পেশাগত জীবনের প্রথম গান, প্রথম সৃষ্টি। তাতেই ৩০ কোটি শ্রোতার মন কেড়ে নিয়েছিলেন সঙ্গীতশিল্পী। কিন্তু এই সঙ্গীতজগৎকেই পেশা হিসাবে নিয়ে এগিয়ে যেতে ভয় পেয়েছিলেন অনিরুদ্ধ রবিচন্দ্র। সঙ্গীতশিল্পী হিসাবে কেরিয়ারের মুকুটে নয়া পালক যোগ হল অনিরুদ্ধের। দক্ষিণী ফিল্মজগতের পাশাপাশি এ বার বলিউডেও আত্মপ্রকাশ করলেন তিনি। তাও আবার শাহরুখ খানের হাত ধরে।
সপ্তাহান্তের ছুটি কাটানোর পর সোমবার পড়লেই যেন মন খারাপ ঘিরে ধরে। ‘মানডে ব্লুজ’-এ ভুগতে শুরু করেন কমবেশি অনেকেই। কিন্তু শাহরুখ যদি তাঁর অনুরাগীদের, সিনেপ্রেমীদের উপহার দেওয়ার জন্য এই দিনটিই বেছে নেন, তবে সোমবারে নীল রং ধরে কি?
গত ১০ জুলাই মুক্তি পেয়েছে শাহরুখের আসন্ন ছবি ‘জওয়ান’-এর প্রিভিউ। চলতি বছরেই শাহরুখের ‘পাঠান’ ছবিটি নিয়ে দর্শক মেতেছিলেন। এখন যেন তাঁদের কৌতূহলের মাত্রা আকাশছোঁয়া। কারণ ‘বাদশা’র পরবর্তী ছবি মুক্তি পাচ্ছে।
জুলাই মাসের শেষ দিন, সোমবার ‘জওয়ান’ ছবির প্রথম গান ‘জ়িন্দা বান্দা’ মুক্তি পেয়েছে। যে গানটি নিয়ে এত আলোচনা, অবশেষে তা মুক্তি পেল। শাহরুখকে কোন রূপে দেখা যাবে তা নিয়ে যথেষ্ট কৌতূহলী ছিলেন দর্শক। গানের শুরুতেই চমক দিলেন শাহরুখ।
শাহরুখের সংলাপ দিয়েই শুরু হয়েছে ‘জ়িন্দা বান্দা’ গানটি। চোখে কালো চশমা, পরনে লাল শার্ট এবং কালো ট্রাউজ়ার। প্রমীলা বাহিনীর মাঝে ধীর পায়ে, নিজের ছন্দে হেঁটে আসছেন শাহরুখ। প্রায় ১০০০ জন নৃত্যশিল্পীর ইউনিট নিয়ে পাঁচ দিন ধরে হায়দরাবাদ, বেঙ্গালুরু, মাদুরাই এবং মুম্বইয়ে শুটিং হয়েছিল এই গানটির। শুধুমাত্র গানটির শুটিং করতেই খরচ হয়েছিল ১৫ কোটি টাকা।
গানের দৃশ্যে ভেসে আসছে দক্ষিণী ছবির স্পষ্ট আভাস। কোথাও যেন ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’ ছবির ‘লুঙ্গি ডান্স’ গানের কথাও মনে করিয়ে দিতে পারে ‘জ়িন্দা বান্দা’। কিন্তু এই ‘জ়িন্দা বান্দা’র নেপথ্যে কে রয়েছেন?
শাহরুখের হাত ধরে হিন্দি ফিল্মজগতে পা রাখলেন অনিরুদ্ধ। শুধু হিন্দি ভাষাতেই নয়, তামিল এবং তেলুগু ভাষাতেও ‘জ়িন্দা বান্দা’ গানটি গেয়েছেন তিনি।
ছোটবেলা থেকেই দক্ষিণী ফিল্মজগতের সঙ্গে পরোক্ষ ভাবে যুক্ত রয়েছেন অনিরুদ্ধ। তাঁর বাবা রবি রাঘবেন্দ্র তামিল ইন্ডাস্ট্রির অভিনেতা। অনিরুদ্ধের মা লক্ষ্মী রবিচন্দ্র শাস্ত্রীয় নৃত্যের সঙ্গে যুক্ত।
দক্ষিণী ফিল্মজগতের জনপ্রিয় তারকা রজনীকান্তের সঙ্গেও আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে অনিরুদ্ধের। রজনীকান্তের স্ত্রী লতা রজনীকান্তের ভাই রবি রাঘবেন্দ্র। সেই সূত্রে রজনীকান্তের শ্যালকপুত্র হন অনিরুদ্ধ।
১৯৩০ সালে দক্ষিণী ফিল্মজগতের অন্যতম ছবি নির্মাতা ছিলেন কৃষ্ণস্বামী সুব্রহ্মণ্যম। অনিরুদ্ধ তাঁর প্রপৌত্র। ১৯৯০ সালের ১৬ অক্টোবর তামিলনাড়ুর চেন্নাইয়ে জন্ম অনিরুদ্ধের।
ছোটবেলা থেকেই গানবাজনার প্রতি আগ্রহ ছিল অনিরুদ্ধের। বন্ধুদের নিয়ে একটি ছোটখাট ব্যান্ডও তৈরি করেছিলেন তিনি।
স্কুলে পড়াকালীন অনিরুদ্ধের ব্যান্ড এক সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। সেই প্রতিযোগিতার বিচারকের আসনে ছিলেন সঙ্গীত পরিচালক এ আর রহমান। প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়ে ফেরে অনিরুদ্ধের ব্যান্ড।
সঙ্গীতকে পেশা হিসাবে নিলে যদি ব্যর্থ হন, সেই ভয় থেকে চাকরির জন্যও চেষ্টা করছিলেন অনিরুদ্ধ। কলেজের পড়াশোনা শেষ হলে লন্ডনে গিয়ে পিয়ানো বাজানোর প্রশিক্ষণও নেন তিনি।
২০১২ সালে প্রথম গান তৈরি করেন অনিরুদ্ধ। দক্ষিণী তারকা ধনুশের সঙ্গে ‘হোয়াই দিস কোলাবেরি ডি’ গানটির নেপথ্যে ছিলেন অনিরুদ্ধও। মুহূর্তের মধ্যেই গানটি জনপ্রিয় হয়ে যায়। দক্ষিণী ফিল্মজগতেও নিজের পরিচিতি তৈরি করে নেন অনিরুদ্ধ।
দক্ষিণী অভিনেতা রজনীকান্ত, ধনুশ, বিজয়, কমল হাসন। বিজয় সেতুপতির মতো বহু তারকার কণ্ঠে গান গেয়েছেন অনিরুদ্ধ। অধিকাংশ সময় সঙ্গীত পরিচালনার দায়িত্বেও ছিলেন তিনি।
তামিল এবং তেলুগু ছবিতে কাজ করে নিজের জায়গা তৈরি করে নিলেও হিন্দি ফিল্মজগৎ থেকে দূরেই ছিলেন অনিরুদ্ধ। বলিপাড়ায় কানাঘুষো শোনা যায়, ‘জওয়ান’ ছবির পরিচালক অ্যাটলি তাঁর ছবিতে সঙ্গীত পরিচালনার জন্য প্রথমে এআর রহমানকে প্রস্তাব দেন। রহমান সেই প্রস্তাব খারিজ করলে অনিরুদ্ধের কাছে যান অ্যাটলি। পরিচালকের প্রস্তাবে রাজিও হয়ে যান অনিরুদ্ধ।
দেশ বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তে অনুষ্ঠান করেন অনিরুদ্ধ। সমাজমাধ্যমে নিজস্ব অনুরাগী মহলও রয়েছে তাঁর। ইতিমধ্যেই ইনস্টাগ্রামে অনিরুদ্ধের অনুরাগীর সংখ্যা ৭০ লক্ষের গণ্ডি পার করেছে।
সব ছবি: সংগৃহীত।