আমেরিকার টেক্সাসের মাল্টন থেকে সৌদি আরবের শহর তাইফের দূরত্ব ১২ হাজার ৭০০ কিমি। এতটা পথ পেরিয়ে এসে গত সাত বছর পর বালির শহরেই তাঁর মাথায় উঠেছে বিজয়ীর শিরোপা। তিনি টেলর ডিজ়। পেশায় পুষ্টিবিদ হলেও নেশায় তিনি উটের জকি।
অদ্ভুত লাগলেও সত্যি। নিজের শহর ছেড়ে ভিন্দেশের মাটিতে পড়ে আছেন টেলর। শুধুমাত্র উটের পিঠে চড়ে দৌড়ের নেশায়।
ছোটবেলায় প্রায়শই ঘোড়ায় চড়ে বেড়াতেন তিনি। তাই উটের পিঠে চড়ে দ্রুত তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে বিশেষ বেগ পেতে হয়নি টেলরকে। একজন ‘রাইডার’ হিসাবে নিজেকে দ্রুত তৈরি করে ফেলেন তিনি।
২০২২ সাল থেকে এই যাত্রা শুরু হয় তাঁর। ২০১৭ সালে সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে বেড়াতে এসে দেশটিকে ভালবেসে ফেলেন ডিজ়। সেই থেকেই এখানেই বসবাস করছেন তিনি।
ঐতিহ্যগত ভাবে উটের দৌড় ছিল সৌদি আরবের পুরুষশাসিত খেলা। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে করুণ কাহিনিও। শিশুদের উটের পিঠে চাপিয়ে দৌড় করিয়ে পৈশাচিক আনন্দ পেতেন রাজারা। কালের নিয়মে সেই প্রথা বন্ধ হলে ঘোড়ার জকির কাজ করতেন পুরুষেরাই।
কঠিন পর্দাপ্রথা থাকলেও সৌদি আরবের ইতিহাসে ঘটে এক অবিশ্বাস্য ঘটনা, যা এর আগে ঘটেনি। মহিলাদের উটের প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার ছাড়পত্র দেওয়া হয়। ২০২০ সালে প্রথম বার উটের জকি হিসাবে অংশ নেন মহিলারা।
পুরুষ এবং মহিলা উভয়ের জন্য একটি প্রতিযোগিতা চালু করা হয়েছিল, যা মহিলা ‘রাইডার’দের রীতিমতো আন্দোলিত করেছিল।
উটের দৌড় এ দেশের অন্যতম জনপ্রিয় খেলা। এখানে প্রচুর অর্থ এবং নানা দামি পুরস্কার হিসাবে জিতে নেওয়া যায়।
মহিলারা এই দৌড়ে অংশ নেওয়ার পর থেকেই মহিলা জকি হিসাবে উত্থান হয় টেলরের। ২০২৩ সালে ‘ক্রাউন প্রিন্স ক্যামেল’ উৎসবের ষষ্ঠ পর্বের শেষে বিজয়ীর শিরোপা দেওয়া হয় টেলরকে। ৩.৫৭ সেকেন্ডে দৌড় শেষ করে তিনি ইরানি প্রতিযোগীকে হারিয়ে দেন।
জার্মান প্রবাসী লিন্ডা ক্রোকেনবার্গারের সহযোগিতায় গড়ে ওঠা ‘অ্যারাবিয়ান ডেজ়ার্ট ক্যামেল রাইডিং সেন্টার’-এ যোগ দিয়ে মহিলা জকি হওয়ার প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন তিনি।
ক্রোকেনবার্গারও ২০১৫ সালে সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে চলে এসেছিলেন। বহু বছর ধরেই তিনি উটের পিঠে চড়ার প্রশিক্ষণ নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু মহিলা হওয়ার কারণে প্রায়শই তাঁকে প্রত্যাখ্যান করা হত।
২০২১ সালে অ্যারাবিয়ান ডেজ়ার্ট ক্যামেল রাইডিং সেন্টার খোলার অনুমতি পাওয়ার পর টেলর তাঁর আগ্রহের অনুপ্রেরণা খুঁজে পান।
টেলর মনে করেন উটের জকি হওয়ার জন্য যেটা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তা হল অবলা প্রাণীগুলির প্রতি সচেতনতা ও নিজের শরীরের প্রতি যত্ন।
অনেক সময়, বিশেষ করে বিশাল পশুদের আশপাশে মহিলাদের কমজোরি হিসাবে গণ্য করা হয়। তা সত্ত্বেও মেয়েরা উটের পিঠে চড়ার জন্য সাহসী, শক্তিশালী ও আত্মবিশ্বাসী বলে জানিয়েছেন টেলর।
উটের শারীরিক সুস্থতা এবং গুণমানের উপর দৌড়ের ফলাফল অনেকটাই নির্ভর করে। দীর্ঘ দৌড়ে স্থিতিশীলতা তৈরির উপায় হিসাবে উট ও জকি উভয়কেই শারীরিক ভাবে যোগ্য থাকার অনুশীলনের মধ্যে দিয়ে অনেকটা সময় অতিবাহিত করতে হয় বলে জানান টেলর।
সব ছবি: সংগৃহীত।