আইএসআই, পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা। পড়শি দেশের সেনাবাহিনীর এই বিভাগে সবচেয়ে স্পর্শকাতর পদ হিসাবে বিবেচনা করা হয় ডিজির পদকে। সেই পদের দৌড়ে সামিল হয়েছিলেন সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল যাঁর সঙ্গে গভীর যোগ রয়েছে ভারতের।
তিনি ইসফানদিয়ার আলি পটৌদী । পাকিস্তানের মেজর জেনারেল ইসফানদিয়ার ২০১১ সালে ডেপুটি ডিরেক্টর হিসাব যোগদান করেন আইএসআইতে।
ইসফানদিয়ার সম্পর্কে প্রাক্তন ভারতের ক্রিকেট অধিনায়ক মনসুর আলি খান পটৌদীর তুতো ভাই এবং বলিউড তারকা সইফ আলি খানের কাকা। দেশভাগের পর পটৌদী বংশের এই শাখা পাকিস্তান চলে আসে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন ইসফানদিয়ার পূর্ববর্তী প্রজন্ম।
ইসফানদিয়ারের বাবা মহম্মদ আলি পটৌদী ছিলেন মনসুর আলি খানের বাবা ইফতিকার আলি খানের ছোট ভাই। মহম্মদ আলিরা পাকিস্তান চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও তাঁর দাদা ভারতকেই নিজের দেশ বলে বেছে নেন।
ছেলে মনসুরের মতো ইফতিকার আলি খান পটৌদীও ভারতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়কত্ব করেন। ইফতিকার ছিলেন একমাত্র ভারতীয় ক্রিকেটার, যিনি ভারত এবং ইংল্যান্ড, দুই দলের হয়েই টেস্ট ক্রিকেট খেলেছিলেন।
ইসফানদিয়ারের বাবাও পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর জেনারেল পদে কর্মরত ছিলেন। তাঁর ছেলে ইসফানদিয়ার পরে পাকিস্তানের বিশেষ সেনাবাহিনীর কম্যান্ডার হন।
পাকিস্তানের প্রধান গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের ডেপুটি ডিরেক্টর-জেনারেলও হয়েছিলেন ইসফানদিয়ার। শুধু তা-ই নয়, আইএসআইয়ের প্রধান হওয়ার দৌড়ে অনেক দূর পর্যন্ত এগিয়েছিলেন তিনি।
২০১২ সালে তৎকালীন ডিজি লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমদ সুজা পাশার স্থলাভিষিক্ত হতে পারেন ইসফানদিয়ার, এমন জল্পনা ছড়িয়েছিল পাক সংবাদমাধ্যমে।
২০০৮ সালের অক্টোবরে সুজা আইএসআইয়ের প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পান। জঙ্গিদের মদত দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তৎকালীন আইএসআই প্রধান আহমদ সুজা পাশার বিরুদ্ধেও। এ ছাড়াও তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে।
২০১১ সালে পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়ার অ্যাবটাবাদে জঙ্গিনেতা ওসামা বিন লাদেনকে খতম করে আমেরিকা।
লাদেনকে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। সব মিলিয়ে বিশ্বের দরবারে আরও এক বার মাথা হেঁট হয় পাকিস্তানের।
সেই সময় আইএসআইয়ের দ্বিতীয় শীর্ষ পদে ছিলেন ইসফানদিয়ার। পাশা বিতর্কের মুখে পড়ার কয়েক সপ্তাহ আগেই আইএসআই-এর ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেলের পদে বসেন তিনি।
আইএসআই প্রধানের পদের জন্য দৌড়ে ইসফানদিয়ার পাশাপাশি ছিলেন চিফ অফ জেনারেল স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াহিদ আরশাদ, করাচি কর্পস কম্যান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল জ়াহির উল ইসলাম এবং পেশোয়ার কর্পস কম্যান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল খালিদ রব্বানি।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত ইসফানদিয়ার ডিজি হওয়ার দৌড় থেকে ছিটকে যান। পাশা সরে যাওয়ার পরে ২০১২ সালে আইএসআই-এর ডিরেক্টর জেনারেল হন জাহির-উল-ইসলাম।
ভারতীয় পটৌদী পরিবারের সরাসরি আত্মীয় হওয়া ছাড়াও আরও একটি ভারতীয় যোগ ছিল ইসফানদিয়ারের। আমেরিকার ‘আর্মি ওয়ার কলেজ’-এ পড়াশোনা করার সময় তিনি ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রাক্তন ‘চিফ অফ আর্মি স্টাফ’ জেনারেল ভি কে সিংহের সহপাঠী ছিলেন।
১৯৯৮ সালের পরমাণু পরীক্ষা এবং ১৯৯৯ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর পাকিস্তান এবং আমেরিকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ঠিক করতে পাকিস্তানের তরফে কয়েক জন সেনা আধিকারিককে আমেরিকায় পাঠানো হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন ইসফানদিয়ার।
ভারতের পটৌদী পরিবারের মতো ক্রিকেটে তেমন আগ্রহ না দেখালেও পাক সেনাবাহিনীর এই উচ্চপদস্থ আধিকারিক এক জন দক্ষ পোলো খেলোয়াড় এবং পাকিস্তান পোলো অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান।
সব ছবি: সংগৃহীত।