ভারতীয় বংশোদ্ভূত টিকটিক তারকা মেঘা ঠাকুরের আচমকা মৃত্যু। কানাডায় গত সপ্তাহে তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে খবর।
সমাজমাধ্যমে নানা রকম ছবি এবং ভিডিয়ো পোস্ট করতেন মেঘা। টুইটারে তাঁর ৯৩ হাজারের বেশি ফলোয়ার। ইনস্টাগ্রামে ফলোয়ার সংখ্যা ১ লক্ষের বেশি। আর টিকটকে মেঘার ফলোয়ার সংখ্যা প্রায় ৯ লক্ষ ৩০ হাজার।
সমাজমাধ্যমে প্রভাবক (ইনফ্লুয়েন্সার) হিসাবে বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন মেঘা। টিকটিকেও তাঁর জনপ্রিয়তা কম নয়। লক্ষ লক্ষ মানুষ মেঘার ভিডিয়ো দেখার জন্য অপেক্ষায় থাকতেন।
সমাজমাধ্যমে জীবনের কথা বলতেন মেঘা। মাত্র ২১ বছর বয়সেই জিতে নিয়েছিলেন অজস্র হৃদয়। তাঁর ভিডিয়োতে বলা কথাগুলি শুনে জীবনে বেঁচে থাকার প্রেরণা পেয়েছেন অনেকে।
২০০১ সালে ইনদওরে জন্ম মেঘার। তাঁর যখন ১ বছর বয়স, তখন মেঘাকে নিয়ে তাঁর বাবা-মা চলে আসেন কানাডায়। তার পর থেকে সেখানেই থাকতেন তিনি। কানাডার জল-হাওয়ায় বেড়ে উঠেছেন ভারতীয় কন্যা।
২০১৯ সালে কানাডার মেফিল্ড সেকেন্ডারি স্কুল থেকে স্নাতক পাশ করেন মেঘা। উচ্চশিক্ষার জন্য ভর্তি হন কানাডার ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটিতে। তার পরেই টিকটকে ভিডিয়ো বানাতে শুরু করেছিলেন।
প্রথম ভিডিয়োতেই কার্যত বাজিমাত করে ফেলেছিলেন তরুণী। মেঘার তৈরি প্রথম ভিডিয়োটিতে হাজার তিনেক লাইক পড়েছিল। ভিডিয়োটি দেখেছিলেন ৬০ হাজারের বেশি মানুষ।
তার পর থেকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। একের পর এক ভিডিয়ো বানিয়ে গিয়েছেন মেঘা। জনপ্রিয়তার শীর্ষে উঠেছেন নিজগুণে। কোনও কোনও ভিডিয়োতে নিজেই নাচতেন মেঘা। তাঁর নাচ দেখে অনুপ্রাণিত হতেন বাকিরা।
মেঘার ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে তাঁর বাবা-মায়ের তরফে সম্প্রতি একটি বিবৃতি দেওয়া হয়। তাতেই জানানো হয় মেঘার মৃত্যুর খবর। যাতে কার্যত স্তম্ভিত তাঁর অজস্র অনুরাগী।
ইনস্টাগ্রামে মেঘার বাবা-মা যৌথ বিবৃতি দিয়ে লেখেন, ‘‘ভারাক্রান্ত হৃদয়ে জানাচ্ছি, আমাদের জীবনের আলো, আমাদের ফুটফুটে মেয়ে মেঘা ঠাকুর গত ২৪ নভেম্বর সকালে আচমকা এবং অপ্রত্যাশিত ভাবে পরলোকে পাড়ি দিয়েছে।’’
ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘‘মেঘা আত্মবিশ্বাসী, স্বাধীনচেতা মেয়ে ছিল। ওর কথা আমরা কখনও ভুলতে পারব না। ওর ভক্তদের ও খুব ভালবাসত। ওর মৃত্যুসংবাদ সকলে জানিয়ে মেঘার জন্য আশীর্বাদ প্রার্থনা করছি। মেঘা যেখানেই থাক, আপনাদের শুভকামনা ওর সঙ্গে থাকবে।’’
একই পোস্টের সঙ্গে মেঘার পারলৌকিক ক্রিয়াকর্মের দিনক্ষণও জানিয়েছেন মেঘার বাবা-মা। ২৯ নভেম্বর সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত মেঘার পারলৌকিক ক্রিয়াকর্ম চলবে বলে জানানো হয়।
ঠিক কী ভাবে, কী কারণে মেঘার মৃত্যু হয়েছে, বিবৃতিতে তা জানাননি তাঁর বাবা-মা। তাঁরা এই মৃত্যুকে ব্যাখ্যা করেছেন কেবলমাত্র দু’টি শব্দবন্ধে— ‘আচমকা’ এবং ‘অপ্রত্যাশিত’। যা আরও বেশি চমকে দিয়েছে মেঘার অনুরাগীদের।
শারীরিক অসুস্থতার কারণেই মেঘার মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে বলে মনে করছেন কেউ কেউ। কারণ, মৃত্যুর মাস চারেক আগে মেঘার একটি ভিডিয়োতে তাঁর অসুস্থতার ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল।
৪ মাস আগের একটি ভিডিয়োতে মেঘা জানিয়েছিলেন, উদ্বেগের কারণে তিনি হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে উঠেছেন।
সকলের মুখে হাসি ফুটিয়েছেন যিনি, তাঁর মনেও উদ্বেগ! মেঘার কথা শুনে চিন্তায় পড়েছিলেন অনুরাগীরা। তার পর ৪ মাসের মাথায় এই মৃত্যুসংবাদ। অনেকেই যেন তা বিশ্বাস করতে পারছেন না।
মৃত্যুসংবাদের পোস্টটির নীচে মেঘার অনুরাগীদের কেউ কেউ লিখেছেন, ‘‘আমার জীবনে যখন কঠিন সময় এসেছিল, ওর পোস্টগুলিই আমাকে আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছে। আমার জীবনে আলো এনে দিয়েছে মেঘা। অন্তর এবং বাহির— দু’দিক থেকেই মেঘা খুব সুন্দর। ওর আত্মার শান্তি কামনা করি।’’
আরও এক অনুরাগী লিখেছেন, ‘‘তোমার অ্যাকাউন্টটা যে আমি খুঁজে পেয়েছিলাম, তার জন্য চিরকৃতজ্ঞ থাকব। তুমিই এক মাত্র, যে আমার আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করেছে।’’
মেঘার আর এক অনুরাগী লিখেছেন, ‘‘প্রিয় মেঘা, তোমার মৃত্যুসংবাদ অত্যন্ত বেদনাদায়ক। আমি বিধ্বস্ত। তোমার পরিবারকে আমার ভালবাসা পাঠালাম। তোমার মতো এক জন অসাধারণ মেয়েকে হারিয়ে আমি শোকস্তব্ধ।’’
স্বল্প জীবৎকালে অনেক মন জিতে নিয়েছিলেন মেঘা। জীবনের প্রতি ভরসা হারিয়ে ফেলা মানুষদের জ্ঞাতে বা অজ্ঞাতে আবার মূল স্রোতে ফিরিয়ে এনেছেন তিনি। আত্মবিশ্বাস ফেরি করে প্রমাণ করে দিয়েছেন রাজেশ খান্নার সেই অমোঘ সংলাপ— ‘‘বাবুমশাই, জিন্দেগি বড়ি হোনি চাহিয়ে, লম্বি নেহি।’’ সব ছবি ইনস্টাগ্রাম থেকে নেওয়া।