বেড়ানোর পরিকল্পনা মানেই মনের মধ্যে শুরু স্বপ্নের বীজ বোনা। দিন গুনতে থাকে মন, কবে আসবে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ! সেই উত্তেজনার মধ্যেই শুরু হয় পরিকল্পনা।
যখনই কোথাও বেড়াতে যাওয়ার কথা ওঠে তখন সবার আগে ভাবতে হয়, কিসে যাওয়া হবে। হাতে কম সময় থাকলে বিমান সফরকেই বেছে নেন ভ্রমণবিলাসীরা। অনেকে আবার ট্রেনের দীর্ঘ অথচ মজার সফরকে বেছে নেন।
তবে সম্প্রতি আরামের সফর ছেড়ে কষ্টের মধ্যে দিয়ে ভ্রমণ করার প্রবণতা বাড়ছে তরুণদের মধ্যে। বিশেষ করে চিনের তরুণ-তরুণীদের মধ্যে এর ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা লক্ষ করা গিয়েছে। যেখানে তাঁরা বিমান ও ট্রেনের বদলে তুলনামূলক দীর্ঘ ও বেশি কষ্টদায়ক যানবাহন বেছে নিচ্ছেন।
এই ধরনের বেড়ানোকে ‘আয়রন বাট’ নামের শব্দবন্ধ দিয়ে ডাকা হচ্ছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে।
এতে অংশগ্রহণকারী তরুণেরা প্রায়শই সুবিধাজনক ভ্রমণের রাস্তার বদলে দীর্ঘ ও বেশি কঠিন পথ বেছে নিতে ইচ্ছুক। এঁদের মধ্যে বেশির ভাগই বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য গণ্ডি পেরোনো ছাত্রছাত্রী।
মূলত কম খরচে বেড়ানো ও অর্থ সাশ্রয়ের জন্য দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক কষ্টকেও হাসিমুখে মেনে নিচ্ছেন এঁরা।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়েছে, চিনের বিপুল সংখ্যক তরুণ বেকার। মাথাপিছু কম আয়ের কারণে বিলাসবহুল ভ্রমণের থেকে মুখ ফিরিয়ে দীর্ঘ সফরের দিকে ঝুঁকছেন তাঁরা। ব্যয়সাধ্য বিমান ছেড়ে তারা বাস ও ট্রেনের মতো পরিবহণ বেছে নিতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন।
চিনের সমাজমাধ্যমে এই ‘আয়রন বাট’ বেশ জনপ্রিয়। ইতিমধ্যেই এই বিষয়টিতে প্রায় ২ কোটি সমাজমাধ্যম ব্যবহারকারী উৎসাহ দেখিয়েছেন।
এই বছরের গোড়ার দিকে চিনের এক ২৩ বছর বয়সি তরুণ নিজের ভ্রমণের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিয়েছেন সংবাদমাধ্যমে। চিনের উত্তর-পশ্চিমের জিনজিয়াং থেকে কাজাখস্তানের রাজধানী আস্থানায় যেতে তাঁর তিন দিন সময় লেগেছিল।
যে পথটি তিনি অনায়াসে ছ’ঘণ্টায় পেরোতে পারতেন যদি তিনি বিমান সফরকে বেছে নিতেন। এত দীর্ঘ পথে যাত্রা থেকে তাঁরা যে অভিজ্ঞতা অর্জন করছেন তা এই সব তরুণ প্রজন্মের কাছে বেশি আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে বলে মনে করছেন বহু পর্যটক।
এ ছাড়াও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে ক্রমবর্ধমান বেকারত্বও একটি বড় কারণ। যাত্রাপথ যতই কঠিন হোক না কেন, এই সব তরুণের আয় সীমিত হওয়ার কারণে ভ্রমণের সস্তা বিকল্পগুলিকেই তাঁরা বেছে নিচ্ছেন।
দীর্ঘ সময় বাসে বা ট্রেনে চড়ার ফলে পিঠে ও কোমরে অসহ্য যন্ত্রণা সহ্য করতে হচ্ছে তাঁদের।
সারা বিশ্বের ভ্রমণার্থীদের কাছে এক রাত বাসে ভ্রমণ করা বড় ব্যাপার নয়। কিন্তু এই চিনা তরুণ-তরুণীরা চ্যালেঞ্জটিকে অন্য স্তরে নিয়ে যাচ্ছেন। ৪৬ ঘণ্টা একটানা বাসে ভ্রমণ করার অভি়জ্ঞতা অর্জন করছেন অনেকেই। পিঠ সোজা করে বসে ভ্রমণের বেশির ভাগ সময়টাই কাটাতে হয়েছে ‘আয়রন বাট ট্র্যাভেলর’দের।
লিন নামের এক যুবক জানিয়েছেন, ‘‘পিঠে ব্যথার কারণে সারা রাত চোখের পাতা এক করতে পারিনি। পরের দিন সকালে প্রায় অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়। ভ্রমণের শেষের দিকে সর্দিকাশির সমস্যাও বেড়ে যায়।’’
এই কষ্টের পরিবর্তে তাঁরা যে পথের অমূল্য অভিজ্ঞতায় নিজের ঝুলি পূর্ণ করে নিয়েছেন যা হয়তো বিমান সফরে সম্ভব নয়। তাই তাঁদের মতো বহু ভ্রমণার্থীর নীতিবাক্য একটাই, ‘যাঁদের ‘আয়রন বাট’ আছে তাঁরাই একমাত্র বিশ্বকে উপভোগ করতে জানেন।’
সব ছবি: সংগৃহীত।