত্যি আসলে কী, তা জানেন কেবল এক জনই।
সকল ছবি ইনস্টাগ্রাম।