৬৪-র ঝকঝকে যুবক। এখনও মার্জার সরণিতে যখন হাঁটেন, সুন্দরীরা বিহ্বল তাঁর ছটায়। ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’ থেকে ‘তেজাব’ হয়ে ‘স্লামডগ মিলিয়নেয়ার’ বা ‘২৪’ সিরিজ। শ্রীদেবী, মাধুরী দীক্ষিত হয়ে হলিউডের নীলনয়না সুন্দরী... বহু নায়িকার নায়ক অনিল কপূর। কখনও তিনি ফিরে দেখেছেন কারওর দিকে? বলিউড বলছে, বিয়ের আগে নাকি ২৫ জনের সঙ্গে প্রেম ভেঙেছে পর্দার ‘লক্ষ্মণ’-এর!
মাটির কাছাকাছি থেকে উঠেছেন অনিল কপূর। মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। বড় হয়েছেন চেম্বুরে, মুম্বইয়ের কাছাকাছি একটি ছোট্ট জায়গায়। বহু পরিশ্রমের পরে তিনি বড় পর্দার ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’।
পর্দায় পরিচিতি পাওয়ার আগে কপর্দকশূন্য ছিলেন অনিল। মুম্বইতে টিকে থাকার জন্য তাঁকে নানা ধরনের কাজ করতে হয়েছিল। সেই কাজগুলো ছিল অদ্ভুত। মিঠুন চক্রবর্তীকে রোজ ঘুম থেকে ওঠানোর দায়িত্ব ছিল তাঁর! এই কাজের বিনিময়ে তিনি পারিশ্রমিকও পেতেন।
একটা সময় উঠতে বসতে তাঁর মুখে শোনা যেত ‘ঝক্কাস’ শব্দটি। তাঁর নাচের ছন্দও পরিচিত ছিল ‘ঝক্কাস’ নামে। অনিল কোনও দিন ভাবেননি, তাঁর তৈরি করা সেই বিশেষ ভঙ্গি অনুরাগীদের এত পছন্দ হবে। একটা সময় তিনি যেখানেই যেতেন, দেখতেন তাঁকে ঘিরে সবাই ওই ভঙ্গিতেই নাচছেন! তাঁর নামের সঙ্গে এই শব্দটি তকমা হিসেবে ব্যবহৃত হত।
৬৪-তেও অনিল কপূর ঝকঝকে। কী করে? তিনি কি খুবই ত্বকের যত্ন নেন? সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে অভিনেতা জানিয়েছেন, তাঁর বাবার ত্বক ভীষণ উজ্জ্বল ছিল। সম্ভবত উত্তরাধিকার সূত্রে এই ত্বক পেয়েছেন তিনি। পাশাপাশি, নিয়মিত যোগ, শরীরচর্চা, ত্বকের অল্পবিস্তর যত্নআত্তি এবং পরিমিত ঘুম তাঁকে এত সতেজ রেখেছ।
প্রেমও কি তাঁর সতেজ, সজীব থাকার অন্যতম কারণ? বলিউড বলছে, সুনীতাকে বিয়ের আগে তিনি নাকি ফিল্মি দুনিয়ার জনা ২৫ যুবতীর প্রেমে পড়েছিলেন! প্রত্যেক বার একটি করে প্রেম ভাঙত। অনিল হা-হুতাশ করতেন তাঁর বান্ধবী সুনীতার কাছে। নিজেকে নাকি ভীষণ অপদার্থও মনে করতেন। প্রথম বড় বাজেটের ছবি সই পরে নাকি সাহসে ভর করে সুনীতাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। অনিল ভাগ্যবান, সুনীতা অন্তত তাঁকে ফিরিয়ে দেননি।
শ্রীদেবীর বহু ছবির নায়ক অনিল। তাঁর সঙ্গেও কি প্রেম ছিল? বলিউড বলছে, এক নায়িকাকে কেন্দ্র করে নাকি বনি-অনিল কপূরের মধ্যে হাতাহাতি বেঁধেছিল। নেপথ্য কারণ ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’ ছবি। শ্রীদেবী তখন সদ্য মিঠুন চক্রবর্তীর মোহমুক্ত। কাজে মন নেই। ঠিক সেই সময় বনি কপূর তাঁকে ছবির অফার দেন। মুখের উপরে না বলতে পারেননি শ্রী। বদলে ১০ লক্ষ টাকা পারিশ্রমিক চেয়ে বসেন। সঙ্গে সঙ্গে ১১ লক্ষ টাকা দিয়ে দেন বনি। অনিলও ছবির সহ-প্রযোজক। তিনি এ সব দেখে রাগে ফুঁসতে থাকেন।
এর পরেই নায়িকার মা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। বিদেশে চিকিৎসার প্রয়োজন হয়ে পড়ে। শ্রী-এর মায়ের চিকিৎসার যাবতীয় ব্যয়ভার সেই সময় বহন করেছিলেন বনি। বিদেশ যাওয়ার বিমানের টিকিট কেটে দিয়েছিলেন। তাঁর সঙ্গেও গিয়েছিলেন। এত কিছু মেনে নিতে পারেননি অনিল। শেষে সেটেই এক দিন ক্ষোভে ফেটে পড়েন। হাতাহাতি শুরু হয় দুই ভাইয়ের মধ্যে। রাগের চোটে নাকি সেট ছেড়ে বেরিয়েও যান তিনি। পরিচালক শেখর কপূর শেষে অনেক বুঝিয়ে ফিরিয়ে আনেন। এই ছবিই পরে লভ্যাংশেররও পাঁচ গুণ টাকা কপূর পরিবারের হাতে তুলে দিয়েছিল।
অভিনয় ছাড়াও গান গাইতে পারেন অনিল। ‘উও ৭ দিন’, ‘হামারে দিল আপকে পাস হ্যায়’ ছবিতে তাঁর গাওয়া গান যথেষ্ট জনপ্রিয় হয়েছিল।
১২৫টিরও বেশি ছবিতে অভিনয় করেছেন। পেয়েছেন অনেক সম্মান, পুরস্কার। ‘তেজাব’ তাঁকে প্রথম ‘সেরা নায়ক’-এর সম্মান এনে দিয়েছিল। জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন ‘পুকার’ ছবিতে অভিনয় করে। দুটো ছবিতেই তাঁর নায়িকা মাধুরী দীক্ষিত।